• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
কুমিল্লায় বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জমির সংকট

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কুমিল্লায় বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জমির সংকট

  • খায়রুল আহসান মানিক, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ অক্টোবর ২০২১

১৯৮১ সাল থেকে কুমিল্লায় কাজ করছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত মুসলিম বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কাজ করছে সংগঠনটি। লাশ দাফনে তাদের জমি নেই। একই সাথে রয়েছে এতিম শিশুদের দিনি শিক্ষাদান ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম। জরাজীর্ণ একমাত্র ভবনে চলে সব কার্যক্রম। নেই লাশের জন্য হিমাগার ও অ্যাম্বুলেন্স। জাকাত, ফিতরা, মান্নাত, কাফ্ফারা ও সাধারণ দানের টাকায় চলে স্বেচ্ছাসেবী এ সংস্থা। প্রতিষ্ঠার চার দশক পরে নানা সংকটে প্রশাসন ও নাগরিকদের সাহায্য চান কমিটির সদস্যরা।

প্রতিষ্ঠানের সূত্রমতে, ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর ১৯৮১ সালে কুমিল্লায় কার্যক্রম শুরু করে আঞ্জুমান। শিক্ষা, জনকল্যাণ নিয়ে নগরীর টমছমব্রিজ এলাকায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। কুমিল্লা পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত নগরীর টিক্কাচর এলাকায় ২০ শতক জমি বেওয়ারিশ লাশ দাফন শুরু করা হয়। প্রতিষ্ঠা লাভের পর প্রথম ২১ বছর  কত বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে সে হিসাব জানা যায়নি। ২০০২ সাল থেকে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৬ জন মানুষকে বেওয়ারিশ হিসাবে কাফন, দাফন করেছে এ সংস্থা।

সংস্থার হিসাবে ২০০২ সালে ১৩৮, ২০০৩ সালে ১৩৫, ২০০৪ সালে ১৪৩, ২০০৫ সালে ১২৭, ২০০৬ সালে ১৩৩, ২০০৭ সালে ১৫৩, ২০০৮ সালে ১২৭, ২০০৯ সালে ১২০, ২০১০ সালে ১৩৪, ২০১১ সালে ১১৭, ২০১২ সালে ১১৯, ২০১৩ সালে ৯৫, ২০১৪ সালে ১০৮, ২০১৫ সালে ১১৩, ২০১৬ সালে ১৩০, ২০১৭ সালে ১০৫, ২০১৮ সালে ১০৩, ২০১৯ সালে ১০৮, ২০২০ সালে ৭৪ এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৪টিসহ  মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে আরো জানা যায়, বেওয়ারিশ লাশের বেশিরভাগই নারী। সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ আঞ্জুমানকে লাশ হস্তান্তর করেন। যার মধ্যে রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ, মহাসড়ক পুলিশ, কুমিল্লার ১৭ উপজেলার সকল থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ বিভাগ, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার। এসব লাশের বেশিরভাগই গলিত, পচা ও দেহের ছিন্নবিচ্ছিন্ন অংশ।

৩০ বছর ধরে বেওয়ারিশ লাশের কবর খনন করেন মো. মাছুম মিয়া ও আ. হান্নান। তারা জানান, কবর খুঁড়তে গেলে বের হয় মানুষের হাড় ও কঙ্কাল। আলেমদের নির্দেশনা অনুযায়ী, যে পরিমাণ নিচের দিকে মাটি খনন করা প্রয়োজন, তা করা সম্ভব হয় না। একটি কবরের ওপর দেখা যায় ৭-৮টি কবর দেওয়া লাগছে। কবরের ওপর কবর দেওয়ার ফলে যে হাড় পাওয়া যায়, আমরা তা নতুন কবরের সাথে পুঁতে রাখি।

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কুমিল্লার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পাশাপাশি এখানে এতিম শিশুদের দিনি শিক্ষা, থাকা-খাওয়া, পোশাক, চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। শীতবস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ, অসহায় সাধারণ মানুষের জন্য আমরা কাজ করছি। এতিমখানার শিক্ষক, কর্মচারী, কাফন-দাফনে যারা কাজ করেন তাদের নামমাত্র বেতন দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানে আয় বৃদ্ধি হলে তাদের ভালো বেতন দেওয়ার সুযোগ হবে।

সংস্থার কুমিল্লা শাখার সেক্রেটারি কাজী আবুল হাসেম বলেন, আমাদের বড় সংকট হলো বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য কবরস্থান। প্রতিষ্ঠান থেকে জেলা প্রশাসককে একবার চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। নতুন জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি আবার উপস্থাপন করব। যেন পরিচয়হীন মানুষগুলোকে মৃত্যুর পর সম্মানের সাথে শেষ বিদায় দিতে পারি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কুমিল্লা শাখার চেয়ারম্যান আলহাজ মো. ওমর ফারুক জানান, কবরস্থান বর্ধিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বর্তমান এতিমখানা ও অফিসটি বহুতল ভবন করার চিন্তা আছে। কেন্দ্রের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া লাশ সংরক্ষণের হিমাগার, লাশবাহী ফ্রোজেন গাড়ি, একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা আছেন তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা চেষ্টা করব তাদের সহযোগিতা করার।

প্রসঙ্গত, বেওয়রিশ মুসলমানগণের লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে ১৯০৫ সালে ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লের উদ্যোগে কলকাতায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কার্যক্রম শুরু হয়। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে ঢাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কার্যক্রম ঢাকার কাকরাইলে শুরু হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরও এ কার্যক্রম চলমান থাকে। ১৯৮১ সালে কুমিল্লা শাখা চালু হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads