• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
লিচু বাগানে কেউ সেলফিতে কেউ কিনতে ব্যস্ত

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

লিচু বাগানে কেউ সেলফিতে কেউ কিনতে ব্যস্ত

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর ও আখাউড়া উপজেলার এখন লিচুর ভরা মৌসুম চলছে। মৌসুমী ফল লিচুকে কেন্দ্র করে  বেড়ে গেছে  এলাকায় দর্শনার্থীদের সমাগম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত লোকজন  পরিবার পরিজন বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন নিয়ে ঘুরতে আসছেন লিচু বাগানে। সকাল দুপুর, বিকাল বাগানে বাগানে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। লিচু পাকতে শুরু করায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠছে এলাকা। এরমধ্যে ফ্রেমে বন্দী করতে লিচু বাগানে কেউ তুলছেন সেলফি কেউ বা ছবি, আবার কেউ বা পরিবার পরিজনের জন্য লিচু কিনছেন। প্রতিদিন নানা বয়সী লোকজন ভিড় জমানোর কারনে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আখাউড়া ও বিজয়নগর এ দুই উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাজারে চলছে লিচুর বিকিকিনি।  বিকিকিনিতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষী, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তবে এখানকার লিচু রসালো,মিষ্টি ও স্বাধে অতুলনীয় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এর কদর রয়েছে বেশ ভালো।

দুই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত অর্ধ শতাধিক গ্রামের নারী পুরুষ সবাই লিচু বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন ভরা মৌসুম থাকায় লিচুতে মেতে উঠেছে পুরো এলাকা। প্রতিদিন গড়ে স্থানীয় বাজারে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে চাষীরা জানায়।

এদিকে আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, রামধননগর, চানপুর, দুর্গাপুর, খারকোট, মিনারকোট, নিলাখাত, বিজয়নগরের পাহাড়পুর, সেজামুড়া, কামালমুড়া, গিলামুড়া, জলিলপুর, মুকুন্দপুর, চানপুর, ভিটিদাউদপুর, খাটিংগা,বিষ্ণুপুর,ছতুরপুর, কালাছড়া, বক্তারমুড়া, শ্রীপুর, নোয়াগাও, পত্তন, আদমপুর, সিঙ্গারবিল,  চম্পকনগর এলাকায় লিচু নিয়ে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

বাগানে বাগানে চলছে লিচু সংগ্রহের কাজ। গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করতে মহিলাসহ সব বয়সের লোকজন কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ দিন মজুর হিসাবেও কাজ করছেন।

এসব এলাকার এমন কোন বাড়ি নেই যার আঙ্গিনায় ৪-৮টি লিচু গাছ নেই। গাছে গাছে লাল লিচুতে রঙ্গিন হয়ে আছে পুরো এলাকা। গ্রাম জুড়ে এখন গাছ ভর্তি লিচু আর লিচু । থোকায় থোকায় বাহারি লিচুতে যেন সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট পাখিদের কিচির মিচির শব্দে এলাকা এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে।

এদিকে, লিচু বাগানগুলোতে এখন নানা বয়সি লোকদের উপচে পড়া ভিড়। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্রাইভেটকার, সিএনজি অটো রিকসা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন করে আখাউড়া,বিজয়নগরের  বিভিন্ন এলাকায় লিচু বাগানে তারা আসছেন। এরমধ্যে

কেউ স্ত্রী, পুত্র নিয়ে, কেউ বা এসেছেন পরিবারের সদস্য নিয়ে ,আবার কেউ বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন নিয়ে ওইসব জায়গায় লিচু বাগানে আসছেন। আর এই আনন্দগন সময় স্মৃতিময় করতে অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেলফি তুলছেন। আবার কেউ বা ছবি তুলছেন। আবার কেউ কেউ লিচু ক্রয় করছেন। 

ব্রাহ্মনবাড়িয়ার মেড্ডা এলাকা থেকে লিচু বাগান ঘুরে দেখতে এসেছেন  স্ত্রী,পুত্র,আর মেয়েসহ একই পরিবারের ৫ সদস্য। এরমধ্যে ব্যবসায়ী মো. আল-মামুম হোসাইন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক দিন ধরে  পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় নি। পরিবারের সদস্যরা এক প্রকার যেন ঘরবন্দি হয়ে আছি। তাই   মূলত এখানে লিচু বাগান দেখতে বিজয়নগর এলাকায় ছুটে আসা। লিচু বাগান দেখে সবাই খুবই মুগ্ধ হয়েছেন। বাগান থেকে পাড়া লিচু পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয় স্বজনের জন্য কেনা হয় বলে জানায়।

আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকা থেকে আসা  মো. সিফাত আহমেদ বলেন, দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকার লিচু বাগান দেখা হয়নি। তাই বন্ধদের নিয়ে এখানে আসা। ছবি তুলেছি, লিচু খেয়েছি এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনা হয় বলে জানায়। 

মাধবপুর থেকে স্বস্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান। তিনি বলেন, যে পেশায় আছি ইচ্ছে করলে দুরে কোথাও বেড়ানো সম্ভব হয় না।  লোকমুখে লিচুর বাগানের কথা শুনে মুলত বিজয়নগর এলাকায় আসা। বাগানে থোকাই থোকাই লিচু দেখে খুবই ভালো লেগেছে বলে জানায়।

বাগান মালিক মো. জামশেদ মিয়া বলেন,  তার ৩টি বাগানে ৭০ টি গাছ রয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে।  তিনি আরো জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে বাগানে প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। এ জন্য তার সব সময় সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এক দিকে দর্শনার্থী অন্য দিকে পাইকাররা লিচু ক্রয় করতে আসায়  ব্যস্ত সময় পার করতে হয় বলে জানায়।

বাগাম মালিক মো. মুরাদ মিয়া বলেন, দর্শনার্থীরা অনেক সময় ঝুলে থাকা লিচুতে ধরে ছবি তুলতে গিয়ে নষ্ট করছে। এতে করে আমাদের ক্ষতি হয়। আগে এতো মানুষ লিচু বাগানে আসতো না । গত কয়েক বছর ধরে লিচু মৌসুমে অসংখ্য মানুষ আসছেন লিচু বাগান দেখতে। তবে  যারা লিচু বাগান দেখতে আসছেন তাদের মধ্যে বেশীভাগ লোকজনই ক্রয় করছেন। সব মিলিয়ে এলকা  যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বিজয়নগরে ৩৭৫ হেক্টও ও আখাউড়ায় ৯০ হেক্টর রয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আবহাওয়ার কারণে লিচুর কিছু ক্ষতি হলে ও শেষ পযর্ন্ত তুলনামুলক ভাবে ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাষিরা বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। এ মৌসুমে আখাউড়া উপজেলায় ৭০-৮০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাছাড়া ফলন ভালো রাখতে সার্বিক ভাবে চাষিদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানায়। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads