চুয়াডাঙ্গা করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সংক্রমণের হার বেড়েছে আরও। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় একজন করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৬ জনসহ মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পপতিবার চুয়াডাঙ্গায় আরও ১১৬ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১৬ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়।
অপরদিকে, বৃহস্পাতিবার থেকে চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ার বিষয়ে সিভিল সার্জন কঠোরতা আরোপ করে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ভোকাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যদিও আরএমওর সাথে গতরাতে যোগাযোগ করেও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিস্তারিত পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। কতোজন সুস্থ হয়েছেন তাও নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ বৃহস্পপতিবার নতুন ২৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিন স্বাস্থ্য বিভাগ র্যা পিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৬৮ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ পান। পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ পেয়েছে ৫৮ জনের। মোট ১১৬ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়েছে। তবে কোন উপজেলার কতজন যেমন জানা যায়নি, তেমনই কোন মহল্লায় কতজন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন তাও জানা সম্ভব হয়নি। স্বয়ং সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।
বৃহস্পাতিবার রাতে সিভিল সার্জনের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুন ১১৬ জন করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিস্তারিত বলবেন জেলা করোনাই ভাইরাস সংক্রান্ত ভোকালপার্সন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার।
এরপর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে একজনসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৭ জন। নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ১১৬ জন। উপজেলা ভিত্তিক তথ্য আমাকে দেয়া হয়নি।
পুনরায় সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছুটা সময় নিয়ে প্রায় মধ্যরাতে জানান, সব তথ্যই দেয়া হয়েছে। দেখি আমি নিজেই সব দায়িত্ব পালন করতে পারি কি-না। উপজেলা ভিত্তিক তথ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নতুন শনাক্ত যে ১১৬ জন, তার মধ্যে সদর উপজেলার ৬১ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৪ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১২জন ও জীবননগর উপজেলার ২৯ জন।
এদিকে, করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহের মৃত সুরত আলীর ছেলে দরবেশ আলী সর্দি কাশি জ্বরে ভুগতে থাকেন। গত ১৪ জুন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। হাসপাতালেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে দামুড়হুদা কোমরপুরের মনিরুজ্জামানের স্ত্রী খাদিজা খাতুনকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সর্দি কাশি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তার নমুনা নেয়া হয়। রাত ১০টার দিকে হাসপাতালের হলুদ জোনে মারা যান তিনি। একই উপজেলার দর্শনা মদনার মোহর আলীর স্ত্রী সফুরা খাতুনকে গত বুধবার ২৩ জুন বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তারও নমুনা নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে মারা যান তিনি। সফুরা খাতুনের বয়স হয়েছিলো ৪০ বছর। একই উপজেলার একই গ্রামের ফকির মোহাম্মদের ছেলে ইসমাইল গত বুধবার বিকেলে সর্দি কাশি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তারও নমুনা নেয়া হয়। বৃহ¯পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। একই উপজেলার দর্শনা চন্ডিপুর গ্রামের মুক্তার আলীর ছেলে সাবেক মেম্বার আরশাদ উদ্দিন সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। তাকে বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। তারও নমুনা নেয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে তিনি হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৫৫ বছর। একই উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাদল মোল্লার স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনকে ২১ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি ও শ্বাস কষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তাকে হলুদ জোনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফার্মপাড়ার উসমান গণির স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (৪৫) মারা গেছেন। বৃহস্পাতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি তারা যান। সুফিয়া খাতুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২০ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন।
চুয়াডাঙ্গা করোনা আক্রান্ত তথ্য দেয়ার বিষয়ে কঠোরতা আরোপের কারণে কতোজন সুস্থ হয়েছেন, কতোজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানা যেমন সম্ভব হয়নি, তেমনই ভোকাল পার্সনের নিকটও এসব বিষয়ে তথ্য মেলেনি। এসব কারণে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের প্রতি চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। বেশ ক’জন সাংবাদিক চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন।
