• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

জুঁই বাঁচতে চায়

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০২১

মাত্র নয় বছরের ছোট্ট শিশু তানাজ ইসরাত জুঁই। এই বয়সে যার সহপাঠীদের সাথে স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা করা ও ঘুরে বেড়ানোসহ আনন্দে দিন কাটার কথা। কিন্তু সেই বয়সে বিদ্যালয়ে যাওয়া সহপাঠীদের সাথে আনন্দ আর খেলা করা যেন শেষ হয়ে গছে। বেশিরভাগ সময় কাটছে তার বাড়ির বিছানার মধ্যে। বিদ্যালয় খোলার পর তার অন্যান্য সহপাঠীরা যখন দলবেঁধে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া আর ক্লাসের ফাঁকে মেতে উঠে নানা খুনসুটি আর দুরন্তপনায়। তখন জুঁই তাদের সাথে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শামিল হতে পারে না। অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু দুচোখে ফেল ফেল করে তাকিয়ে দেখছেন সহপাঠীদের ওইসব কিছু। অসুস্থ হওয়ার কারণে একটু পর পর বুকের ব্যথায় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। মেয়ের এমন কষ্টে বুকফাটা আর্তনাদ ছাড়া কিছুই করার নেই তার মা চম্পা বেগমের।

জুঁই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। তার দুই সন্তানের মধ্যে তানাছ ইসরাত জুঁই বড়। সে পৌর শহরের নাছরীন নবী সরকারি প্রাথমীক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী।

প্রাণচঞ্চল ফুটফুটে এই শিশু দুরারোগ্য ব্যাধি হার্টে ছিদ্র হয়ে জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে । তাকে প্রতি মাসে নিয়মিত প্রচুর টাকার ঔষধপত্র দিতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে জুঁইয়ের চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম ।

জুঁই এর বাবা জাহাঙ্গীর আলম পেশায় এলজন রিকশাচালক। আর তার মা চম্পা বেগম বাসা-বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই দরিদ্র পরিবারটি মসজিদপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। অভাব-অনটনে কোনো রকমে সংসার চলে তাদের। জুঁইয়ের হার্টে ছিদ্র ধরা পড়ায় চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন তিন লাখ টাকা। কিন্তু শিশু জুঁইকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের এখন যেন দু:শ্চিন্তার শেষ নেই। তাই দরিদ্র বাবা মায়ের পক্ষে চিকিৎসার এত ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে উঠছে।

জুঁইয়ের পরিবার জানায়, গত ৬-৭ মাস ধরে জুঁইয়ে জ্বর ও বুকে ব্যাথা অনুভব হলে বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসকের দেয়া ঔষধ খাওয়ানো হয় শিশুটিকে। কিন্তু এতে কোন ভালো হওয়ার লক্ষণ বুঝা যায় না। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখায় শিশুটির মা। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে শিশুটির হার্টের ছিদ্র ধরা পরে। বর্তমানে তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। একটু হাঁটাচলা করলেই হাঁপিয়ে ওঠে। তখন বুকে ব্যথা বেড়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেজন্য সে এখন আর বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। এমনকি বুক ব্যথার কারণে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে সে। তার চিকিৎসার জন্য ৩লাখ টাকার প্রয়োজন।

জুঁই জানায়, বুক ব্যথার কারণে তার অনেক কষ্ট হয়। তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না, খেলতেও পারে না। সে সুস্থ হয়ে আবারও স্কুলে যেতে চায়। চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছে সে।

জুঁইয়ের মা চম্পা বেগম বলেন, মেয়েটা ব্যথা-ব্যথা বলে সারাক্ষণ কাঁদতে থাকে। ব্যথা কমানোর জন্য গ্যাসের ওষুধ খাওয়াতাম। কয়েক মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জুঁইয়ের হার্টে ছিদ্র জানিয়ে ওকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট অথবা হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যেতে বলে।

এরপর হৃদরোগ ও হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা বলেন, দ্রুত জুঁইয়ের হার্টের অপারেশন করতে হবে। দিন দিন ওর রোগটা জটিল হচ্ছে। ভারতে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কিন্তু ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো সক্ষমতা নেই জানালে, ডাক্তাররা ঢাকায় অপারেশন করাতে রাজি হন। কিন্তু তার বাবা রিক্সা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। মেয়ের হার্টের চিকিৎসা চালানোর কোন কিছু নেই এই হতভাগ্য বাবার। জুঁইকে নিয়ে বর্তমানে তাদের কাটছে নির্ঘুম রাত। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শিশুটির চিকিৎসায় ব্যয় হবে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা অনেকটাই যেন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কি ভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাবেন এচিন্তায় তারা যেন মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন। শিশুটির চিকিৎসার খরচ জোগাতে সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তশালী মানুষের সহায়তা চেয়েছেন তারা।

শিশুটিকে সাহায্য পাঠানোর জন্য সরাসরি পরিবারের সাথে যোগাযোগ- ০১৭০৩-৫৫২৬৩৬, সোনালী ব্যাংক আখাউড়া শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নাম্বার চম্পা-১৪০১৯০১০২০৬২০।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads