• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজন আমূল পরিবর্তন

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজন আমূল পরিবর্তন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ মে ২০২১

দেশের স্বাস্থ্য খাতের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বহু পুরনো হলেও করোনা মহামারীর সেটা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। করোনা সংক্রমণে গোটা দেশ যখন বিপর্যস্ত, তখন মাস্ক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালকের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন, নিয়োগে দুর্নীতিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেশকিছু খবর সবার নজর কাড়ে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে পুরো ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন মনে করছেন চিকিৎসক নেতারা।

তাদের মতে, যিনি প্রশাসন চালাবেন তার স্বাস্থ্য বিভাগ বোঝার দক্ষতা ও ব্যবস্থা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। যারা এখানে আসবেন, তাদের স্বাস্থ্য প্রশাসক হতে হবে। দীর্ঘ সময় তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের অধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সব পদে চিকিৎসকদের নিয়োগের পক্ষে তারা। এমনকি স্বাস্থ্যখাতের যে কোনো প্রকল্প ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এবং স্বাস্থ্যগত দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও মত তাদের।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন, সেটা যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই সেই জায়গাগুলোতে সৎ ও মেধাবী লোকের প্রয়োজন।  আমরা অনেক আগে থেকে পৃথক পেশাজীবী মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়েছি। চিকিৎসকদের মন্ত্রণালয় যদি চিকিৎসকরাই পরিচালনা করেন, তাহলে তারা বিষয়গুলো ভালো বুঝবেন। কোথায় কী তুলে ধরতে হবে, কী প্রয়োজন, কোনটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সঠিকভাবে কী পদক্ষেপ নিলে তা বেশি কার্যকর হবে-এ বিষয়গুলো এ পেশার লোক ভালো বুঝবেন। পেশার বাইরের লোক সেটা বুঝবেন না।

সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন দরকার। স্বাস্থ্য প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম-সবক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরি। বিশেষ করে স্বাস্থ্য প্রশাসনটা ঢেলে সাজানো দরকার। স্বাস্থ্য প্রশাসন কেমন হবে সেটা বঙ্গবন্ধুই দেখিয়ে গেছেন। তিনি তার সাড়ে তিন বছরের সময় স্বাস্থ্য সচিব করেছিলেন একজন চিকিৎসককে। এ কারণে আজ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে অবকাঠামো ও ভিত্তি, সেটা তৈরি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রশাসনের সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে সেই উন্নয়নে পূর্ণতা আসেনি। পূর্ণতা পেত যদি সেখানে কোনো চিকিৎসক নেতৃত্ব দিতেন। 

ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিসের (এফডিএসআর) উপদেষ্টা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে দুর্নীতিবাজদের সাজা দেওয়া দরকার। শুদ্ধি অভিযান নয়, শুদ্ধি অভিযান মানে আপনি আগে দুর্নীতি করেছেন, এখন ভালো/শুদ্ধ হয়ে যান। এখানে যারা দুর্নীতি করেন তাদের ভালো হওয়ার সুযোগ দেওয়ার কিছু নেই। তারা যে অন্যায়গুলো করেছেন, সেগুলোর সাজা হওয়া উচিত।

আক্ষেপ করে বলেন, গত ১০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির দায়ে কয়জন লোকের সাজা হয়েছে? আবজাল আর মিটুদের কিছুই হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ড্রাইভার ১০০ কোটি টাকার মালিক। একটা মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভার (গাড়িচালক) যদি এতো টাকা আয় করেন, তাহলে সচিব-উপসচিবসহ অন্যরা কী পরিমাণ টাকা আয় করেন, চিন্তা করা যায়! এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে অভিযান চালাতে হবে, দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ওনারা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা) ফাইলের একটা নথির ছবি তোলায় এত উত্তেজিত হয়ে যান, আর ওনাদের থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হয়, সেটা নিয়ে ওনারা কিছুই করতে পারেন না।

যোগ্য প্রশাসকের অধীনে মন্ত্রণালয়টা যেতে হবে। যিনি প্রশাসন চালাবেন, তার স্বাস্থ্য বিভাগ বোঝার দক্ষতা থাকতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞানও থাকতে হবে। অন্যথায় সম্ভব নয়। তাদের দীর্ঘ সময় স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে। আমলারা কি পুলিশকে চালাতে পারবেন? কিন্তু তারা চিকিৎসকদের চালাচ্ছেন। পুলিশ আর চিকিৎসক হলো ২৪ ঘণ্টার একটা পেশা। এখানে মানুষের জীবন-মৃত্যু সম্পৃক্ত। দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার বিষয় এটি। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যারা পরিচালনা করেন তাদের সেই প্রশিক্ষণ নেই, অভিজ্ঞতাও নেই।

স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কারই এখন বড় প্রয়োজন। পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে-যেখানে থাকবে আলাদা স্বাস্থ্য প্রশাসন। স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রশাসন সাধারণ প্রশাসনের মতো নয়। এটি অনেকটা সেনাবাহিনীর মতো। তাদের যেমন আলাদা নিয়মকানুন আছে, স্বাস্থ্যেরও আলাদা নিয়মকানুন আছে। সাধারণ চাকরির মতো স্বাস্থ্যব্যবস্থা নয়। চিকিৎসকের ফাইল আর সচিবালয়ের ফাইল এক নয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads