হাড় কাঁপানো শীতে ও ঘন কুয়াশার কারণে পাবনা জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। গত চার দিন ধরে জেলাজুড়ে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ চরম বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন। শিশু-বয়স্করা শীতজনীত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণ নাজমুল হক জানান, রাজশাহী বিভাগ তথা উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকদিন শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ঈশ্বরদীতে সূর্যের দেখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরো নিচে নেমে যাবে এবং শীতের তীব্রতা বাড়বে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। শীতবস্ত্র ও খাবারের সংকটে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জেলাজুড়ে এক সপ্তাহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তারা। শীতের তীব্রতা ও ঘন কোয়াশায় সকালে কৃষকরা পেঁয়াজ, রসুন ও বিভিন্ন সবজি খেতের জমিতে পরিচর্যা করতে যেতে পারছেন না। যার জন্য পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি পরিচর্যার অভাবে জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা। তাপমাত্রা দিন দিন কমতে থাকায় পাবনা শহরের ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে বাড়ছে শীতবস্ত্রের বিক্রির পরিমাণ। শীত থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে পোশাক কিনছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। গরম কাপড় কেনাবেচা হচ্ছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পাবনা পুরাতন কাপড়ের মার্কেটগুলোতে ও এলাকায় শীতবস্ত্রের বিক্রেতারা বেশি বসেছে। সারাদিনই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকছে। পুরাতন ও নতুন সোয়েটার, জ্যাকেট, শার্ট ও ট্রাউজারসহ কাপড়ের দোকানে গরম কাপড়ের সরবরাহ বাড়ছে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পরিসংখ্যান বিভাগ বলছে, শীতে শিশু-বৃদ্ধরা বেশি ভুগছে। তারা নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস, জ্বর, সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ১০ দিনে অন্তত আট শতাধিক ঠান্ডাজনিত রোগী শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দুই ওয়ার্ড মিলে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি আছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপ লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে জেলা সদর ছাড়াও জেলার অন্য আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু, বয়স্কসহ নানা বয়সি মানুষ ভর্তি হচ্ছেন। আটটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত এক সপ্তাহে অন্তত পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।
২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক কে এম আবু জাফর বলেন, হাসপাতালে শয্যার তুলনায় শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা অত্যাধিক। আর এ ধরনের অবস্থা শীত মৌসুমে হয়ে থাকে। তবে এবার রোগীর সংখ্যা বেশি।
পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, শীতের তীব্রতার সঙ্গে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সরকারিভাবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।