• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
যশোরের দুঃখ ভবদহ, পানির নিচে ৫৩ গ্রাম

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

যশোরের দুঃখ ভবদহ, পানির নিচে ৫৩ গ্রাম

  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

শহিদ জয়, যশোর

যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহ অঞ্চলের ৫৩ গ্রাম পানির নিচে। বাড়ির উঠানে হাঁটু জল থেকে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। অনেকের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে পানি। রান্না করার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে ওসব গ্রামবাসী। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার কবরস্থান ও শ্মশানের চিতা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লাশ দাফন নিয়ে বিপাকে পড়েছে এলাকাবাসী।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কিছু অংশ এবং মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ও কুলটিয়া ইউনিয়নের ৫৩ গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ওসব গ্রামের বাড়ির উঠানে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি। গোয়াল ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেকে। রান্না ঘরে পানি ঢোকায় রান্নার সংকটে অনেকে শুকনো খাবার খাচ্ছে। জলাবদ্ধ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এলাকার মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ায় মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান জানান, ইউনিয়নের আট গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- জিয়াডাঙ্গা, মাগুরা, বনগ্রাম, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া, চাপাতলা, উড়োতলা ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম। সুন্দলী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে। সেগুলো হলো- সুন্দলী, ডহর মশিয়াহাটি, ডাঙ্গামশিয়াহাটী, ভাটবিলা, সড়াডাঙ্গা, ফুলেরগাতী, হরিসপুর, গোবিন্দপুর, ধোপাপাড়া, আড়পাড়া, রাজাপুর, রামসরা ও ধোপাদী গ্রাম, চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা, বেদভিটা, বলারাবাদ, আন্দা, চলিশিয়া, কোটা, দিঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গা গ্রাম।

এছাড়া মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখরচন্দ্র রায় জানান, তার ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেগুলো হলো- বাজেকুল্টে, হাটগাছা, সুজতপুর, লখাইডাঙ্গা, কুলটিয়া, মহিষদিয়া, আলীপুর, পুড়াডাঙ্গা, পদ্মনাথপুর, আসীংগাড়ী, পাড়িয়ালী ও ডাঙ্গা মহিষদিয়া গ্রাম।

হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের বিপদ ভঞ্জন মন্ডল জানান, তার ইউনিয়নের আটটি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে। সেগুলো হলো- নেবুগাতী, কুচলিয়া, পাচবাড়িয়া, পাচকাঠিয়া, ফুলবাড়িয়া, কুমোরসিঙ্গা, হরিদাসকাঠি ও বাহিরডাঙ্গা গ্রাম।

জলাবদ্ধ এলাকার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে হাটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি নিয়ে চলছে জীবন জীবিকা, হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে রান্না বান্নার সংকটে পড়েছেন।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, পলি জমে শ্রীহরি নদী ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে এ জলাবদ্ধতা। এলাকার কবরস্থান ও শ্মশান তলিয়ে যাওয়ায়। দাফন করা নিয়ে সংকটে পড়েছে এলাকাবাসী। তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইসগেট বন্ধ করে পাম্প দিয়ে পানি সেচে জনগনকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, পাম্প দিয়ে পানি সেচে জলাবদ্ধতা দূর হবে না। টিআরএমের মাধ্যমে এলাকার নদনদীর নাব্যতা ফেরানো সম্ভব। তিনি বলেন, দ্রুত জোয়ারাধার (টিআরএম) না করলে এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হবে।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ভবদহ এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য সেচপাম্প বসানো আছে। সেগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। আশা করা যায়, পানি দ্রুত নিষ্কাশন হয়ে যাবে। তাছাড়া ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads