• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
পা কেটে ফেলতে চান অসুস্থ মজিদ

অসুস্থ মজিদের সেবা করছে স্ত্রী

সারা দেশ

পা কেটে ফেলতে চান অসুস্থ মজিদ

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ০৩ অক্টোবর ২০২১

টিনের ছোট্ট ঘরে ভীষন তাপ। ঘরে টিকে থাকা দায়। নিরুপায় হয়ে ঘরের পিছনের ইটের সড়কে মৃদু ছায়ায় পাটি পেতে প্রায় জ্ঞানহীন পড়ে থাকেন সত্তুর বছরের আবদুল মজিদ। লিকলিকে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে বহু দিন ধরেই। নিথর চুপচাপের মধ্যেই আচমকা চিৎকার শুরু করেন বৃদ্ধ আবদুল মজিদ। সে চিৎকারে চারপাশের মানুষ কেঁপে উঠে। এ কান্না চলছে দিনের পর দিন। পায়ে পচন আর দুর্গন্ধ সঙ্গী করেই নিদারুন কষ্টে দিনানিপাত করছেন তিনি। এরই মধ্যে পচনে পোকা ধরেছে সে পায়ে। এখন এক বেলা ওষুধ কেনার সামর্থ নেই তাঁর। কান্না থামাতে বৃদ্ধা স্ত্রী পা থেকে পোকা বের করেন। এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি। আর মানুষ দেখলেই হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন "বাবাগো আমার পাওডা (পা) কাইট্টা দেইন" গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন বাগমারা ছাপড়া মসজিদ এলাকায় নিজ বাড়িতে শুয়ে শুয়ে এমন আর্তনাদ করে যাচ্ছেন আবদুল মজিদ।

স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, পনের বছর আগে এ গ্রামে একটু জমি কিনে একটি টিনের ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন আবদুল মজিদ । তাঁর বাড়ি নান্দাইলের মেরাহনা গ্রামে। তিনি এক সময় পোশাক কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে কাজ করতেন। অসুস্থ হলে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে বাড়িতে বসবাস করেন। কিছু দিন যেতেই হাতে পায়ের চামড়া উঠতে শুরু করে। পরে বিভিন্ন ওষুধ খেলেও কোনো উপকারে আসেনি। কিছু দিন পর পায়ে বড় বড় ঘাঁ দেখা দেয়। আর কিছু দিন যেতেই পচন ধরে সে পায়ে পোকা ধরে ফেলে। এখন পচন আর পোকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এখন এক বেলা ওষুধ খাওয়ার সামর্থ্য নেই এ পরিবারটির। নিদারুন কষ্টে দিনানিপাত করছে তাঁরা। কখনো কখনো না খেয়েই তাদের দিন কাটে।

অসুস্থ আবদুল মজিদ জানান, কোনাবাড়িতে একটি পোশাক কারখানার জিন্সের প্যান্ট তৈরির কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে কাজ করতেন। পরে অসুস্থতা দেখা দিলে তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিছু দিন যেতেই হাত পায়ে ঘাঁ দেখা দেয়। দিন দিন সে ঘাঁ বাড়তে থাকে। এক সময় পায়ের ঘাঁ বাড়তে বাড়তে পচন ধরে গেছে। তিনি জানান, একটি ছেলে তিনটি মেয়ে তাঁর সংসারে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তবে তাঁদের কোনো যত্ন খোঁজ খবর নেয়না। ছেলেটি ছোট্ট। অন্যের দোকানে ৩ হাজার টাকায় চাকরি করে। তিনি কথা বলতে বলতে কান্না শুরু করে দেন। তিনি আতর্নাদ করে বলেন "বাবাগো আমার পাওডা কাইট্টা দেইন"। বিষবেদনায় আর বাঁচিনা। আড়াই তিন বছর ধইরা পোকা ধরা পা নিয়ে বাইচ্চা আছি। বিষবেদনায় আর পারি না।

অসুস্থ মজিদের স্ত্রী বেগম তারা বিবি বুক চাপা কান্না কন্ঠে বলেন একটি পুত হেরে স্কুলে দিছিলাম। কিন্তু টেহার অভাবে পড়া বন্ধ। মাইনসের দোহান(দোকান) কাম করে। তিনার ওষুধই কিন্তারি না বই খাতা কেমনে কিনাম ? এক সময় তিনি হাউমাউ কাঁদতে থাকেন। তিনি বলেন মেয়েরা স্বচ্ছল। আমার ভাইয়েরাও টাকাওয়ালা। কিন্তু আমাদের সংসারে এক কৌটা চাল থাকে না। কখনো খাই কখনো না খেয়ে থাকি তাঁকে (স্বামী) নিয়ে। সারা দিনে বহুবার পচন থেকে পোকা বের করতে হয়। দুর্গন্ধ আর অনটনেই কাটে আমাদের দিন। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন সরকার যদি একটু তাঁর (স্বামীর) চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো তাহলে খেয়ে না খেয়ে তাদের নিয়ে কাটিয়ে দিতাম। স্বামী সন্তান নিয়ে ভিক্ষা করেও চলতে পারতাম। তাঁর সেবার জন্য বাড়ি থেকে বের হতেও পারি না। কোনো কাজ নাই ঘরে খাবার নাই।

শ্রীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাসুদ প্রধান জানান, অসুস্থ বৃদ্ধ পৌরসভাতে এসেছিল। পরে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কিছু অর্থ সহায়তা করেছি। পৌসভার ভবন স্থানান্তরের ব্যস্ততায় অনেক কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানান্তর ব্যস্ততা শেষ হলে পৌরসভার দরিদ্র তহবিল থেকেও তাঁকে সহায়তার আশ্বাস দেন এ জনপ্রতিনিধি।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রনয় ভুষণ বলেন, রোগীর অবস্থা বেশ জটিল। খুব দ্রুত রোগীকে গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। সেখানে এখন অনেক উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। যত দ্রুত ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করা যাবে ততই রোগীর জন্য মঙ্গল হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads