• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
সুস্থ ছাত্রলীগ নেতার নামে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী কার্ড 

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

সুস্থ ছাত্রলীগ নেতার নামে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী কার্ড 

  • এস কে সাহেদ, লালমনিরহাট
  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

লালমনিরহাটে সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা তুলেছেন মাইদুল ইসলাম বাবু নামে এক সুস্থ ছাত্রলীগ নেতা। প্রতিবন্ধী কার্ড করে ছাত্রলীগ নেতা মাইদুল প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি চাকরি নেয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তিনি জেলার আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক ‘বাংলাদেশের খবর’ পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় “চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পেটে যাচ্ছে গরিবের ভাতা” এবং গত ১৬ সেপ্টেম্বর “মোবাইল নম্বর পাল্টে ভাতার টাকা আত্মসাত” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগ নেতা মাইদুল ইসলাম বাবুর নামে একটি অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা বই ইস্যু করা হয়। বই নম্বর ৭৯৬। সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখায় তাঁর সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ৫২০১৯০১০১৯৬০৯। ওই বইয়ের বিপরীতে মাইদুল দুই দফায় সর্বমোট ১১ হাজার ২৫০ টাকা উত্তোলন করেছেন।

সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখা সুত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর সেখানে ৯ হাজার টাকা অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে জমা হয়। এই টাকা মাইদুল ওই বছর ২০ অক্টোবর উত্তোলন করেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৫ মার্চ আরও ২ হাজার ২৫০ টাকা জমা হয়। আর এই টাকা তিনি গত ২৩ মার্চ উত্তোলন করেন।

জানা গেছে, ওই উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বসিনটারী গ্রামের নজরুল ইসলামের তিন ছেলের মধ্যে মেজ মাইদুল ইসলাম বাবু। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ২০১৬ সালে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন। ২০১৯ সালে তিনি বিয়ে করেন এবং বর্তমানে তিনি এক কন্যাসন্তানের জনক। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায় যুক্ত মাইদুল গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান। মাইদুল ২০১৫-২০১৭ মেয়াদে আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নতুন করে আর কমিটি না হওয়া তিনি এখনো ওই পদে বহাল আছেন। তবে এ ছাত্রলীগ নেতা সম্পুর্ণ সুস্থ সবল মানুষ। চালান দামি মোটরবাইক। তবুও তিনি অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে সরকারী ভাতা তুলেছেন।

ছাত্রলীগ নেতা মাইদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন। হামলায় ডান হাতের একটা আঙ্গুল বিকালঙ্গ হয়। তখন চিকিৎসকের প্রত্যয়ন নিয়ে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ ফরম ২০১৮ পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। তিনি ভাবেন, রাজনীতি বাদ দিয়ে প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি চাকরি নেয়ার কথা। পরে তার নামে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা হয় এবং সরকারী টাকা গ্রহণ করেন।’

আপনি প্রতিবন্ধী কি না, জবাবে মাইদুল বলেন, তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এসময় তিনি বলেন ‘এটা করা ঠিক হয়নি, টাকাটা ফেরত দিতে চাই।’

এদিকে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ ২০১৮’ এ দেখা যায়, মাইদুল দুর্ঘটনাজনিত শারীরিক মৃদু প্রতিবন্ধী বলে ফরমে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকের প্রত্যয়নে তিনি মাঝারি মাত্রার শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক। প্রত্যয়নটি করেছেন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নূর আরেফিন প্রধান। প্রত্যয়নটি তাঁর স্বাক্ষরের স্থানে ২০২০ সালের ২৩ জুন তারিখ উল্লেখ রয়েছে। একই তারিখে প্রতিবন্ধিতা সংক্রান্ত সরকারি ফরমে স্বাক্ষর করেন আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মন্ডল।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মন্ডল বলেন, মাইদুল ইসলাম বাবু, এখন আর প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন না। এখন ভাতার টাকা বিকাশে দেওয়া হচ্ছে। মাইদুল ইসলাম অনলাইনে নিবন্ধন করেননি। আদিতমারীর ভাদাই ইউনিয়নে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্ত ৯৯০জনের মধ্যে মাইদুল ইসলাম বাবুসহ মোট ৬জন অনলাইনে নিবন্ধন করেননি। তাদের সবার ভাতার বই বর্তমানে ফাঁকা আছে। ছাত্রলীগ নেতাকে কার্ড করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে সময় মাত্র ১৯দিন আগে আমি এই উপজেলায় যোগদান করি। সময় না থাকায় আমি দ্রুত স্বাক্ষর করি।

ছাত্রলীগ নেতাকে প্রতিবন্ধীর প্রত্যায়ন দেয়া চিকিৎসক নূর আরেফিন প্রধান আদিতমারী থেকে বদলি হওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এ ব্যাপারে আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads