• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় জমে উঠছে অনলাইনে পশু কেনা বেচা

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০২১

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সারা দেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চলছে কঠোর বিধি-নিষেধ। এরই মধ্যে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা। গত বছরের মতো এবারও ঈদের আগে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কোরবানির পশুরহাট নিয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। সেইসাথে পশু বিক্রি নিয়ে অনেকটাই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে খামারি ও পারিবারিক ভাবে পালনকারী গৃহস্থরা।

তবে সেই শঙ্কা কিছুটা হলেও দূর করছে অনলাইন কোরবানির পশুর হাট। খামারিদের চিন্তমুক্ত করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে অনলাইন ‘ফেসবুক’-এর মাধ্যমে পশু কেনাবেচার প্লাটফর্ম গড়ে তুলেন । সেখানে গরুর ছবি, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে প্রচার প্রচারণা ব্যাপক ভাবে শুরু করা হয়েছে।

তাছাড়া কিছু খামারি গৃহস্থরা নিজ উদ্যোগে অনলাইনে তাদের ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইটে গরুর ছবি ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে প্রচার করছেন। এতে করে খামারি ও গৃহস্থরা ভালো সারা পাচ্ছেন বলে জানায়।

জানা যায়, বর্তমান এই দু:সময়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ফেসবুকে পশু বেচা-কেনা করতে বিশেষ এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা আখাউড়া অনলাইন কোরবানির ‘পশুর হাট’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। সেখানে খামার মালিক ও গৃহস্থদের বিক্রিযোগ্য কোরবানির পশুর ছবি মোবাইল নাম্বর যুক্ত করে আপলোড করছেন। তাছাড়া কোন ক্রেতা চাইলে তাকে লাইভে পশু দেখানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়। পাশপাশি অনেকে ব্যাক্তিগত ভাবে ফেসবুকে পশুর ছবি ঠিকানা আপলোড করছেন। ওইসব প্রচার হওয়ায় ইতোমধ্যে অনলাইনে পশু বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে এমন উদ্যোগ গ্রহন করায় অনেকে সাধুবাদ জানিয়েন। অনলাইনে পশু বেচা-কেনা করোনা সংক্রমণরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন সচেতন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫০৬ টি খামার সহ, পারিবারিক ভাবে কৃষক তাদের বাড়িতে মোটাতাজাকরনসহ মোট ১৩ হাজার ৮৩২ টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরমধ্যে গরু ১১১৫০টি মহিষ ৩৬৩টি ও ছাগল ভেড়া ২৩১৯টি রয়েছে।

সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় সদর উপজেলাসহ অন্যান্য স্থান থেকে আরো ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পশু আসবে বলে আশা করছেন। এ উপজেলায় যে পরিমান পশু কোরবানি করা হবে তা স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রাণী সম্পদ অফিস জানায়।

খামারিরা বলছেন, অনলাইনে ভালো সারা পাওয়া যাচ্ছে। তবে সরকার যদি লাকডাইন শিথিল করে এবং সরকারি নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় পশুর হাটে গরু উঠানো যায় তাহলে বিক্রি নিয়ে কোন প্রকার সমস্যা তৈরী হবে না।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , কোরবানির ঈদকে সামনে খামারগুলোর বেশীভাগ গরুকে মোটাতাজা করা হচ্ছে। চলতে অতিরিক্ত যত্ন। প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা তাজা করতে ও সুস্থ রাখতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল ভুষিসহ পুষ্টিকর খাবার মাধ্যমে লালন পালন করে তারা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু যতই ঈদ ঘনিয়ে আসছে আশানুরোপ পশু বিক্রি না হওয়ায় এক প্রকার দুশ্চিন্তায় ভোগছেন খামারি ও গৃহস্থরা।

উপজেলার মনিয়ন্দ এলাকার খামার মালিক তাজু ভূইয়া বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় আসন্ন কোরবানি ঈদ উপলক্ষে অনেক কষ্ট করে দেশীয় পদ্ধতিতে তিনি ১০টি গরু লালন পালন করেন। আর মাত্র কয়েক দিন বাদে পবিত্র ঈদুল আজহা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে পশুর হাট জমে না উঠলেও আখাউড়া অনলাইন কোরবানির ‘পশুর হাট’ নামে ফেসবুক পেইজে পশুর ছবি আপলোড দেওয়ায় অনেকেই ক্রয় করতে তার বাড়িতে আসছেন। ইতিমধ্যে তার ১টি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানায়। তিনি আশা করছেন ঈদের আগেই গরুগুলো বিক্রি হবে।

খামার মালিক মো.মাহফুজ মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তার খামারে ১৬ টি গরু কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিক্রির জন্য লালন পালন করেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে পুষ্টিকর খাবার খৈল, গম, ভূষি, ছোলাসহ সবুজ ঘাস খাইয়ে গরুগুলো মোটাতাজা করেন। করোনা সংক্রামন বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা দেশে লকডাউন চলায় এসব গরু বিক্রি করা নিয়ে তিনি অনেকটাই শঙ্কায় ছিলেন।

কিন্তু প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উদ্যোগ অনলাইনে গরু বেচতে দেখে তিনি অনেকটাই ভরসা পেয়েছেন। আখাউড়া অনলাইন কোরবানির ‘পশুর হাট’ নামের ফেসবুক গ্রুপটিতে তার গরুর ছবি মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। তাছাড়া তার ছেলের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গরুর ছবি আপলোড করে প্রচারণা শুরু করেন। এখন তার খামারে অনেকেই গরু দেখতে আসছেন।

মো. মুছা মিয়া মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ৮ টি গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেন। গরু কেনা, লালান পালন, খাবার, ওষধসহ অনেক টাকা ব্যয় হয় তার। লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতির কারণে ফেসবুক আইডি থেকে গরুর ছবি আপলোড করে প্রচারণা শুরু করায় ভালো সারা পাচ্ছেন তিনি। ফেসবুকের কল্যাণে তিনি ২টি গরু বিক্রি করেছেন বলে জানায়।

মো. আলম মিয়া জানান, তার খামারে বিক্রি যোগ্য ১০ টি গরু রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে লোকজন এসে তার গরুগুলোর ছবি তুলে এবং মোবাইল নম্বর নিয়ে গেছেন। পরে আখাউড়া অনলাইন কোরবানির ‘পশুর হাট নামের ফেসবুক গ্রুপটিতে আপলোড দেওয়ায় এখন গরু ক্রয় করতে অনেকেই তাকে কল করেছেন। এখন অনেকটাই তিনি চিন্তামুক্ত বলে জানায়।

আখাউড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. কামাল বাশার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কোরবানির পশু বিক্রি করতে আখাউড়া অনলাইন কোরবানির ‘পশুর হাট নামের ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয়েছে। খামারি ও গৃহস্থরা নিজ আগ্রহে তাদের গরুর ছবি মোবাইল নাম্বার দিয়ে যুক্ত হচ্ছেন। তাছাড়া অনেকে নিজ ফেসবুক আইডি খোলে গরুর ছবি মোবাইল নাম্বার দিয়ে আপলোড করে প্রচার করছেন। এই প্রচারের মাধ্যমে অনেকেই বিক্রিতে ভালো সারা পাচ্ছেন। আর যারা এখনো এসব করেনি বা করতে পারছেন না, তাদের পশু অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানায়। এ উপজেলার কৃষক ও খামারিরা দেশীয় পদ্ধতিতে যত্ন নিয়ে গরু লালন পালন করছে। চাহিদা অনুযায়ী পশু বেশী রয়েছে। স্থানীয়দের উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মেটানো যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads