• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

শ্রীপুরে পাহারা দিয়ে গরু রক্ষার চেষ্টা

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২১

গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি ইউনিয়নে চোরদের কবল থেকে কুরবানির জন্য মোটাতাজাকরা গরু রক্ষার জন্য গ্রামবাসী রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছে। এ ইউনিয়নের অন্তত ১২ থেকে ১৫ টি স্থানে দল বেঁধে পাহারা দেওয়া চলছে মাস দেড়েক ধরেই। কুরবানির ঈদ এলেই গরু চুরির হিড়িক পড়ে এ ভয়ে আগে থেকেই এ ব্যবস্থা করেছে গ্রামবাসিরা। অনেক কৃষক ও মৌসুমি ব্যবসায়ী কুরবানিকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে আলাদা টাকা উপার্জনের জন্য পশু লালন পালন করেন। অনেক সময় সেটি চুরি হলে অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নে গরু চুরি ঠেকাতে এ পাহারার আয়োজন করা হয়েছে। তবে এ পাহারাতে পুলিশ নিয়মিত সহযোগিতাসহ নানা পরার্মশ দিয়ে খামারিদের পাশে রয়েছেন বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পাহারার পর থেকে কোনো গরু চুরির ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান গ্রামবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মোড়ে মোড়ে ৭/৮ জনের একটি করে দল লাঠি টর্চলাইট হাতে পাহারা দিচ্ছেন। তাদের সবাই আশপাশের অন্য দলের পাহারাদারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করেন। যুবক মধ্য বয়সী স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরাও রাত জেগে পাহারা দেয়।  এ দিকে বাউনি,হায়াতখার চালা, কাইচ্চাবাড়ি,পটকা, কর্নপুর,খিলপাড়া, পেলাইদ এলাকায় পাহারার দৃশ্য চোখে পড়ে। সড়কে চলাচলকারী কোনো মানুষ বা যানবাহন সন্দেহ হলে তাদের গতিরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্দেহ না কাটলে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তাদের এই কাজে নিয়মিত উৎসাহ দেন টহলরত পুলিশ সদস্যরা।

বাউনী এলাকায় একটি পাহারাদা দলের দলনেতা আরিফ রাব্বানী। তিনি ৭/৮ জনের একটি দল নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। এ দলে যুবকসহ বয়স্ক পুরুষ সদস্যরাও আছেন। তিনি জানান, মাসখানেক আগেও প্রচুর গরু চুরি হয়েছে এ সব অঞ্চলে। সামনে ঈদে কুরবানির জন্য অনেকেই গরু মোটাতাজা করেন। এই সময় গরু চুরির আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। গত কয়েক বছর অনেক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তাই এবার এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিরা পরামর্শ করে গরু চুরি ঠেকানোর জন্য রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করা হলো।

খিলপাড়া সরকার বাড়ি এলাকায় ১২ টি দলের পাহারা চলে পালাক্রমে। ওই এলাকার ১১ নম্বর দলের প্রদান সেলিম সরকার। তিনি বলেন নিয়ম করে প্রতিদিন রাত ১১ টা খেকে ভোর সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত পাহারা চলে। প্রত্যেক দলের প্রধান রয়েছে। সবার কাছে তালিকা রয়েছে কবে কার দলের পাহারা। সে দিন নিজ দায়িত্ব সবাই পাহারাতে উপস্থিত থাকে। মাঝে মধ্যেই পুলিশের টহল টিম আমাদের খোঁজ খবর নিতে আসেন। ওসি সাহেবও আসেন কখনো কখনো। তিনি বলেন পাহারা শুরু হওয়ার একটি চুরির ঘটনাও ঘটেনি। অন্য বছরে এ সময় চুরির হিড়িক পড়ে যেত।

কৃষক আহসান হাবিব বলেন, গ্রামের কৃষকের ঘর থেকে একটি গরু চুরি হওয়া মানে অনেক বড় ক্ষতির মুখে পড়া একটি পরিবারের। অনেকেই সারা বছর ধরে কষ্ট করে গরু লালন পালন করেন কুরবানি ঈদের হাটে ভালো দামে বিক্রি করবেন এ আশাতে। এ গরু বিক্রির টাকাতে অনেকের অর্থকষ্ট লাগব হয়। অনেকে এ টাকায় নানা স্বপ্ন বুনে থাকেন। ধারদেনা শোধ করেন।

কলেজ শিক্ষার্থী মাহিদুল হাসান বলেন সবার সঙ্গে রাত জেগে পাহারা দিতে ভালোই লাগে। মাঝে মধ্যে দলনেতারা ভোজের আয়োজন করেন। এতে আনন্দ বাড়ে। পুলিশ খবর রাখে নিয়মিত। সবার মিলিত কষ্টের কারনে চুরি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। কৃষকরা নির্ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারে গোয়ালে গরু রেখে। তিনি বলেন দশে মিলে কাজ করলে সব সময় সাফল্য আসে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর মডেল থানার ওসি খন্দকার ইমাম হোসেন  পাহারার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন স্থানীয় কৃষক ব্যবসায়িদের মোটাতাজা করা গরু চুরি ঠেকাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টহল জোরদার করা হয়েছে  বিভিন্ন অঞ্চলে । স্থানীয় উদ্যোগেও রাতে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করে। নিয়মিত তাদের খোঁজ রাখে পুলিশের টহল টিম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads