• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯
কলাপাড়ায় বিধ্বস্ত বাঁধেই নিঃস্ব হাজারো পরিবার

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কলাপাড়ায় বিধ্বস্ত বাঁধেই নিঃস্ব হাজারো পরিবার

  • মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০২১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছাসের তোড়ে যে বাঁধ ভেঙ্গে সর্বস্ব হারিয়েছে হাজারো পরিবার, সেই ভাঙ্গা বিধ্বস্ত বাঁধের উপরই ঝুপড়ি তৈরি করে এখন বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারগুলো। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের মানুষ রামনাবাদ নদীর জোয়ারের পানিতে প্রতিদিনই দুই দফা প্লাবিত হচ্ছে। এ কারনে ক্ষতিগ্রস্থ্য গ্রামগুলোর মানুষ জীবন ও সম্পদ রক্ষায় আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের উপর। গত প্রায় এক মাস ধরে দুই শতাধিক পরিবারের শিশু,বৃদ্ধদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে চান্দুপাড়া বাঁধের উপর। এসব পরিবারে নেই বিশুদ্ধ পানি, রান্নার চুলা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। তারপরও জলোচ্ছাস থেকে বাঁচতে পাঁচ-দশফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পলিথিন, তাল ও কলাপাড়ার ছাউনি দেয়া ঘরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

২০০৭ সালের সিডরের পর গত ১৩ বছরে একাধিক ঝড়,জলোচ্ছাসে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলেও এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তাণ্ডবের পর যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। ঝড়ের ঝাপটায় ঘরের কিছুটা ক্ষতি হলেও সেখানে এখন বসবাসের উপায় নেই। প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুই বেলা রাবনাবাদ নদীর তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে। নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ গ্রামে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ কারণে সম্পদ নষ্ট হলেও জীবন বাঁচাতে খোলা আকাশের নিচে চাঁদের আলোতে ঝুপড়ি তৈরি করে এখন কোন রকম দিন-রাত পার করছে শত শত পরিবার। স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা। কিন্তু তাদের সহায়তায় নেওয়া হচ্ছে না কোন স্থায়ী পদক্ষেপ।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য ষাটোর্ধ্ব ধলা বিবি, ফিরোজা বেগম বলেন, ৭০, ৯০’র বন্যা ২০০৭ সালের সিডর এরপর আইলা, মহাসেন, আম্পান ঝড় তারা মোকাবেলা করেছেন। কিন্তু এবারের মতো তাদের গৃহহারা হতে হয়নি তাদের। অবস্থা সম্পন্ন পরিবার থেকে শুরু করে দিনমজুর পরিবার, চান্দুপাড়া গ্রামের ৯০ ভাগ পরিবারের বাস এখন বাঁধের উপর।

চান্দুপাড়া গ্রামের চাঁন মিয়া(৭০),প্রতিবন্ধী যুবক শফিকুল ইসলাম বলেন, ঝড়ের পর স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিছু পরিবারকে চাল ডাল সহায়তা করেছেন। কিন্তু তারা এখন ত্রাণ চান না। তারা চান স্থায়ী বেড়িবাঁধ। ঘর থাকলেও সেই ঘরে থাকার এখন উপায় নেই। বেড়িবাঁধের উপর থাকতে থাকতে প্রতিদিনই তাদের ভিজতে হচ্ছে বৃষ্টির পানিতে।

ঝড়ের জলোচ্ছাসে খামারের দশটি ভেড়া হারিয়েছেন যুবক মো. ফিরোজ। তিনি বলেন, গোটা এলাকায় পুকুর তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধ করার ঔষধও তাদের দেয়া হয়নি। এ কারনে অনেক মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। মারা যাচ্ছে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী।

লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস তপন বলেন,হাজার হাজার মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। রাস্তার উপর খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে পরিবারগুলো। এ পরিবারগুলো দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যায় পড়েছে ভাঙ্গা বাঁধের কারণে। এখন প্রতিদিন বৃষ্টি ও নদীর জোয়ারে তারা প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান দূর্গত এলাকা পরিদর্শণ করে ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকায় খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, লালুয়া ইউনিয়নের মানুষ প্রতিটি ঝড় জলোচ্ছাসেই ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে চাড়িপাড়া ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের কারনে। তাই এই বাঁধ পুনঃ নির্মান যাতে দ্রুত শুরু হয় বিষয়টি এবার সংসদে উপস্থাপন করবেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবহিত করবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শণে এসে কলাপাড়ার চাড়িপাড়া ভাঙ্গা বেড়িবাঁধটি মেরামতের আশ্বাস দেন। জরুরি ভিত্তিতে এ বাঁধের ভাঙ্গন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads