• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
চেয়ার বসানো হয়েছে বাথরুমে : নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র, সরাঞ্জাম

কাজে না লাগায় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বাথরুমেও বসানো হয়েছে চেয়ার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ

চেয়ার বসানো হয়েছে বাথরুমে : নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র, সরাঞ্জাম

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০২১

“কথায় আছে সরকারিকা মাল দরিয়ামে ঢাল’’ সে কথায় বস্তবে দেখা গেলো কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে গিয়ে। প্রয়োজন না থাকা সত্বেও বিপুল পরিমান ফার্নিচার ক্রয় এবং তা বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েক গুন বেশি দেখিয়ে ক্রয় করে তা এখনো কোন কাজে ব্যবহার করতে পারছেনা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বরং নষ্ট হচ্ছে বেশির ভাগ আসবাবপত্র। আর কাজে লাগাতে না পেরে বাথরুমেও বসানো হয়েছে চেয়ার।

সরেজমিনে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ফ্লোরে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ রুম তালা দেওয়া। পুরু ভবনে মাত্র ২/৩টি রুমে শিক্ষক কর্মচারীদের স্বাক্ষাত পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ ক্লাস রুম, পরীক্ষাগার, লাইব্রেরী রুমসহ দাপ্তরিক সমস্ত রুম ছিল তালা দেওয়া। তবে বেশির ভাগ রুমের সামনে এবং বড় হল রুমে এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে চেয়ার, টেবিল, সোফাসহ প্রয়োজনীয় ফার্নিচার। এছাড়া বেশ কয়েকটি রুমে দীর্ঘদিন ব্যবহার ছাড়াই পড়ে আছে বেশ কিছু সরাঞ্জাম। তবে অবাক করার বিষয় হলো বাথরুমে বসানো হয়েছে চেয়ার। তাও ভুল করে একটি বাথরুমে নয় দুটি বাথরুমের বসানো দেখা গেছে চেয়ার। এছাড়া উপরের তলায় ব্যবহার না করেই নষ্ট হচ্ছে বেশির ভাগ ফার্নিচার।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, এগুলো ২০১৭-২০১৮ সালে কিনা ফার্নিচার। যা এখনো পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। যে গুলো নিয়ে পরে দ‍ুর্নীতি দমন কমিশন ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার অনিয়মের জন্য দুর্নীতির মামলা করেছিল। তিনি বলেন, এখানে এক সময় কয়েক শত কোটি টাকার অনিয়ম দ‍ুর্নীতি হয়েছে যা এখনো চলছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে যা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। তবে সেই দুর্নীতি মামলা এখনো পর্যন্ত তদন্তাধীন আছে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের এক অধ্যাপক জানান, এখন করোনকালীন সময় তাই বেশির ভাগ ক্লাস হয় অনলাইনে আর পরীক্ষাও হয় কিছু নিয়মমত। তাই অনেকে এখন কলেজে আসেনা।

আর অনিয়ম দ‍ুর্নীতির বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাজারে একটি চেয়ার যদি ৩ হাজার টাকা হয় সেটা কিভাবে মেডিকেল কলেজের জন্য ১৩ হাজার টাকা হয়। আর আমার যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে আমার কি দরকার ছিল তিন গুন বেশি অতিরিক্ত মালামাল কিনার? এখানে একটি পক্ষের লাভ ছিল বলেই এসব কাজ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো নাম বলবো না এখনো মেডিকেল কলেজে সেই সিন্ডিকেটের প্রভাব আছে তাদের লোকও আছে। এছাড়া এখনো ভাল করে খোঁজ নিলে আরো অনিয়ম দ‍ুর্নীতির খবর পাওয়া যাবে।

এ ব্যপারে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ডাঃ অনুপম বড়ুয়া বলেন, আমি যোগদান করার পর থেকে সচ্চতার সাথে সব কিছু পরিচালনা করা হচ্ছে তাছাড়া গত প্রায় ২ বছর ধরে করোনা পরীক্ষা বা এসব নিয়েই আছি। যতটুকু পারি কক্সবাজারের মানুষকে সেবা দিচ্ছি। আর পূর্বের দ‍ুর্নীতি মামলা বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করার কিছুই নেই সেটা দুদক তদন্ত করছে উনারা দেখবে সেখানে যা হয় তা হবে।

উল্লেখ্য দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দ‍ুর্নীতির বরপুত্র আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের মালিকানাধীন রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করে প্রায় ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। ভাউচারে সরবরাহকৃত প্রতিটি পণ্যের মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক হারে বেশি দেখানো হয়েছে। পরে তা দীর্ঘ তদন্ত করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে আবজাল সহ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. রেজাউল করিম, অধ্যাপক ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা, অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশিদ, জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ূয়া, এসএএস সুপার সুরজিত রায় দাস, জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের পংকজ কুমার বৈদ্য, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের হিসাবরক্ষক হুররমা আকতার খুকী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক উচ্চমান সহকারী মো. খায়রুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads