• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ নিধন : কোটি টাকায় সমুদ্র বিক্রি করছে চাঁদাবাজরা

  • রাহাত মামুন, চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
  • প্রকাশিত ১২ জুলাই ২০২১

নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরতে চট্টগ্রামের সামুদ্রিক এলাকা বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকায়। একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন জেলার জেলেদের কাছে সমুদ্রপাড়ও বিক্রি করছে। স্থানভেদে জেলেদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। গত দুই সপ্তাহে প্রায় ৩০০ বহিরাগত বোটের কাছে এই পাড় বিক্রি করেছে স্থানীয় ওই সিন্ডিকেট। এসব বোট থেকে প্রতিদিন টন টন জাটকা নিধন করা হচ্ছে প্রকাশ্যে।

বঙ্গোপসাগর ঘিরে এমন অরাজকতা চললেও প্রশাসন এক্ষেত্রে নিরব ভূমিকাই পালন করে যাচ্ছে। ‘সাগর উত্তাল’— এমন অজুহাত দেখিয়ে ‘অভিযান পরিচালনার সুযোগ নেই’ বলে দায় এড়াচ্ছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আছে আরও ১০ দিন। তার আগেই সাগরজুড়ে দেখা যাচ্ছে শত শত ফিশিংবোট। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইতোমধ্যেই এসব ফিশিংবোট সাগরে মাছ ধরা শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় তিন শতাধিক ফিশিংবোট জাটকা ইলিশ মাছ নিধন করছে।

চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার আকমল আলী, খেজুরতলা ও পতেঙ্গার মুসলিমাবাদ এবং বন্দর থানার কাট্টলী এলাকায় গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে সরেজমিনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী এবং হাতিয়া জেলা থেকে শত শত ভাসান জালের বোট এসেছে পতেঙ্গার ১৫ নম্বর, মুসলিমাবাদ ও ইপিজেডের খেজুরতলা, আকমল আলী এবং কাট্টলী এলাকায়। প্রতিটি বোট থেকে আদায় করা হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা। এই টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার সাগরে মাছ ধরার অনুমতি।

জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক কয়েকটি সিন্ডিকেটের লোকজন এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বহিরাগত জেলেদের ভিড়ে সাগরপাড়ের মাছ শিকার করতে অনিশ্চিতায় মুখে রয়েছেন স্থানীয় জেলেরা।

এর আগে মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে উপকূলীয় ১৪টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৫টি জেলে পরিবারকে ১৬ হাজার ৭২১.৩২ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ এর ধারা-৩ এর উপধারা-২ এর ক্ষমতাবলে চলতি বছরে ১৩ এপ্রিল এ নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরার সময় এখনও ১০ দিন বাকি রয়েছে। এখনও জাল বোনা শেষ হয়নি এখানকার অধিকাংশ স্থানীয় জেলের। অথচ বহিরাগত জেলেরা এই এলাকায় এসেই সাগর দখল করে ইলিশ মাছ ধরা শুরু করে দিয়েছে। পতেঙ্গা মুসলিমবাদ ও ইপিজেড খেজুরতলা ও আকমল আলী সাগরপাড় এবং কাট্টলী এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক ভাসান জালের বোট থেকে প্রতিদিন জাটকা মাছ নিধন করা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসন নিরব।

তারা আরও জানিয়েছেন, এখানকার চিহ্নিত চাঁদাবাজরা পতেঙ্গা ১৫ নম্বর, মুসলিমবাদ, খেজুরতলা ও আকমল আলী, কাট্টলী এলাকায় সাগরের পাড় বেচাকেনা করে। এভাবে প্রতিবছরই কয়েক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে তারা। বহিরাগতদের বোটের ভিড়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে এবারও অনিশ্চিয়তায় মুখে পড়েছেন স্থানীয় জেলেরা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে দুইবার অভিযান পরিচালনা করেছি কাট্টলী এলাকায়। কিন্তু এখন সাগর উত্তাল। জেলেরা যেখানে মাছ ধরতে যায়, সেখানে আমাদের যাওয়া একটু কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘শনিবার (১০ জুলাই) অভিযান চালিয়ে বোট ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাউকে আটক করা যায়নি। এ সময় আমরা ২২ টন জাটকা ইলিশ মাছ জব্দ করেছি। পরে এগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সদরঘাট থানার নৌ-পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে সাগরের যে আবহাওয়া সেখানে আমাদের স্পিডবোট দিয়ে যাওয়া অনেক সময় কঠিন। আমাদের স্পিড বোট দিয়ে মোহনা পর্যন্ত যাওয়া যায়। এই আবহাওয়ায় অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা আছে শুধু কোস্টগার্ডের। তবু আমি দেখছি কিভাবে অভিযান পরিচালনা করা যায়।’

জানা গেছে, পাঁচ জেলার উপকূলীয় এলাকায় অপরাধ দমনের দায়িত্ব পাওয়া চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের হাতে অভিযান চালানোর জন্য নৌযানই আছে মাত্র দুটি। এর একটি চট্টগ্রামে থাকলেও অপরটি রয়েছে রাঙামাটিতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads