বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের প্রভাবশালী কাজী আব্দুল সাত্তার (৫৫) একই উপজেলার পশ্চিম সমরসিংহ গ্রামের একটি সংখ্যালঘু ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ভিটে ছাড়া করে বাড়ি দখল নিতে হামলা-মামলায় হয়রানী করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলা মামলার হয়রানীতে দিশেহারা মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপাল রায় (৬৭) আজ সোমবার গৌরনদী রিপোটার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে করে এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপাল বলেন, জেএল ১০, পশ্চিম সমরসিংহ মৌজার, এসএ খতিয়ান ১৪৩, দাগ নং ১৩৪, ১৪১র ৪৩ শতাংশ জমি আমার দাদা-বাবা বিগত ৮০ বছর যাবত ভোগ করে আসছে। গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের মৃত কাজী ইসমাইলের পুত্র প্রভাবশালী কাজী আব্দুল সাত্তার (৫৫) তার পুত্র গিয়াস উদ্দীন (৩৫) দীর্ঘদিন যাবত আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে ভিটেমাটি দখল নিতে পায়তারা করে আসছে। এমন কি আমাকে বাড়ি ছাড়া করতে কাজী সাত্তার ও তার পুত্র গিয়াস উদ্দীনের নেতৃত্বে আমার বাড়িতে ১০ বার হামলা ও ৭টি মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানী করছে। গত ২৬ আগষ্ট সন্ত্রাসী আব্দুল সাত্তার তার পুত্র গিয়াস উদ্দীনের নেতৃতে ৭/৮ জন সন্ত্রাসী বাড়িতে হামলা করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পরিবারের দুই সদস্যকে মারধর করে। গত ১৭ আগষ্ট বাড়িতে আমি মনষা পূজার আয়োজন করলে বিকেল ৫টায় গিয়াস উদ্দীনের নেতৃত্বে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরে ঢুকে বাড়ির আসবাবপত্র তছনছ করে বাড়ি ছাড়তে হুমকি দিলে চলে যায। হামলার ঘটনায় আমি মামলা করলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। গত ১৫ জুন সন্ত্রাসী সাত্তার ও তার পুত্র সন্ত্রাসী গিয়াস উদ্দীনসহ ১০/১২ জন সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে আমাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্তা জখম করেছে। এ সময় আমার স্ত্রী ননিদতা রানী (৫৬) আমাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকেও বেদম মারধর করেছে। আমাদের ডাক চিৎকারে গ্রামবাসি এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরার পালিয়ে যায়। এ হামলার ঘটনায় পরের দিন (২৬ জুন) আমি গৌরনদী মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে একটি জিডি করে। গত এক বছরে সন্ত্রাসীরা কমপক্ষে ১০বার আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর করে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে নিরারপত্তাহীনতায় ভূগছি। সন্ত্রাসীরা হামলা করেই ক্ষেন্ত হয়নি তারা আমাকে জব্দ করতে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। সম্প্রতি সময়ে আমাকে জব্দ করতে আব্দুস সাত্তার তার এক ভাড়াটে এক সমর্থক মলিনা বেগমকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে ধর্ষন মামলা দায়ের করেছে। এ ছাড়া কাজী আব্দুল সাত্তার আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ৭/৮টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ আব্দুল জলিল ফকির (৫৬) বলেন, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপালকে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানীর কথা স্বীকার করে বলেন, কাজী আব্দুল সাত্তার ও তার পুত্র গিয়াস উদ্দীন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। ভূমিদস্যু কাজী সাত্তার জাল-জালিয়াতি করে এলাকার নিরহ মানুষের সম্পত্তি নিজের দাবি করে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জবর দখল করে আসছে। সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে তার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। জরুরী ভিত্তিতে সন্ত্রাসী ও জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে তিনি দাবি জানান। অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে কাজী আব্দুল সাত্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ক্রয় সূত্রে ওই জমির মালিক আমি । ননী গোপাল বাড়তি সুবিধা নিতে সংখ্যালঘু ধূয়া তুলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে। হামলা-মামলার অভিযোগের সত্যতা নেই।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপাল থানায় অভিযোগ দেয়া পরে প্রতিটি বিষয়য়ে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, মুক্তিযোদ্ধার অসম্মান রাষ্ট্রের অসম্মান। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। খোজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।