অভাবের কারণে কোনো দিন মানুষের কাছে হাত পাততে হয়নি। যখন আমার বুঝ হইছে তখন থেকেই কষ্ট করে কামাই রোজগার করে খেয়েছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভারি পরিশ্রমের কাজ করতে না পাড়ায় রাস্তার পাশে বসে চা বিক্রি করে সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে। বর্তমান চলমান পরিস্থিতিতে সারা দেশে লকডাউন থাকায় দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। কিন্তু জীবন বাঁচাতে এখন চায়ের ফ্লাক্স হাতে চা নিয়ে শহরের অলিগলি পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছি। কারণ চা বিক্রি করতে না পারলে তার সংসার চলবে না। তাই পায়ে হেঁটে ঘুরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এসব কথা বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগর এলাকার তপন সাহা (৬৫)। তার পরিবারে স্ত্রী, ৪ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। চা বিক্রির আয় দিয়ে ইতোমধ্যে তার ৪ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। যে বয়সে ঘরে বসে আরাম আয়েশ করার কথা সেই বয়সে জীবন সংগ্রামে হাল ছাড়েননি। অন্যের বোঝা না হয়ে থেকে সকাল বিকাল ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রি করে চলছে তার দিন। তিনি এলাকায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।
তপন সাহা বলেন, এক সময় তিনি পরিশ্রমের নানা কাজ করতেন। এক পর্যায়ে রাধানগর এলাকায় রাস্তার পাশে ছোট একটি দোকানে তিনি চা বিক্রি শুরু করেন। দৈনিক চা বিক্রি করে ৩শ থেকে ৪শ টাকার উপর তার আয় হতো। এতেই তার সংসার চলে যেতো। এর মধ্যে চা বিক্রিতে তার চলে যায় ৩০ বছরের উপর। প্রাণঘাতী করোনা শুরু থেকে তার এই ক্ষুদ্র ব্যবসার উপর কিছুটা প্রভাব পড়ায় তার চা বিক্রি যেন অর্ধেকে নেমে আসে। এরপরও তিনি খাল ছাড়েননি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় চা বিক্রি শুরু করেন। আগে যেখানে ছোট দোকানে বসে চা বিক্রি করতেন এখন বসে না থেকে ফ্লাক্সে করে চা নিয়ে শহরের অলি গলি পায়ে হেঁটে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন পৌর শহরের সড়ক বাজার, লালবাজার, রাধানগর এলাকায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রির আয় দিয়ে চলে তার ৩ জনের সংসার।
এদিকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সারা দেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চলছে কঠোর বিধি-নিষেধ। বন্ধ আছে দোকান পাট। মানুষের চলাচল অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় ও তিনি ঘরে বসে না থেকে জীবিকার প্রয়োজনে ফ্লাক্স হাতে চা নিয়ে বের হতে হচ্ছে তাকে। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে সারা দিনে দেড়শ থেকে ২ শ কাপ চা বিক্রি হয় বলে তিনি জানায়। এতে তার আয় হয় ২শ থেকে ৩শ টাকা। তিনি বলেন, মানুষ ইচ্ছে করলে সব কিছু করতে পারে। অন্যের কাছে হাত না বাড়িয়ে নিজে ছোট কোন কাজের মাধ্যমে উপার্যন করা এর চেয়ে শান্তির আর কোন কিছু নেই।
সাংবাদিক রুবেল আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকায় শহরের প্রায় সব চায়ের দোকান বন্ধ রয়েছে। ইচ্ছে করলে চা খাওয়া (পান ) করা যায় না। তাই এই ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতার কাছ থেকে চা খাওয়া হয়।
মো. খোরশেদ মিয়া বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে চা বিক্রি করে আসছেন। তুলনামুলক ভাবে তার চা অনেক ভালো হয়। সময় সুযোগ হলে তার কাছ থেকে চা খান বলে জানায়।