• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

এক পরিবারে ৬ বোন শিক্ষক

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এক পরিবারে ৬ জন শিক্ষক তারা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকতা পেশার প্রতি বিরল ভালোবাসা থাকায় তারা এ আদর্শ পেশাকে আকড়ে ধরে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন । একই পরিবারে ৬ জনই তারা আপন বোন শিক্ষক হওয়ায় ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এমন একটি আদর্শ শিক্ষা পরিবারের সাথে দেখা মিলে পৌর শহরের বড়বাজার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন শ্যামনগর গ্রামে। তারা হলেন শিক্ষক মৌসুমী আক্তার, নার্গিস আক্তার,নাহিদা ইয়াসমিন, দিলরোবা আক্তার, শাম্মি আক্তার, মাহজাবিন মোস্তফা। আর বাকি দুই বোন হলেন নাজনিন আক্তার ও তানজিনা মোস্তফা। এরমধ্যে তানজিনা মোস্তফা সড়ক দুর্ঘনায় ইন্তেকাল করেছেন।

তারা ওই গ্রামের মৃত এটিএম মোস্তফার মেয়ে। তার বাবা আখাউড়া উপজেলা স্বস্থ্যকমপ্লেক্সে চাকরি করতেন। মা একজন গৃহিণী। এটিএম মোস্তফার ৮ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে ৬ জনই শিক্ষক। এরমধ্যে তার ৬ মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলেও বর্তমানে এক মেয়ে দীর্ঘ বছর শিক্ষকতা করার পর শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে বর্তমানে প্রবাসে রয়েছেন। এক মেয়ে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। তাছাড়া ১ ছেলে এএলবিতে অধ্যয়নরত।

পারিবারিক সূত্র থেকে জানা যায়, মৌসুমী আক্তার মাষ্টার্স (গণিত) পাস কারার পর ২০০০ সালে সরাসরি উপজেলার আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। এরআগে তিনি প্রায় ৩ বছর নাছরিন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি পৌর শহরের তারাগন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো অবদান রাখায় শিক্ষা বিষয়ক চীনের বেইজিং এ ৭ দিনের সরকারি সফরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

নাছরিন আক্তার (বি,এস,সি) পাস করার পর ১৯৯৯ সালে উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন।

সাহিদা ইয়াসমিন (বিএ ) পাস করার পর ২০০৩ সনে উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রানীখার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকুরিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি রামধননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছেন।

দিলরুবা আক্তার (বিএ,অনার্স, এমএ) ইংরেজি বিভাগ মাষ্টার্স পাস শেষে ২০০৩ সনে তারাগন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে তার চাকুরি হয়। ২০১০সনে তিনি প্রধান শিক্ষক হয়। এরপর তিনি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে প্রবাসে চলে যায়।

সাম্মী আক্তার (বিএসসি অনার্স এমএসসি) রসায়ন বিভাগ মাষ্টার্স পাস করার পর ২০১০ সনে কুমিল্লা সদরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে যোগ দেন।

মাহজাবিন মোস্তফ (বিএ) পাস করার পর ২০১৭ সালে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার চাকরি হয়।

নাজনিন আক্তার (বিএসএস অনার্স) পাস করার পর উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরি করছেন। তানজিনা মোস্তফা ব্যাংকে চাকুরি করতেন । সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। যারা চাকুরি করছেন তারা সবাই যার যার অবস্থান থেকে স্বামী সংসার ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন।

শিক্ষক মৌসুমী আক্তার বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষকই হলো সমাজ দেশ ও জাতি গঠনের কারিগর। আর আদর্শ শিক্ষকের মেধাশ্রমই জাতির অমূল্য সম্পদ গড়ে উঠে। আর তারা আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে সেই চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন ছোটবেলা থেকেই শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানে মুগ্ধ হতাম। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি শিক্ষক হওয়ায়। নিজেকে সেইভাগে গড়ে তুলে বাস্তবে হয়ে গেলাম। তাছাড়া সব সময় বাবা ও মা আমাদেরকে আদর্শ শিক্ষক ও আদর্শ মানুষ হওয়ার উৎসাহ ও প্রেরণা জুগিয়েছেন। সেই চেষ্টা থেকেই আজ আমার ৬ বোন শিক্ষকতার পেশায় আছেন। তবে একই পরিবারে ৬ বোন শিক্ষক হওয়ায় আমরা সবাই গর্ববোধ করছি। শিক্ষক মৌসুমী আক্তার আরও বলেন, আমরা যা শিখেছি, তা শিক্ষার্থীদের শেখানোর চেষ্টা করছি। শুধু বিদ্যালয়ে পাঠদানই নয় একজন আদর্শ মানুষের চরিত্র গঠনে যা দরকার তা শিক্ষার্থীদেরকে তা শেখানো হচ্ছে। তাই আমাদের কাছে শিক্ষকতা পেশা ভালো লাগে। এ সমাজে শিক্ষকদের তেমন মূল্যায়ন করা না হলেও আমি এ পেশায় থেকে কাজ করায় নিজেকে ধন্য মনে করছি।

মোগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহজাবিন মোস্তফা বলেন, আমাদের ৮ বোন ১ ভাই এর মধ্যে ৬ বোনই শিক্ষক । তাছাড়া আমার ছোট বেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। শিক্ষক হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তিনি আরও বলেন, 'ঈদ ও বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়াও আমরা সবাই প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে পারিবারিক বিষয় সমস্যা-সম্ভাবনা এবং পাঠদান বিষয় নিয়েও নিজেরা আলোচনা করি। এক পরিবারে ৬ বোন শিক্ষক হওয়ায় সত্যি আমাদের কাছে ভালো লাগছে।

আমাদের সবার একটাই কথা- আমরা শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক আদর্শ ও স্বপ্ন ছড়িতে দিতে চেষ্টা করছি এটাই আমাদের বড় পাওয়া।

আখাউড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরজাহান বেগম বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষকই জাতির মেধা গড়ার কারিগর। এক পরিবারে ৬ জন মেধাবী শিক্ষক রয়েছে সত্যি এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয়। তারা আদর্শ শিক্ষদানে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াবে এটা আমরা আশাকরি। কারণ শিক্ষিতরা হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের মেধা আর শ্রমেই জাতির অমূল্য সম্পদ তৈরী হয়। তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আলোকিত শিক্ষকদের শিক্ষা দান ছড়িয়ে পড়ূক দেশের সর্বত্র।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads