• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
এই বাঁকেই ঝরেছে ৪১ প্রাণ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

এই বাঁকেই ঝরেছে ৪১ প্রাণ

  • সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০২১

মাত্র ২৫০ মিটারের রাস্তায় পাঁচ বাঁক। এই বাঁকই কেড়ে নিয়েছে ৪১ তাজা প্রাণ। শুধু ২০২১ সালের এ পর্যন্ত ওই বাঁকে হারিয়েছে ছয় প্রাণ। আহত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। নিহতরা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, গাড়িচালক, নৈশপ্রহরী, ইন্স্যুরেন্স কর্মী ও পথচারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্থানটি টাঙ্গাইলের ঢাকা-সাগরদিঘি সড়কের সখীপুর উপজেলার বড়চওনা বাজার সংলগ্ন মৌটার পুকুর এলাকা। এই আঁকাবাঁকা সড়কের পাঁচ বাঁকের দুর্ঘটনায় নিহত স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিচিতদের নাম-পরিচয় জানা গেলেও দূর-দূরান্তের নিহত ও গুরুতর আহতদের হাসপাতালে পাঠানো চিকিৎসাধীন রোগীদের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহতদের অনেকেই জীবনযুদ্ধে হেরে অনেকেই চলে গেছেন পরপারে। এই আঁকাবাঁকা সড়ক তাদের ও পরিবারের স্বপ্ন ম্লান করে দিয়েছে। গত এক মাস সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য ও চিত্র পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ গত ২২ মে সখীপুর সরকারি মুজিব কলেজের অধ্যাপক (অব.) জয়নাল আবেদীন নিজ বাড়ি আড়াইপাড়া থেকে বড়চওনা বাজারে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া গত দুই দশকে উপজেলার সখীপুর গ্রামের তাহেরন নেছা (৬০), বড়চওনা গ্রামের শামীম (৫), সাঈদ শিকদার (৩০), সুমন শিকদার (১৮), হায়দার শিকদার (৫৬), সাদিয়া (১৬), আবদুল আলীম (১৭), সাখাওয়াত (৩৫), নওশের (৪০), মোখছেদ (৭০), রফেজ (৪০), কুতুবপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৩০), জিতেশ্বরী গ্রামের একাব্বর (৪৫), ঘোনারচালার আমজাদ হোসেন (৫০), কালিদাস গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক (৪০), বানিয়ারসিট গ্রামের জামাল হোসেন (৫০), ঘাটাইলের সাগরদিঘি গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২৮), কালিহাতী উপজেলার বর্গা গ্রামের শিক্ষক নুরুল হুদা (৩২), আসমা (৮), শাহাদৎ (২২), মির্জাপুর উপজেলার হাটুভাঙ্গা গ্রামের আনোয়ার খান (৪০), ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা গ্রামের প্রকৌশলী সোলায়মান (৬২), জামালপুরের রাখাল শাহা (২৫)। খোঁজ নিয়ে তাদের নাম-ঠিকানা জানা গেছে। কিন্তু জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলার ১১জন গরু-মহিষ ব্যবসায়ী এবং মধুপুরের ছয়জন আনারস ব্যবসায়ী ২৫০ মিটারের এই পাঁচটি বাঁকের বিভিন্নস্থানে ঘটনাস্থলে ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেও তাদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, নিহতের পরিবার ও অধিকাংশ আহতরা সুস্থ হয়ে প্রতি বছর এই এলাকায় এসে শিরনি করেন। তারা এই স্থানটিতে এসে স্বজন হারানোর কান্নায় ভেঙে পড়েন।

প্রতিটি দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আতিকুল হক ছমির মাস্টার বলেন, ওই পাঁচটি বাঁকের মাঝামাঝি তার বাড়ি। মাঝেমধ্যেই মধ্যরাতে চিৎকার ও কান্নায় ঘুম ভাঙে। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যাতে আর অকালে প্রাণ দিতে না হয়, সেজন্য যান চলাচলে নিরাপদ সড়ক গড়তে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন বলেন, সম্প্রতি গোড়াই হতে সখীপুর-গারোবাজার হয়ে মধুপুরের কাকরাইদ পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার সড়ক সওজের আওতায় এসেছে। এ সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রস্তাবনা রয়েছে। এ সড়কটির উন্নয়ন করার সময় বাঁকাগুলো সোজা করা হবে।

ইউএনও চিত্রা শিকারী বলেন, ওই সড়কটি সোজা করার আগে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড সেঁটে দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদের সভায় প্রস্তাব করা হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads