• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
শখের বসে পেঁপে চাষে সাফল্য

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

শখের বসে পেঁপে চাষে সাফল্য

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ শুরু হয়েছে। শখের বসে হাইব্রীড (লালতীর)বাবু জাতের পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের মৃত আলী আজগর মাষ্টারের ছেলে চিকিৎসক মো. আতাউর রহমান। তিনি শখের বসে বাড়ি সংলগ্ন ৩০ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয় বাজারে বাবু জাতের পেঁপে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।

পেঁপে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ফল ও সবজি হিসেবে সর্বমহলে এখন বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো ফলটি। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের চাষ করে অনেকেই নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। এরইমধ্যে আতাউর রহমান পেঁপে চাষ করে এলাকায় বাজিমাত করেন।

গত ২ মাস ধরে চলছে তার পেঁপে বিক্রি। কাঁচা পেঁেপ থেকে পাকা পেঁপেতে ভালো লাভ হওয়ায় তিনি পাকা পেঁপেই বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজারে পাইকারিতে প্রতিকেজি পাকা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গাছে যেভাবে ফলন এসেছে যেন বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষই হচ্ছে না। প্রতিদিন গড়ে ১শ ৫০ কেজির উপর পেঁপে বিক্রি করছেন। এ পযর্ন্ত তিনি প্রায় ২লাখ টাকার উপর পেঁপে বিক্রি করেছে বলে জানায়। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে ৫ লাখ টাকার উপর পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

তার এই উন্নত বাবু জাতের (লালতীর) পেঁপের চোখ ধাঁধানো ফলনে যেন রাজ্যের হাসি ফুটে উঠেছে । পরিবারে সদস্য নিয়মিত পরিচর্যা করছেন।

আতাউর রহমান বলেন, ছোট বেলা থেকেই সবজি চাষের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে তিনি ভালো করে করতে পারেননি। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৌসুম অনুযায়ী বেগুন, শিম, লালশাখসহ অন্যান্য সবজি রীতিমত করে আসছেন।

এবারই তিনি বাণিজ্যিকভাবে সবজির পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ৩০ শতক জায়গার মধ্যে উন্নত জাতের (লালতীর) বাবু পেঁপের ৪০০টি গাছের চারা লাগান তিনি।

জমি তৈরি, চারা, সার, বালাইনাশক, রোপণ, জমি বেড়া দেওয়া আগাছা পরিষ্কার ও শ্রমিমসহ প্রায় ১লাখ টাকার উপর তার খরচ হয়। তবে এরমধ্যে পেঁপের চারায় খরচ হয় ১৫ হাজার টাকার উপর।

চারা রোপণের প্রায় তিন মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে গড়ে ৫০ থেকে ১০০টির উপর করে পেঁপে ধরে। একেকটা পেঁপের ওজন দুই থেকে ৩ কেজি ওজনের রয়েছে।

স্থানীয় বাজারে কাঁচা পেঁপে পাইকারি মূল্যে প্রতি কেজি ১০-১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তাই তিনি কাঁচা পেঁপে বিক্রি না করে পাকা পেঁপে বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি পাইকাররা এসে সকালে তার বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে ১৫০ কেজির উপর পেঁপে বিক্রি হয় বলে জানায়।

আতাউর বলেন কাঁচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপে বিক্রিতে ভালো লাভ হয়। প্রতিকেজি পাকা পেঁপে গড়ে ৫০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এ পযর্ন্ত তিনি ২লাখ টাকার উপর পেঁপে বিক্রি করেছেন বলে জানায়।

তিনি আরও বলেন তার পেঁপে বাগান করার জন্য বহু দিনের শখ ছিল। কিন্তু নানা কারণে এতোদিন তিনি বাগান করতে পারেনি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে পেঁপে চারা লাগিয়ে প্রথমবারেই তিনি এ সফলতা পান।

এদিকে নতুন জাতের পেঁপে চাষ করে এলাকায় সবার দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। প্রতিদিন লোকজন আসছেন পেপে বাগান দেখতে। অনেকেই এখন পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনার করছেন।

আতাউর রহমান আরও বলেন মাকড়সা ও ছত্রাকনাশক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় নি। প্রতিদিনই পেঁপে বিক্রি হচ্ছে। ফলন ভালো রাখতে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই বাগান থেকে ৫ লাখ টাকার উপর পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।

তিনি আর বলেন পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি এ চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে।

পেঁপে বাগান দেখতে মো: শামসুল ইসলাম ও মো. সোহাগ মিয়া বলেন, আতাউর রহমান শুধু একজন চিকিৎসকই নয় তিনি একজন এলাকার আদর্শ কৃষকও। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে বাড়ি সংলগ্ন জায়গার মধ্যে সবজিসহ বিভিন্ন রকমারি ফল চাষ করছেন। তবে প্রথমবারের মতো পেঁপে বাগান করে তিনি বাজিমাত করেছেন। তার বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এখন উৎসাহ পাচ্ছেন পেঁপে চাষ করার। পরিশ্রম ও লক্ষ্য অটুট থাকলে কৃষিকাজে সফল হওয়া সম্ভব তার বাস্তব উদাহরণ আতাউর রহমান ।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বেল্লাল হোসেন বলেন উন্নত লালতীর বাবু জাতের পেঁপেটি নতুন। এতে যেমন পোকার আক্রমণ হয় না তেমনি ফলন ও হয় বেশি। তাই বেকার যুবকরা এই পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে সহজেই। তার সফলতা দেখে অনেকেই এখন আমাদের পরামর্শ নিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, পেঁপে একটি উৎকৃষ্ট সু-স্বাধু ফল, এটি সারা বছরই উৎপাদিত হয়।‘পেঁপেতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কৃষকের জন্য খুবই উপযোগী একটি ফসল, কারণ বার মাসই এ ফসলটি হয়ে থাকে। তিনি বলেন, পুষ্টিকর খাদ্য পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে। পেঁপে চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আতাউর রহমানকে দেখে অনেকেই পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনমতো সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে।’

ৱবেকার যুবকরা যদি পেঁপে চাষে এগিয়ে আসেন তবে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা কৃষি সবসময় প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads