• রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪২৯
মিরকাদিমের গরু খামারেই বিক্রি করতে চান খামারিরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মিরকাদিমের গরু খামারেই বিক্রি করতে চান খামারিরা

  • প্রকাশিত ২৯ জুন ২০২১

ব.ম শামীম, মুন্সীগঞ্জ থেকে-

কোরবানির ঈদ এলেই পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ ও গনিমিয়ার হাটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের গরু। অন্য এলাকা থেকেও লোকজন এখানে আসেন এই গরুর সন্ধানে। অনেক দামে কিনে নিয়ে যান পুরান ঢাকার ক্রেতারা।

খামাড়িরা জানান, এই গরু পালনে কোনো রকম ইনজেকশন বা মোটাতাজার ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। কোনো ঘাসও খাওয়ানো হয় না। খামারিদের নিজস্ব মিলে ভাঙ্গানো খৈল,ভূষি,কুড়া,চালের গুড়া খাইয়ে পরম মমতায় লালন পালন করা হয় গরুগুলোকে। খামারের ভেতরের পরিবেশ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। বাইরের কাউকে খামারের ভেতর ঢুকতে দেয়া হয় না।

মিরকাদিমের গরু সাধারণত ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ গরুগুলো মুন্সিগঞ্জের কোনো হাটে বিক্রি হয় না। শুধু খামারে এবং পুরাণ ঢাকার হাটেই বিক্রি হয়ে থাকে। পুরান ঢাকার লোকজন মীরকাদিমে এসেও  গরু নিয়ে যান। এ বছর করোনার কারণে খামরিরা গরুগুলো হাটে নয় তাদের খামারেই বিক্রি করতে চান।

তবে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার কুলুপাড়ার মিরকাদিমের গরু লালন পালন করার যে ঐতিহ্য ছিল তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। ২০০ বছরের ঐতিহ্য এই ধবল গরুর ব্যবসা এখন মিরকাদিমেই হারিয়ে যেতে বসেছে তার জৌলুস। তবে এখনো অনেকেই এই ঐতিহ্য লালন করে চলেছে ইতিহাসের পরম্পরায়।  ভেজালযুক্ত খাবার দিয়ে গুরু মোটাতাজা করে দ্রুত আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে কিছু অসাধু খামারিরা। সেখানে ১০ মাস দীর্ঘ পরিশ্রম করে লাভবান না হওয়ায় এ ব্যবসা থেকে সরে আসছে মিরকাদিমের ধবল গরু ব্যবসায়ীরা। ভেজাল খাদ্যের যোগান দিয়ে গরু বড় করে দ্রুত লাভবান হওয়ার হাতিয়ারকে এখন কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে ২০০ জনের বেশি মিরকাদিমের গরুর খামার মালিক কমে ১০-১২ জনে নেমে এসেছে। তাও বেশি গরু তৈরি করেন না।

হাজি গোলাম মোস্তফা এগ্রো ফার্মের মালিক হাজি গোলাম মোস্তফা বলেন,লাভ লোকসানের কথা চিন্তা না করেই পুরান ঐতিহ্য ধরে রেখে গরু পালন করে আসছি। আমার বাবা দাদারাও মিরকাদিমের গরু পালন করতো। আমরা গরুগুলোকে বাইরের ঘাস খাওয়াই না। আমাদের ধান,গম আর তেলের কারখানা থাকার কারণে মিরকাদিমের ভূষি,কুড়া,খৈলসহ বিভিন্ন উন্নতমানের গরুখাদ্য মিনিকেট চালের খুদ,এক নাম্বার খৈল,ভাতের মার,সিদ্ধ ভাত,খেসারির ভুসি,গমের ভূষি, বুটের ভূষি খাওয়ানো হয়। এছাড়া গরু পালনে প্রশিক্ষিত লোক নিয়োগের মাধ্যমে গরু পালন করা হয়।

