• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
দুর্গম চরাঞ্চলে পদ্মায় বিলীন স্বাস্থ্য কেন্দ্র

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

ভাঙনের ঝুঁকিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা

দুর্গম চরাঞ্চলে পদ্মায় বিলীন স্বাস্থ্য কেন্দ্র

  • শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০২১

পদ্মা-যুমনার পানি বৃদ্ধিতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

গত ২৮ আগস্ট (শনিবার) রাত ১১টার দিকে হেলে পরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে হাতিঘাটার জনমনে ভাঙ্গন আতংক বিরাজ করছে। এছাড়াও লেছড়াগঞ্জ ও সুতালড়ীসহ চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, হাট বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক স্থাপনাও ভাঙ্গনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

জানা গেছে, গত চার দিন আগে পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে নদী গর্ভে হেলে পরেছিল আজিমনগর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের দোতলা ভবন। চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি চালু করা হয়। কিন্তু গতকাল (শনিবার) রাতে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বর্তমান নদীর তীরবর্তীতে অবস্থিত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, হাতিঘাটা আশ্রয়ন কেন্দ্র, সোয়াখাড়া আদর্শ গ্রাম, ৫৭নং হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহিমপুর জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা হাতিঘাটা বাজারসহ পাকা আধাপাকা একাধিক রাস্তা। চলতি মাসের গোড়ার দিকে নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে সুতালড়ী ইউনিয়নের ৩৭ নং রামচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনটির একাংশ ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে গত সপ্তাহে সম্পূর্ণ বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ভাঙন আতংকে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

জানা যায়, চরাঞ্চলে আজিমনগরের হাতিঘাটায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠত হয় আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। ওই সময় বিদ্যালয়টি এডিবি'র অর্থায়নে টিনসেটের ১৫টি রুম তৈরির মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের লক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চারতলা ফাউন্ডেশনে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার বরাদ্দে পুনরায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওই একতলার ওপরেই আরও তিনতলা ভবনের অনুমোদন দেয়। নতুন অনুমোদিত ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের কারণে আচমকাই নদী ভাঙন শুরু হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পরে যায়। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর তীর হতে ১৩০ মিটার দূরে রয়েছে।

আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন বিপ্লব জানান,"বিদ্যালয়টিতে চাঞ্চলের ১০টি গ্রামের প্রায় চারশত ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর অতিসন্নিকটে। তাই দ্রুত ভাঙনরোধের ব্যবস্থা না করলে অথবা বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করা না হলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।"

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন জানান, "নদী ভাঙনের বিষয়টি জেনে আমরা সরেজমিনে যাই এবং ভাঙনের অবস্থা দেখে আমরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসক বরাবর বিদ্যালয়টি রক্ষায় নদী ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি প্রদান করেছি।"

এছাড়া, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিয়নের ৭নং ও ৮ নং ওয়ার্ডের হাতিঘাটায় ২টি আশ্রয়ন কেন্দ্র। ৭ নং ওয়ার্ডের হাতিঘাটা পশ্চিমপাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্র ১০০টি পরিবার ও ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার আশ্রয়ন কেন্দ্রে ৯০টি পরিবারসহ মোট ১৯০টি পরিবার বসবাস করে এই দুই আশ্রয়ন কেন্দ্র।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বন্যার পরে ২০০০ সালে তেরদোনা থেকে স্থানান্তর করে হাতিঘাটা আনা হয় এই আশ্রয়ন কেন্দ্র দুটি। বর্তমান নদীর তীরবর্তী থেকে ৪০০ গজ দূরে রয়েছে। ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ১৯০টি পরিবারের প্রায় ১ হাজার মানুষ।

৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম জানান, আজিমনগরসহ পুরো চরাঞ্চলের মানুষই এখন ভাঙন আতংকে রয়েছে। হাসপাতাল তো গেছেই। এরপর স্কুল, আশ্রয়ন কেন্দ্র, হাতিঘাটা বাজার, সোয়াখাড়া আদর্শ গ্রাম সবই এখন ঝুঁকির মধ্যে। তাই নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন মুঠোফোনে সাংবাদিকদেরকে জানান, একে একে সকল স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত রাতে আজিমনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীতে চলে গেছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। এখন তারা কি ব্যবস্থা নেন এটাই দেখার বিষয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বিষয়টি আমাকে জানালে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদেরকে জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ ছাড়াও "গত সপ্তাহে আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের একটা চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্তু ভাঙনরোধে তীব্র স্রোতের কারণে ওখানে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। কিছু করার চেষ্টা করলেও থাকবে না। এখন উপায় যে সকল স্থাপনা রয়েছে, সে গুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে অথবা নিলামে দিতে হবে। তাছাড়া চরাঞ্চল নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করার কোনো নির্দেশনা নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads