জীবন বাঁচাতে ও বেকারত্বর অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে কেউ করছেন ব্যবসা, কেউ চাকরি, কৃষি, কেউবা খামারসহ ছোট বড় নানা রকমের কাজ। এর মধ্যে কেউ সফল হয়েছেন আবার কেউ হয়নি কিন্তু চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।
জীবনকে সুন্দর ও আনন্দময় করে গড়ে তুলতে দেশীয় পদ্ধতিতে হাঁস এবং মাছ চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন মো. রুবেল আহমেদ। রুবেল দৈনিক দেশ পত্রিকা ও বঙ্গ টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি। হাঁস ও মাছ চাষে বছরে আয় তার ১২ লাখ টাকার উপর। দৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম আর সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে খুব সহজে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তিনি যেন এলাকায় এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
রুবেল বলেন, ছোট থেকেই তার স্বপ্ন ছিল স্বপ্ন ছিল একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। স্বল্প সময়ে তার সেই চেষ্টা যেন সফল হয়েছে। রুবেল উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কুড়িপাইকা গ্রামের মো.শাহজাহান মিয়ার ছেলে। বর্তমানে তিনি পৌর শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় বসবাস করছেন। তার এক ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, স্বল্প পরিসরে ২০১৮ সালে তিনি হাঁস পালন দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি বড় আকারে গড়ে তুলেন হাঁসের খামার। এলাকায় পানির অভাব থাকায় বর্তমানে সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বরিশল গ্রামে এ হাঁসের খামারটি গড়ে তুলা হয়। বর্তমানে তার ওই খামারে রয়েছে বড় আকাড়ের ১৫ শতাধিক হাঁস। দৈনিক ১১শ’এর উপর হাঁস ডিম দিচ্ছে। যা স্থানীয় বাজারে দৈনিক ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়।তাছাড়া রয়েছে পৌর শহরে ৪টি পুকুরও।ইতোমধ্যে দুটি পুকুরে নিজে মাছ চাষ করছেন আর দুটিতে পানি দেখে বিশ্বাসের উপর মাছ কেনে বিক্রি করছেন। প্রথম বছরই হাঁস ও মাছ চাষে তিনি বাজিমাত করেন।
রুবেল আহমেদ বলেন, গত প্রায় ৪ মাস পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় আকাড়ের ১৫শ হাঁস ক্রয় করেন। এক একটি হাঁস প্রায় ৪শ টাকা করে ৫ লাখ টাকার উপর খরচ হয়।
কিছু দিন পালন করার পর খামারে থাকা হাঁস ডিম পাড়া শুরু করে। এক একটি হাঁস ৫-৬ মাস পযর্ন্ত ডিম দেই। ডিম পাড়া শেষ হলে ওই হাঁসগুলো আবার বাজারে বিক্রি করা হয় বলে জানায়।এক একটি হাঁস আবার আড়াইশ থেকে ৩শ টাকার মতো করে বিক্রি করা হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ও যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি মাসে ডিম থেকে আয় হচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। তাছাড়া পুকুর থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয় বলে জানায়।
তার হাঁস খামারে নিজে রাত দিন পরিশ্রম করলেও দেখাশুনার জন্য নিয়মিত ৩ জন শ্রমিক কাজ করছেন। খামারে হাঁেসর ছোট খাট কোন সমস্যা হলে নিজেই সমাধান করে থাকেন। বড় কোন রোগ বালাই হলে তাৎক্ষনিক ভাবে স্থানীয় পশু সম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হন বলে জানান। দৈনিক হাঁসের খাবার ওষধসহ ৪ হাজার টাকার উপর খরচ লাগছে বলে জানায়।
রুবেল আহমেদ বলেন,আজ থেকে ১৩ বছর আগে পরিবারের অভব অনটন দূর তিনি প্রবাসে চলে যান।প্রবাসে থাকা অবস্থায় দেশে কিছু করার চিন্তা ছিল তার। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে বাড়িতে এসে কিছু করতে চেষ্টা শুরু করেন। প্রথমেই বড় হাঁস পালন দিয়ে শুরু হয় তার এ ব্যবসা। আয় ভালো হওয়ায় তার সাহস ও মনের জোর বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে বিশাল খামার গড়ে তুলেন। পাশাপাশি শুরু করেন মাছ চাষ ও পুকুরের পানি ক্রয় করে মাছ বিক্রি।
তিনি বলেন, পুকুরের পানি দেখে আর বিশ্বাসের উপর মাছ কেনা হয়। এক একটি পুকুর ৩-৪ লাখ টাকায় কেনা হয়। তবে এতে ভালো লাভ হয় বলে জানায়।
তিনি বলেন, খাল বিল ও জমিতে পানি থাকলে হাঁস পালন করতে ভালো হয়। পানি উঠা জমিগুলো থেকে ঝিনুক শামুক,ধানসহ বিভিন্ন প্রকারের খাবার খেয়ে থাকে হাঁসগুলো। তাছাড়া গম, কুড়া,ধানসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার দেওয়া হয়। পানি না থাকলে স্থান বদল করা হয়।
তিনি আরও জানান, ছোটবেলা থেকেই হাঁস খামার কারর প্রতি যতেষ্ট ইচ্ছা ছিল। সময় সুযোগ না থাকায় করা সম্ভব হয়নি। হাসঁ খামার করা সহজ কাজ হলে ও এতে অনেক ঝুঁকিও রয়েছে। কারন খামারে মরক লাগতে পারে। তবে সচেতন থাকলে ঝুঁকি এড়িয়ে ভাল মুনাফা করা যায়। তিনি বেকার যুবকদেরকে বলেন হতাশার কিছু নেই। কোন কাজকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সঠিক ভাবে শ্রম দিলে হাঁস পালনের মধ্যদিয়ে বিদেশী টাকার চেয়েও বেশী উপর্জন করা সম্ভব। তাকে অনেকে অনুসরন করে হাঁস খামার গড়ে তুলাই তিনি খুশি।
আখাউড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো.কামাল বাশার বলেন এ উপজেলায় অনেকেই খামার করে হাঁসপালনের মাধ্যমে লাভের মুখ দেখছেন। খামারি ও পালনকারিদেরকে রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।