তিনি আরো জানান, করোনার কারণে গরু খাদ্যের দাম বেশি৷ আমার খামারে শতাধিক গরু রয়েছে। এর মধ্য মিরকাদিমের ধবল গরু আছে ৪০টির মতো। এছাড়াও শাইয়াল,নেপালি,ভূটান,সিন্ধি জাতের গরু রয়েছে।



হাজি গোলাম মোস্তফা জানান, পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের গনিমিয়ার হাটেই আমরা এসব গরু বংশ পরস্পরায় বিক্রি করে আসছি। তবে এখন পুরান ঢাকার লোকজনসহ অন্যান্য এলাকার লোকজন

খামারে এসে গরু কিনে নিয়ে যান। আমরা করোনার সময়ে আমাদের গরুগুলো খামারেই বিক্রি করতে চাই। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গরু বিক্রিও করেছি। আমার খামারে ২ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে।

হাবিব হাজির খামারের শ্রমিক সাদের আলি জানান, আমি ছোট বেলা হতে ধবল গরু লালন পালন করছি। আমি অভিজ্ঞ হওয়ায় মালিক আমাকে ২২ হাজার টাকা বেতন দেয়। তবে আগের মত ঘরে ঘরে মিরকাদিমে গরু কেউ বানায় না। আগে রহমতগঞ্জের গনিমিয়ার হাট বলতে মিরকাদিমের গরুকে বোঝাত। এখন হাতেগোনা কয়েকজন গরু পালন করে। তিনি বলেন, ‘মিরকাদিমের ধবল গরু বানাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরাঙ্গামারীসহ বিভিন্ন হাট ও এলাকা হতে ভারত ও ভুটানের আবাল-পশ্চিমা সাদা ষাঁড় ও সাদা গাভীর বাচ্চা কিনে আনেন মীরকাদিমের খামারিরা। নিজের বাচ্চার মতো লালন করি। নতুন গামছা দিয়ে গোসল করাই। সব সময় চোখে চোখে রাখি। আমরা গত কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ পর ভূরাঙ্গামারী হাট হতে এ বছর ২২ টি ধবলসহ ভূট্টি,শাইয়াল, নেপালি, ভূটান,সিন্ধি জাতের ৭০ টি গরু কিনে আনি। এক বছর ধরে গরুগুলো লালন পালন করছি।

তবে দিন দিন গরুর এই ব্যবসাটিতে এখানকার ব্যবসায়ীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। ভূষি,কুড়া আর খৈলের দাম বৃদ্ধি আর অপ্রতুল হওয়ার তারা হতাশ। এছাড়া ভেজালযুক্ত মানুষের ক্ষতিকর খাবার মাংস বৃদ্ধির জন্য ইউরিয়া সারসহ মোটাতাজাকরণ ওষুধ বন্ধ করলেই দ্রুত এমন সুস্বাদু গরুর মাংসের খামারি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তাদের দাবী। সরকারিভাবে জায়গার অভাব ও খামার তৈরী করা এবং এদের পৃষ্ঠপোষকতা করলে পুনরায় এই ব্যবসায় জৌলুস আসতে পারে বলে মনে করছেন খামার ব্যবসায়ীরা।



জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, এই জেলায় ১২/১৪ টি খামারে এখোন ধবল গরু পালন করা হয়ে থাকে। তবে ওই সমস্ত খামারে এ বছর কতগুলো ধবল গরু রয়েছে তার সঠিক সংখ্যাটি জানানেই আমার। তবে খামারিদের সংখ্যা দিন দিন অনেক কমেছে। তিনি বলেন, এই গরুর খামারিদের ইউরিয়া-মোলাসেস-স্ট্র ( ইউরিয়া সার, রাবগুড় ও শুকনা খড়) দিলে গরু বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মোটাতাজা হবে। এগুলো খাওয়াইয়া মোটাজাত করলে ওই গরু বছরের পর বছর খামারে অবিক্রিত থাকলেও কোন সমস্যা হবেনা, খরচও কমবে। ধবল গরু পালনে খামারিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads