• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
'নির্বাচন এলে খবর নেয় পরে ভুলে যায়'

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

অবহেলিত নুনাসার ও টানুয়াপাড়া গ্রাম

'নির্বাচন এলে খবর নেয় পরে ভুলে যায়'

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের নুনাসার ও টানুয়াপাড়া এ দুটি গ্রাম দীর্ঘ বছর ধরে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। পৌর শহরের দেবগ্রাম সংলগ্ন এ দুটি গ্রাম অবস্থিত। গ্রামের একাধিক লোকজন জানায়, দুটি গ্রামে ৬ শতাধিকের উপর ভোটার রয়েছে। তবে গ্রামে নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র এমনকি যোগাযোগের সুব্যবস্থা। গ্রামের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবা নিতে যেতে প্রায় ৩ :কিলোমিটার দূরে। সরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যেতে হয় ২ কিলোমিটার দূরে পার্শবর্তী এলাকায়। অবকাঠামো উন্নয়নে এদুটি গ্রাম রয়েছে র্দীঘ বছর ধরে অবহেলিত। একটি গ্রামে যা থাকা দরকার তা না থাকায় বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রামের ছোট বড় সবাই। তাছাড়া রাস্তাঘাটের অভাবে অনেকেই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

গ্রামের লোকজনরা জানায়, প্রতিবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসলেই প্রার্থীদের মনগড়া কথা আর উন্নয়নের ফুলঝুড়ি দিয়ে বুক ভাসান তারা। আবার নির্বাচন চলে গেলে সব কিছু যেন তারা বেমালুম ভূলে গিয়ে কেউ খোঁজ খবর রাখে না । স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখলেও এখনো আমাদের গ্রামের সাধারণ মৌলিক চাহিদার কোন উন্নয়ন হয়নি। প্রতিনিয়ত যেন গ্রামের লোকদের চলাচলে লড়াই করতে হচ্ছে। গ্রামের লোকদের দাবি এলাকার কাঙ্খিত উন্নয়নের দিকে যেন সবাই নজর রাখে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আখাউড়া পৌর শহর থেকে এই গ্রামটি গ্রায় ৩কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

আগামী ২৬ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয়েছে চেয়ারম্যান সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীদের পাড়া মহল্লায় কর্মী সমর্থন নিয়ে সভাসমাবেশ গণসংযোগ। প্রার্থীরা ভোটারদেরকে দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রতিও। পাশাপাশি ভোটারদের কদর ও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা।

এই গ্রামের বাসিন্দা মো. শিপন ভূইয়া বলেন, মোগড়া ইউনিয়নের নুনাসার এবং টানুয়াপাড়া এই দুটি গ্রাম যেন অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই রাস্তাঘাটের উন্নতি। চলাচলের জন্য যে একটা কাচা রাস্তা রয়েছে তা সামান্য বৃষ্টি হলে লোকজন চলাচল করতে পারে না। তিনি আরও বলেন প্রায় ৫০ বছরের উপর ধরে এদুটি গ্রাম অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। প্রতিবার নির্বাচন আসলেই প্রার্থীরা আমাদেরকে উন্নয়নের বাণী শোনালেও নির্বাচনের পর আর কেউ আসে না। রাখে না তাদের কোন খোঁজ খবরও। এবারের নির্বাচনেও প্রার্থীরা আশার ফুলঝুড়ি দিয়ে মন জয়ের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে আমরা ভুল করেছি। এবার আর একই ভুল করব না। দেখে শুনে ভোট দিতে গ্রামের ভোটাররা একাট্টা হয়ে আছেন বলে জানায়।

মোহাম্মদ ভূইয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসায় প্রার্থীরা সবাই এখন আমাদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। শুরু করেছে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথাবার্তাও। দ্রুত কিভাবে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা যায় দিচ্ছেন প্রার্থীরা ওইসব প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু এই নির্বাচনে গ্রামের ভোটাররা রয়েছেন খুবই সচেতন। তারা দেখে শুনে সামনে চলছেন বলে জানায়। রাস্তা ঘাটের অভাবে আমাদের কষ্টের যেন শেষ নেই বলে জানায়।

মো. মুখলেছ মিয়া বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীরা ‘প্রতিবারই আমাদের আশা দিয়ে নিরাশা করে থাকে। নির্বাচন শেষ হলে আমাদেরকে তারা আর চেনে না। আমাদের গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তাঘাটের কেউ উন্নয়ন করে নাই। এই গ্রামে নেই কোন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও। পার্শবর্তী এলাকায় গিয়ে ছেলে মেয়েদেরকে স্কুলে ভর্তি করাতে হয়। চিকিৎসাসহ সব কিছুতেই কষ্টের যেন শেষ নেই আমাদের। তবে কাকে ভোট দিলে কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে এ দিকে তারা হাটছেন বলে জানায়।

মো. কিরণ মিয়া বলেন রাস্তাঘাট ও স্কুল সমস্যার কারণে অন্যত্র জায়গা কিনে বাড়ি তৈরী করতে হয়েছে। নির্বাচন আসলে প্রার্থীরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় কোন কাজ হয় না।

গৃহিনী আলেয়া বেগম বলেন, গত ৩টি নির্বাচন ধরে দেখছি ভালবাসা আর উন্নয়নের কথা বলে ভোট নিয়ে জয় হওয়ার পর আর ফিরেও তাকায় না। এবারও প্রার্থীরা একই প্রতিশ্রুত আমাদেরকে দিয়ে যাচ্ছেন সমানে। তবে এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নিতে ভূল করলে কপাল থেকে কষ্ট দুর করা কঠিন হবে। তাই দেখে শুনে বুঝে ভোট দিতে হবে।

ভোটার মো.নোমান মিয়া বলেন, আমাদের দুইগ্রাম দীর্ঘ বছর ধরে উন্নয়নের কারণে পিছিয়ে রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে দীর্ঘ বছর ধরে আমাদের চলাচলে কষ্টের যেন শেষ নেই। নির্বাচন আসে নির্বাচন চলে যায় কিন্তু এখন পযর্ন্ত একজন জন দরদি একজন জনপ্রতিনিধি না পাওয়ায় আমাদের কষ্টের যেন সীমা নেই। যারা তাদের সুখ দু:খ বুঝবে এবং সব সময় কাছে পাবেন এমন লোককে তারা সেবক হিসাবে দেখতে চান বলে জানায়। তিনি আরও বলেন গ্রামের প্রধান সমস্যা হচ্ছে রাস্তা। নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। অন্যগ্রামে গিয়ে তাদের ছেলে মেয়েদেরকে পড়াশুনা করাতে হচ্ছে। মাটির যে রাস্তাটি রয়েছে তা সামান্য বৃষ্টিতেই গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচল করা যায় না।

মো. ইদ্রীস আলী , মো. আকবর মিয়া বলেন, যারা জনগনের দু:খ কষ্ট বুঝে না এমন লোককে তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন না। আমরা সৎ দক্ষ আদর্শবান লোককে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানাতে চাই।

ইউপি সদস্য মো. আব্দুল আওয়াল সরকার বলেন, নুনাসার এবং টানপাড়া গ্রামের মাটির রাস্তাটি নির্মাণ করতে আবেদন করা আছে। আশা করছি নির্বাচনের পরে দ্রুত নির্মাণ করা যাবে।

বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এই মাটির রাস্তাটি করা যাচ্ছে না। মাটির রাস্তাটি নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ মাননীয় আইন মন্ত্রী বরাবর আবেদন করা আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads