হাচিবুর রহমান, কালিয়া (নড়াইল)
কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বারইপাড়া সেতুর নির্মাণকাজ চার বছর হতে চললেও অগ্রগতি মাত্র ৬৫ ভাগ। এদিকে, চার মাস পূর্বে বালু বোঝাই বাল্কহেডের ধাক্কায় হেলে যাওয়া ৯ নম্বর পিলারের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সওজ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পিলার দেখতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর একটি টেকনিকাল টিম নিয়ে নড়াইলে এসেছিলেন। মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে এবং হেলে যাওয়া পিলারের নকশা সংশোধনের জন্য মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফলে আগামী জুনের মধ্যে সেতু নির্মাণ এবং সেতুর ভবিষ্যৎ নিয়ে সাধারণের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, নড়াইল-কালিয়া সড়কে নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বারইপাড়া ও কালিয়া পৌরসভার পাঁচ কাউনিয়া অংশে জেলার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ নবগঙ্গা নদীর ওপর ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ মেসার্স এমডি জামিল ইকবাল অ্যান্ড মইনুদ্দীন বাশি জেভি ফার্ম বারইপাড়া সেতুর কার্যাদেশ পান। ৬৫১.৮৩ মিটার লম্বা, ১০.২৫ মিটার প্রস্থ, ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যানের এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী ১৯ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন বার সময় বৃদ্ধির পরেও অগ্রগতি মাত্র ৬৫ ভাগ। এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র পাঁচ মাস।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২০ জুন মাসে একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ওই পিলারটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর একটি বালু বোঝাই বাল্কহেড পুনরায় ওই পিলারে আঘাত করলে পিলারটি হেলে যায়। এর আগেও গত দুই বছরে বিভিন্ন সময় বাল্কহেডের ধাক্কায় নির্মাণাধীন কয়েকটি পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া কয়েকটি বাল্কহেড পানিতে ডুবেও গেছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত কালিয়া থানায় পাঁচটি জিডি এবং একটি মামলা হয়েছে।
বারইপাড়া সেতু নির্মাণ কাজের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, হেলে যাওয়া ৯ নম্বর পিলারের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ পর্যন্ত মূল কাজ ও সংযোগ সড়ক মিলে ৬৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। তবে কাজের সময় বৃদ্ধির জন্য আরো এক বছর আবেদনের প্রস্তুতি চলছে।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ বিভাগীয় প্রকৗশলী এ এম আতিকুল্লাহ বলেন, হেলে যাওয়া পিলারটির স্থানে নকশা সংশোধনের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের টিম কাজ করছে। খুব দ্রুতই মিটিংয়ে বিষয়টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংশোধিত নকশা অনুযায়ী ৯ নং পিলারের কাজ হবে। সেতুর পিলার যাতে পরবর্তীতে বাল্কহেড দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সে জন্য সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হবে। সংধোধিত নকশায় ভিন্ন বাজেট থাকবে। এ পর্যন্ত সেতু ও এপ্রোস সড়কের ৬৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশাবাদী আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, নড়াইল শহর থেকে কালিয়া উপজেলা শহরের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার হলেও এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। ‘নবগঙ্গা নদী’ কালিয়া পৌর ও উপজেলার আটটি ইউনিয়নকে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এ সেতুটি চালু হলে নড়াইল-যশোরের সঙ্গে গোপালগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল এবং বাগেরহাট জেলার যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
