• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
চিকিৎসা পেতে ভোগান্তি

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

চিকিৎসা পেতে ভোগান্তি

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০২১

কলাতলীস্থ ঝরঝরিপাড়া এলাকার নাছিমা আক্তার (৪৫) পেশায় গৃহিনী, স্বামী টমটম চালক। নাছিমা আক্তারের বেশ কয়েকদিন ধরে পেটেব্যথা অনুভব হচ্ছে, তাই সকাল ৮টায় এসেছেন সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ১০টার দিকে বহির্বিভাগের টিকিট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে নতুন ভবনের সামনে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ১১ টা ১০ মিনিটে ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন। তবে সেই ডাক্তার বলেছেন, আপনার সমস্য জটিল, বেশ কিছু পরীক্ষা করতে হবে, তাই মূল ভবনের দু-তলায় গিয়ে কনসালটেন্ট ডাক্তার দেখান। পরে আবার সেখানে এসে লাইনে দাঁড়াতে আর শরীর স্থির রাখতে না পেরে হেলান দিয়ে বসে পড়েন দেয়ালে, তবে কনসালটেন্ট ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন বেলা ১টার পরে। তিনি কিছু ওষুধ দিয়েছেন বটে, সঙ্গে দিয়েছেন বেশ কিছু পরীক্ষা। হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা বিষয়ে নাছিমা বলেন, এ রকম জানলে হাসপাতালে না এসে ঘরে মরে যেতাম।

একইভাবে গত ৯ জুন সকালে কানের সমস্যা নিয়ে ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন শহরের টেকপাড়ার শামিমা আক্তার। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ছেলের কান দিয়ে পানি পড়ছে। তাই ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসে যে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হয়েছি, তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। প্রথমে টিকিট নেওয়ার সময় বলেছি, নাক, কান, গলার ডাক্তার দেখাবো, তারা আমাকে নতুন ভবনে পাঠিয়েছে। আমি মনে করেছি, সেখানে নাক, কান, গলার ডাক্তার বসে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা যুদ্ধ করে, সেখানে গিয়ে দেখি তিনি অন্য বিভাগের ডাক্তার। তিনি আবার আমাকে রেফার করেছেন নাক, কান, গলা বিভাগের ডাক্তারের কাছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে-আমাকে প্রথমে বলে দিলে অসুবিধা কী ছিল? আর নাক, কান, গলা বিভাগে এসে সেখানেও দীর্ঘ লাইন আর স্টাফদের গালাগালি শুনে প্রায় এক ঘণ্টা পরে ডাক্তার দেখিয়েছি। তিনি আরো বলেন, সেখানে দেখেছি, কিছু এনজিওতে চাকরিরতরা আমাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রোহিঙ্গাদের ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে এর অসংখ্য হয়রানি এবং দুর্ভোগের কথা। তারা দাবি করেন, মূলত এখানে আসা বেশিরভাগ গরিব অসহায় মানুষ, তারা টাকা থাকলে নিশ্চই এখানে আসতো না। তাই এখানে পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েও ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। একজন ডাক্তার দেখাতে কয়েক দফা লাইনে দাঁড়িয়ে কর্মচারীদের গালমন্দ শুনে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াতে হয়। এরপরেও ডাক্তারের চেম্বারে গেলে সেখানে ডাক্তার ভালো করে কথাই বলেনা, কি সমস্যা শুনে মাত্র একটু না দেখেই ওষুধ লিখে দেয়। কিছু বুঝাতে চাইলে উল্টো গালমন্দ করে, সেখানে থাকা কর্মচারীরা টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে। সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কনসালটেন্ট ডাক্তাররা চেম্বারে আসেন প্রায় ১২ টার পরে, এসে খুবই তাড়াহুড়া করে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আবার চলে যান। পরে অবশ্য ঠিকই প্রাইভেট চেম্বারে বা হাসপাতালে সময় দেন।

এসব বিষয়ে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুমন বড়ুয়া বলেন, কনসালটেন্ট ডাক্তাররা হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগী দেখার পর বহির্বিভাগে রোগী দেখে, তাই উনাদের চেম্বারে আসতে দেরি হয়। আর হাসপাতাল সবার জন্য উন্মুক্ত, এখানে রোহিঙ্গা বা বিদেশি এবং স্থানীয় সবার জন্য একই নিয়ম। তবে ক্যাম্পে থেকে আসা আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গারা হাসপাতালে আসলে তাদের দেখাশুনার জন্য তাদের কিছু লোকজন আছে। যেহেতু তারা আমাকের অনেক লোকবল, যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্র দিচ্ছে, তাই রোহিঙ্গা বা এনজিওদের সহায়তা করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads