• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নরসিংদীতে মানব বন্দনায় মুখরিত বাউল মেলা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

নরসিংদীতে মানব বন্দনায় মুখরিত বাউল মেলা

  • নরসিংদী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নরসিংদী শহরের কাউরিয়াপাড়া এলাকার মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়া ধাম। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ৭শ বছর ধরে মাঘী পুর্নিমা তিথীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাউল মেলা। করোনা বিধি নিষেধের কারণে সাতদিন ব্যাপি মেলা সংক্ষিপ্ত করে তিনদিন করা হয়েছে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভক্তদের উপস্থিতিতে বাউল ঠাকুরের আঁখড়া পরিনত হয় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মাবলম্বীদের মিলনমেলায় । আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির জন্য মেলা থেকে বাউলরা তুলে ধরছেন মানব প্রেমের গান।

বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই মাঘী পূর্ণিমার দিনে শ্রী চৈতন্য দেবের জন্ম তিথী উপলক্ষে এই মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। প্রায় ৭শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলাকে ঘিরে নরসিংদীর কাউরিয়া পাড়া এলাকার মেঘনা নদীর তীরে সমাগম ঘটে হাজারো নারী-পুরুষের। নদীতে চলে পূন্যস্নান। পাশেই রয়েছে বাউল ঠাকুরের আঁখড়া। যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউল কন্ঠসাধকরা এসে বসিয়েছে বাউল গানের আসর। ভক্তরা সারি বেঁধে মহাযজ্ঞানুষ্ঠানে ঘি-প্রদীপ, মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে পুজো দিচ্ছে আর প্রার্থনা করছে পরিবার ও দেশের সকল মানুষের কল্যাণসহ যত ধরনের অশুভ শক্তি, অসাম্প্রদায়িকতা ও করোনা ভাইরাস থেকে নিস্কৃতি পেতে।

গতকাল (বুধবার) দুপুরে বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাউল সাধকরা দলবেঁধে মেলায় যোগ দিয়েছে। আখড়ায় থাকা আট চালা বৈঠক ঘরে চলছে মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েকশত বাউলদের বৈঠক। বাউল সাধকরা এ আসরে বাউল গান গুনিয়েছেন। আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির জন্য এ মেলায় আসেন তাঁরা এবং তুলে ধরেন মানব প্রেমের গান। বৈঠকে আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির গান গাইছিলেন অরুণ বাউল। তিনি বলেন, সকল মানবজীবের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষের বাউল মেলায় সকলে সমবেত হয়। নিজেকে পরিশোধন করার জন্য মানবজীবনে যত গ্লানি আছে তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য বাউল ঠাকুরের মানব তথ্যের আরাধনা করা হয়। আমরা শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের এই মতাদর্শ বংশ পরমপরায় পেয়ে এসেছি। এখানে দেহতত্ত্ব, মহাজনী, মুর্শিদী, ফকিরী, গুরু ভক্তিসহ সকল ধরনের সাধনার গান গাওয়া হয়ে থাকে। এই গানের মাধ্যমে মানব জীবনে যত ভুল ভ্রান্তি আছে তা দূর করে পুণরায় যেনো মানব জীবন প্রাপ্তি লাভ করতে পারি তার জন্য সাধনা করা হয়।

তিশা বাউল বলেন, বৈঠক ও যজ্ঞের মাধ্যমে আমরা প্রার্থনা করতেছি দেশ থেকে যেনো করোনা মহামারী ধূর হয়ে যায়। মানুষ যেনো সত্যে চলে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে যেনো ভ্রাতৃত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে ঠাকুরের কাছে তর জন্য প্রর্থনা করা হয়েছে।

নরসিংদী শহরের পশ্চিমকান্দা পাড়া থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাউল মেলায় এসেছে বিনয় সাহা। তিনি বলেন, সারা বছর এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকি। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে মেলায় আসতাম। এবার নিজের ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছি। মেলায় ধর্মীয় আলোচনা ও গান হয়। যা মনে প্রশান্তি লাগে।

এদিকে বাউল মেলা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বাঙালির চিরচেনা মুখরোচক খাবার ও বাহারি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে আমিত্তি, জিলেপি, সন্দেশ, বারো মিঠাই, দই, মুড়ালি, গুড়ের তৈরি মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের সন্দেশ, কদমা, নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, খাজা, গজা, নিমকি, মনাক্কা, গাজরের হালুয়া, পিঠাসহ রকমারি খাবার। এছাড়া খেলনা, ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন।

বাউল আখড়া বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সাধন বাউল বলেন, জগৎ ব্যাপী মানুষ ও জীবের মঙ্গল কামনায় আমরা মেলায় বাউল ঠাকুরের যজ্ঞ করে থাকি। বাউল মেলায় জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে অংশগ্রহণ করে। তারা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেন। এবার করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাউল মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads