• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

সরিষার হলুদ ফুলে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে দিগন্তজোড়া মাঠ

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সরিষার হলুদ ফুলে যেন রাঙ্গিয়ে দিয়েছে দিগন্তজোড়া মাঠ। যতদুর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ চোখে পড়ে। চারদিকে সরিষার ক্ষেত যেন বাতাসে দুলছে। হলুদ ফুলে ফুলে মৌ মাছিরাও যেন মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙ্গিন স্বপ্ন। সবুজ শ্যামল প্রকৃতি ও ষড় ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে দিয়েছে ফসলের মাঠের চিত্রও। সেইসাথে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে আখাউড়া ও বিজয়নগরের গ্রামের দৃশ্য। সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীন অর্থনীতিতে এক সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। তবে শীত মৌসুমে প্রকৃতির অলঙ্কার হয়ে উঠেছে এই হলুদ সরিষার ক্ষেত। কিছু দিন পরেই মাড়াই করে তৈলের জন্য প্রস্তুত করা হবে এসব সরিষা। প্রতি বছর ফলন ভালো হওয়া ও স্থানীয় কৃষকরা সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় এই দুই উপজেলায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় আখাউড়া ও বিজয়নগর এই দুই উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ৬শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে আখাউড়া উপজেলায় রয়েছে ৩৭৫ হেক্টর ও বিজয়নগর উপজেলায় রয়েছে ২শ হেক্টর জমি। প্রথম দিকে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সরিষার কিছু ক্ষতি হলেও বর্তমানে অবস্থা খুবই ভালো রয়েছে। নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে এক অভাবনীয় সাফল্যের আশায় স্থানীয় কৃষকরা বুকবেঁধে মাঠের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলাতে কৃষিতে সকল ফসলের প্রণোদনার অংশ হিসেবে সরিষা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে সরিষার উফশী জাতের বীজ, ১০কেজি করে ডিএপি ও ১০কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়।

সরেজমিনে বিজয়নগরের চর ইসলামপুর, চান্দুরা, পত্তন আখাউড়া উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ ও ধরখার এলাকায় গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণএলাকাজুড়ে সরিষা ক্ষেত হলুদ ফুলে একাকার হয়ে আছে। স্থানীয় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছর সরিষার ফলন ভাল হওয়ায় বাড়ছে জমির পরিমানও।

এদিকে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত মৌ মাছিরা। মৌ মৌ শব্দে পুরো মাঠ মুখরিত হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশী লাভের আশায় স্থানীয় কৃষকরা আগাম জাতের ও অধিক ফলনশীল এই ফসলের আবাদ করেছেন। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

চরইসলামপুরের কৃষক মো.বাবরু মিয়া বলেন এ মৌসুমে তিনি ১ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সরিষার ক্ষেতের কিছু ক্ষতি হয়। এরপরও ক্ষেতের অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো রয়েছে। সরকার বিনামূল্যে সার বীজসহ অন্যান্য উপাদান দিয়েছেন। ১ বিঘা জমি আবাদ করতে তার প্রায় ২২শ টাকার উপর খরচ হয়েছে বলে জানায়। সরিষার মাঠের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তিনি আশা করছেন লাভবান হবেন।

তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমে সরিষা আবাদ করে খরচ বাদে ৮ হাজার টাকা আয় হয়েছে বলে জানায়।

কৃষক মো. বেলাল হোসেন বলেন, এ মৌসুমে তিনি ১ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেন। বর্তমানে সরিষার ক্ষেতের অবস্থা খুবই ভালো। তিনি বলেন সরিষা আবাদে খরচ কম ফলন বেশী হয়। তাছাড়া উৎপাদন সার কম প্রয়োগ করতে হয়। সেই সাথে সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানির প্রয়োজন হয় না। তিনি আশা করছেন বিঘা প্রতি ৩-৪ মনের উপর সরিষা পাবেন। এক মণ সরিষা বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সরিষা চাষে যে সার আমরা ব্যবহার করি। তা পরবর্তীতে বোরো ধান রোপণের সময় কাজে লাগে। এতে আমাদের খরচ কিছুটা কম হয়।

ধরখার এলাকার কৃষক সিরাজ মিয়া ও ফজলু মিয়া বলেন, এ মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে তারা সরিষার আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকার উপর। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ৩ মন সরিষা পাওয়া যাবে। বাজার দর ভালো থাকায় সরিষা চাষে লাভবান হবেন বলে জানায়। তিনি আরো বলেন সরিষার চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ ও কম খরছে অল্প সময়ে লাভ জনক উৎপাদন করা যায়।

কৃষক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এ মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করা হয়। বৃষ্টিতে কিছু নষ্ট হলেও বর্তমানে সরিষার অবস্থা বেশ ভালো আছে। সরিষার ফুলে ক্ষেত ভরে গেছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফুলে সরিষা আসবে। তিনি আশা করছেন এ মৌসুমে তার জমিতে ৩-৪ মন সরিষা হবে। ফলন ভালো ও বাজারদর ভালো থাকলে এ চাষে তিনি লাভবান হবেন।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বলেন, সরিষা একটি লাভ জনক ফসল। বেশীভাগ ক্ষেত্রে সরিষাচাষ ঝুঁকিমুক্ত। তবে প্রতি বছর সরিষা চাষের আবাদ বাড়ছে। কৃষি অফিস সব সময় ফলন ভালো করতে কৃষকদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান।

তিনি আরও বলেন সরিষা চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বিনামূল্যে বীজ-সার সরবারহসহ সর্বদা নানা রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছেন । তৈল জাতীয় শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরিষা চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads