• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মাওনা চৌরাস্তা মানেই মল মূত্রজলে থই থই

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মাওনা চৌরাস্তা মানেই মল মূত্রজলে থই থই

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০২১

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা অত্যন্ত ব্যস্ত একটি উপশহর। এ উপজেলায় পাঁচ শতাধিকের ওপরে ছোট বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। এ শিল্প বিপ্লবের কারণে ঘটেছে অথনৈতিক উন্নয়ন। এভাবে গড়ে উঠেছে ছোট বড় বিভিন্ন ব্যবসার সুযোগ। সেই থেকে এ অঞ্চলে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মানুষের আগমন ঘটেছে । এ এলাকায় চাকরি ও ব্যবসার প্রয়োজনে দেশের সব অঞ্চলের মানুষের কম বেশি মাওনা ঘিরে রয়েছে বসবাস। তবে মাওনাতে উড়াল সেতু উদ্বোধনের পর সে চিত্র পাল্টে গেছে খুব তরিৎ। শিক্ষা স্বাস্থ্য ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসারের কারণে দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এখানে। প্রসার হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যের। কিন্তু সব ভালোর ভিড়ে মাওনা চৌরাস্তার মানুষকে চরম ভোগান্তিতে রেখেছে পঁচা দুর্গন্ধ আর মল মূত্রজল। মাওনা চৌরাস্তায় পা ফেলতেই নাক চেয়ে মল মূত্রজলে পা ভিজিয়ে সড়ক পারি দিয়ে হয়। এই অল্প পানি, ফের জলে থই থই। পৌরসভা বা সড়ক ও জনপদ কেউ এর প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না। এতে ভোগান্তি দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। স্থায়ী কোনো প্রতিকার না হওয়াতে পথচারিরা এ দুর্ভোগ মেনেই নিরুপায় হয়ে এ পথে চলছেন। পথচারি নারী পুরুষ বৃদ্ধ শিশু ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চরম এ ভোগান্তির শিকার। দ্রুত এ ভোগান্তির সুরাহা চায় স্থানীয় বাসিন্দা, অটোরিকশা, সিএনজি চালক পথচারিসহ শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ি ও পথচারিরা জানান, এ শুকনা মৌসুমেও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের অত্যন্ত ব্যস্ততম মাওনা চৌরাস্তায় আশপাশ থেকে সড়কে জমে মল আর মূত্রজলের জলরাশি। এ জলে পা পড়লে গা ঘিন ঘিন করে। সড়কের পুর্ব পশ্চিম হলেই ময়লা জলে পা জড়াতে হয়। এমন স্থানে মল মুত্রজলের অবস্থান যা না মাড়িয়ে রাস্তা পারি দেওয়া অসম্বব। নিরুপায় হয়ে জুতা পা ভিজিয়ে নোংরা মলের জলে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে হয়।

তারা বলেন, কিতাব আলী প্লাজা ও ইয়াকুব আলী মোবাইল মার্কেটের ত্রিকোণ এলাকায় বছরের সব সময়ই আশপাশের বাসা বাড়ির টয়লেট হোটেলের পানি আর মাছের বাজারের পঁচা পানি জমে থাকে। এ সব ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধ ভরা পানিতেই চলতে হয় পথচারিদের।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন দুর্ভোগ দিনের পর দিন চললেও কেউ প্রতিকারে এগিয়ে আসেন না। দিন দিন এ দুর্ভোগ বেরেই চলেছে। আর এ পানির ওপরেই সিএনজি স্ট্যাণ্ড আর বাস স্টপেজ দেয় দিনের পর দিন। যাত্রীরাও বাধ্য হয়েই এ মল মূত্রজলের পানিতে নামতে হয়। এখান থেকে নোংরা পানি পাড়িয়ে বাসেও উঠতে হয়। শিশুসহ শিক্ষার্থীরাও নিরুপায় হয়ে এ জলে পা ভিজিয়ে নোংরা জুতা জামা কাপড়ে স্কুল কলেজে যেতে হয়।

গাজীপুর শাহীন ক্যাডেটে কোচিং করা দুই শিক্ষার্থী জানান, প্রতিদিনই নোংরা জলে জুতা ভিজিয়ে ক্লাশে ঢুকতে হয়। এতে শ্রেণি কক্ষের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে পড়ে। অন্য শিক্ষার্থীরাও নাক ছিটকায় আমাদের মল মূত্রজলে জুতা ভেজা দেখে। তারা আরো জানান, কখনো কখনো জ্যামে আটকা পড়ে এ জলে নাক চেপে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সময় যানবাহনের ছিঠানো দুর্গন্ধময় জলে জামা কাপড়ও ভিজে যায়। অনেক সময় স্কুল বা কোচিংয়ে না গিয়ে বাসাতে চলে যেতে হয়। এ খারাপ জলে পা জুতা জামা ভিজলে গা ঘিন ঘিন করে। এর স্থায়ী প্রতিকার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

সিএনজি চালক আকতার হোসেন জানান, আমরা নিরুপায় হয়েই এ পঁচা জলে অটো সিএনজি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানো নামানোর কাজ করি। বাসও এ পারিতেই যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এতে যাত্রীরাও রাগ করে কিন্তু আমাদের কি করা। তিনি বলেন এ শুকনা মৌসুমে ধুলাবালির বিপরীতে টয়লেটের পানিতে চৌরাস্তা সয়লাব। খুব দুর্গন্ধ ও দেখতে কুৎসিত লাগে। কেউ এর প্রতিকার করেন না। তাই ভোগন্তি চলছেই।

কাপড় ব্যবসায়ি মাসুদ রানা জানান, দিনের পর দিন এমন মল মূত্র মিশ্রিত জল সড়কে গড়িয়ে পড়লেও কোনো প্রতিকার নাই। অনেক সময় মোটর সাইকেল নিয়ে পঁচা জলেই পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। চেয়ে দেখি শরীরে আসে নষ্ট জলের ছিটাফোঁটা। নাক চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

মোবাইল ব্যবসায়ি রুহুল আমীন সরকার জানান, নষ্ট জলের পাশেই চলে ফুটপাতের খাবার পসরা। মশা মাছি এ জলে বসে ফের খাবারে বসে পড়ে। নষ্ট জলের পাশে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ মাওনা চৌরাস্তার জন্য বেশ বেমানান। দ্রুত এর প্রতিকার প্রয়োজন। মানুষ প্রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রসাশনের অব্যবস্থাপনা আর অহযোগীতার জন্য।

মাওনা চৌরাস্তা বণিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম রতন জানান, মাওনাতে এমন অস্বাস্থ্যকর মল আর মূত্রজলে সয়লাব যা খুবই দুর্ভোগের। এ নোংরা জলে দিন দিন পরিবেশ নষ্ট করছে। এ মাওনাতে সরকারি বেরসরকারি মিলিয়ে ত্রিশ পঁত্রিশটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। রয়েছে উন্নত মানের শপিং মল। রয়েছে বহু প্রাইভেট হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গড়ে উঠেছে মোবাইল মার্কেট। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের চলাচল। এখানে চলতে গিয়ে এ মূত্র আর মলের জলে ভিজে মানুষ খুব কষ্ট আর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এ দুর্ভোগের কথা বহুবার পৌর মেয়র, সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তাদের জানোনো হলেও কাজের কাজ কেউ করছে না। সবাই ঠেলাঠেলি করে এটা আমাদের কাজ না অমুকের কাজ তমুকের কাজ। শেষে দুর্ভোগের জায়গাতে দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে। দ্রুত এ দুর্ভোগের সমাধান দাবি করে এ ব্যবসায়ি নেতা।

মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান,এ বিষয়ে একাধিক বার মেয়রসহ দায়িত্বশীলদের অবহিত করা হয়েছে। কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। তিনি বলেন আপনারাও একটু লেখেন যদি কাজ হয়। এমন নোংরা পানিতে পা ভিজলে গোসল না করে কোনো উপায় থাকে না কারো। দ্রুত এ দুর্ভোগের লাঘব হওয়া প্রয়োজন।

শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিছুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমরা আজই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবো। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।

এ বিষেয়ে বক্তব্য জানতে গাজীপুর সড়ক ও জনপদের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনের একাধিকবার ফোন করেও তার কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads