• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে ১৭ জন নিহত

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাকা তেররশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন-শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাকা তেররশিয়া গ্রামের মৃত সোহবুল হকের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৬০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ডাইলপাড়ার সৈয়ব আলীর ছেলে তোবজুল (৭০), তোবজুলের স্ত্রী জমিলা (৫৮) ছেলে সাদল আলী (৩৫), জামালের মেয়ে লেচন (৫০), রফিকুলের ছেলে বাবলু (২৬), বাদলের ছেলে বাবু (২০) একই উপজেলার সূর্য নারায়ণপুরের ধুলু মিয়ার ছেলে সজীব (২২), সাহালাল বাবুর স্ত্রী মৌসুমী (২৫), কালুর ছেলে আলম (৪৮), মোস্তফার ছেলে পাতু (৪০), চর সূর্য নারায়ণপুরের টিপুর স্ত্রী বেবি (৩২) ফাটা পাড়ার গ্রামের সাদিকুলের স্ত্রী টকি বেগম (৩০), চর বাগডাঙ্গা গোঠাপাড়ার সাত্তারের ছেলে সহবুল (৩০), বাবুডাইং এলাকার মকবুলের ছেলে টিপু সুলতান (৪৫) ও সুন্দরপুর এলাকার সেরাজুলের ছেলে অসিকুল ইসলাম ডাকু (২৪)।

শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ডাইলপাড়া থেকে বরপক্ষের ২০ জন শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে পাকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাকা তেররশিয়া গ্রামের হোসেন আলীর বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ পাকা খেয়াঘাটে নামার সময় বৃষ্টি শুরু হলে তারা ঘাটের নিকট টিনের ঘরে আশ্রয় নেয়। এ সময় বজ্রপাত হলে তাদের মৃত্যু ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সাতটি মরদেহ ও আটজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। ঘটনায় ১৩ জন আহত হন। পরে মরদেহগুলো নৌকায় করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের আলিমনগর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক সাবের আলী প্রামাণিক জানান, ফায়ার সার্ভিস ১৪টি মরদেহ উদ্ধার করেছে এবং বাকি কয়েকজনের লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজন আগেই নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুব আলম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহানসহ কর্মকর্তারা ডাইলপাড়া গ্রামে যান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. নুরুন নাহার জানান, বজ্রপাতে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া একজনকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ১৪ জনের লাশ শনাক্ত করেছি। জেলা হাসপাতালে ভর্তি আছে ১১ জন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছে একজন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছি। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা নিয়েছি।’

চোখের সামনে ডাইলপাড়া গ্রামের মাইদুল ইসলাম (৩৫) দেখেছেন বজ্রপাতে বাবা-মা ও ভাইসহ নিজের পরিবারের সাতজনের মৃত্যু।

মাইদুল ইসলামের ডাইলপাড়া গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, ঘটনার আকস্মিকতায় একটি ঘরে তিনি নির্বাক হয়ে বসে আছেন। প্রতিবেশীরা মৃত্যুর খবর শুনে তার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন। এই গ্রামে একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যু আগে কেউ দেখেনি। স্বজন আর প্রতিবেশীদের কান্না-আহাজারি বাড়িজুড়ে। একে একে যখন সাতটি লাশ নিয়ে আসা হয়, তখন কান্নার শব্দ যেন পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে একে একে খোঁড়া হয় সাতটি কবর।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে জানা যায়, অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন মাইদুল ইসলাম ও তার ১০ বছরের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন। নৌকা থেকে নামতে একটু দেরি হওয়ায় বাবা-মেয়ে ছাউনি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। আর সেই মুহূর্তেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। চোখের পলকে বাবা-মাসহ প্রিয়জনদের মৃত্যু দেখে শোকে নির্বাক হয়ে আছেন মাইদুল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads