• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভ্যান চালক সুলতানের কষ্টময় জীবনগাঁথা

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

ভ্যান চালক সুলতানের কষ্টময় জীবনগাঁথা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০২১

যে বয়সে ছেলে-মেয়ে আর নাতি-নাতনিদের সাথে আনন্দে দিন কাটানোর কথা সেই বয়সে এসে এখন তিন বেলা খাবার জোটানোর জন্য সকাল বেলা তাকে বের হতে হয় ঠেলাগাড়ি নিয়ে। জীবিকার তাগিদে তাকে দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ভ্যান চালিয়ে যে টাকা আয় হয় তার উপর নির্ভর হয় চুলায় আগুন জ্বালানোর জন্য। বর্তমানে অসুস্থ শরীর থাকায় পরিবার নিয়ে সে পড়েছেন এক মহা সংকটে। একমাত্র ছেলে সংসার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় শেষ বয়সে এসে ঠেলা গাড়ি (ভ্যান) উপর নির্ভর করে দিনানিপাত করতে হচ্ছে। এসব কথা বলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের বড় বাজার এলাকার মো. সুলতান মিয়া (৭০) । পেশায় একজন ঠেলা গাড়ি চালক।

পরিবারে তার স্ত্রী, এক ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তার ৫ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এরপর তার একমাত্র ছেলেকে বিবাহ দেওয়ার কিছু দিনের মাথায় সবাইকে ছেড়ে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। বর্তমানে তিনি খুবই কষ্ট করে দিন পার করছেন। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরে এক টানা পৌর এলাকায় ঠেলা ঠেলে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বর্তমানে বয়সের ভারে চলাফেরা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। অথচ জীবন সায়াহ্নে এসে এখন চিন্তা করতে হচ্ছে তিন বেলা খাবার জোটানোর। সুলতান ও তার স্ত্রীর প্রতিটি দিনই কাটে সীমাহীন এক অনিশ্চয়তায়।

সুলতান আরো বলেন, আমার ৫ মেয়ের মধ্যে একটি ছেলে সন্তান ছিল। তাকে খুবই আদর যত্ন করতাম। নিজে কষ্ট করেছি কিন্তু তাকে কোন কষ্ট তাকে দেয়নি। তার উপর বিশ্বাস ছিল শেষ বয়সে সে তার মা বাবাকে দেখবে। কিন্তু সংসারে সামান্য বিষয়ে ঝগড়া লেগে আমাদের ছেলে চলে যায়। এরপর থেকে সে আমাদেরকে দেখতেও আসেনি। কোন অবস্থায় আছি কি ভাবে চলছি সে কোন খোঁজ খবর নেয়নি। সন্তানের দেওয়া এই কষ্টটা আর তারা ভূলতে পারছেন না। ফলে তারা এই সন্তানের জন্য অকুলপাথার হয়ে আছেন। তাদের এই করুণ দশা দেখে সামান্য টাকা-পয়সা দিয়ে সহায়তা করেছেন এলাকাবাসী। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। কিন্ত তার স্ত্রী কোনো কার্ড নেই। সুলতান বলেন, অসুস্থ থাকায় ভাল করে কাজ করতে পরছি না। ঠেলা নিয়ে ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে তার আধ ঘন্টার উপর লেগে যায়। শ্বাসকষ্টের রোগী হওয়ায় তাকে মাঝ পড়ে জিড়িয়ে নিতে হয়। তাছাড়া স্প্রেসহ অন্যান্য ওষুধ নিয়মিত তার লাগছে। ওষুধ কিনতে মাসে তার অনেক টাকা খরচ হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান বলেন, সুলতান দীর্ঘ অনেক বছর ধরে ঠেলা গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। অসুস্থ হওয়ায় ঠিকমতো কাজ করতে পারছেনা।

উপজেলা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি মো. মুসলেহ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, সুলতান খূবই একজন অসহায় মানুষ। ছেলে সন্তান থেকেও তার যেন নেই। সন্তান হয়ে পিতামাতার দায়িত্বপালন না করা খুবই অন্যায় কাজ। প্রতিটি ধর্মে পিতামাতাসহ বড়দেরকে সম্মান করার কথা বলা হয়েছে। সন্তানের দায়িত্ব, শৈশবে বাবা-মা যেমন সন্তানকে বড় করে, তাদের দেখে রাখে; তেমনি সন্তান বড় হয়ে যেন এবাবেই তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখে। এটি হচ্ছে তাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads