ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে চলছে। পুজা মন্ডপগুলোতে লেগেছে উৎসবের আমেজ। মৃতশিল্পীরা প্রতিমা তৈরীতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারিগররা পরম স্নেহে গড়ে তুলছেন কাদামাটির অবয়ব। একে একে সেখানে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার চেহারা। সঙ্গে আছে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও লক্ষ্মী প্রতিমাও।
উপজেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরিতে মাটির সব কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছেন কারিগররা। কোথাও কোথাও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে রং করার। এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ ও রং দিয়ে প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। প্রতিমাগুলোকে পুজামন্ডপে তোলার উপযোগী করতে দিনরাত কাজ করছেন তারা।
কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর প্রতিমা তৈরীর ভালো চাহিদা রয়েছে। গতবারের চাইতে এবছর প্রতিমার উচ্চতা আর সাজসজ্জা ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে তাদের মজুরিও। একসাথে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হওয়ায় তাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। তাছাড়া এখন বৃষ্টি কারণে অনেক সময় তাদের কাজ করতে কষ্ট হয়। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পারিশ্রমিক একটু বেশি। প্রতিমাভেদে ধরা হয়েছে নিচে ৩০ হাজার থেকে উপরে ৭০ হাজার টাকারও বেশি মজুরি।
রাধানগর এলাকার আশীষ সাহা জানায়, তাদের পূজামন্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে ইতিমধ্যে মাটির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন শুরু হবে রঙ তুলির কাজ। এরপরই প্রতিমার পোশাক আর গহনার কাজ। তিনি আরও বলেন, আগামী ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে পূজা। আশা করছি এই সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে আয়োজকদের দাবি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকলে শান্তিপূর্ণ ভাবে এবারের দুর্গাপুজা সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। অবশ্য প্রশাসন বলছেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এ ধর্মীয় উৎসব সম্পন্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। এ বছর পৌর শহরসহ উপজেলায় ২২ টি মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। এদিকে দুর্গাপুজা উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সেই সাথে আয়োজকরাও তাদের পুজা সফলভাবে সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ইতিমধ্যে পুজা উদযাপন কমিটির লোকজন বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে।
তাছাড়া প্রতিটি মন্ডপে দর্শনার্থীদেরকে আনন্দ দিতে পুজা মন্ডপের আশপাশ জুড়ে আলোকসজ্জা করা হবে বলে আয়োজকরা জানায়।
সূত্রে জানা গেছে পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ২২টি সার্বজনীন পুজামন্ডপ অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে পৌর শহরে ১১টি ও উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে ১২টি পুজা মন্ডপ রয়েছে।
পুজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরীর কাজ প্রায় পুরোদমে চলছে। সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা পালনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হবে ।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুর্গাপুজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব । এই উৎসবে কেউ যাতে কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্গাপুজা উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট লোকদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। কোন প্রকার যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে সার্বিক সতর্ক রাখা হবে।