• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

কলমাকান্দায় ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধীর ওপর নির্যাতন

  • কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নেত্রকোণার কলমাকান্দায় ডিভোর্সী এক সন্তানের জননী শ্রবণপ্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রায় দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করায় পাশবিক নির্যাতন শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ওই শ্রবণ প্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা নারী। ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাত করিয়ে আপোষ মীমাংসার চাপ দিচ্ছে ধর্ষণকারীসহ অভিযুক্ত পরিবার। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সচেতন মহল।

স্থানীয় ও ভিকটিম পরিবারিক সুত্রে জানা যায়, ওই শ্রবণ প্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা নারীর আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগে একই উপজেলায় পোগলা ইউনিয়ন কোন এক গ্রামে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয়েছিল। তাদের দাম্পত্য জীবনে ছয় বছরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের ৫ বছর পর ওই দাম্পত্য জীবনের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় ভিকটিমের। এরপর থেকে সে কন্যাসন্তানসহ তার পিতৃলয়ে বাবা-মাসহ ভাই-ভাবীদের সাথে বসবাস করছেন । ওই ভিকটিম দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সম্প্রতি একই গ্রামের দূর সম্পর্কের মামাতো ভাই বিবাহিত দুই সন্তানের জনক ধর্ষণকারী হিসেবে অভিযুক্ত জুয়েল মিয়া (৩০) এর কুনজর পড়ে ভিকটিমের ওপর। সে ওই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের  পুত্র। বাড়িতে আসা যাওয়ার সুবাদে প্রায়শ ভিকটিমকে উত্ত্যক্ত করত সে। সুযোগ বুঝে ইশারা ইঙ্গিতে কুপ্রস্তাব দিতো। এতে রাজি হয়নি ভিকটিম। প্রায় দু'মাস পূর্বে একপর্যায়ে সুকৌশলে ভিকটিমকে একদিন জোরপূর্বক ধর্ষণ করে জুয়েল। এরপর থেকে ফুসলিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন জুয়েল। এক পর্যায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে সে। তার অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি অবগত করলে জুয়েল তা অস্বীকার করে। নিরুপায় হয়ে ভিকটিম গত সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে টানা ৪দিন ধরে গর্ভের সন্তানের পিতৃ-পরিচয় চেয়ে জুয়েলের বসতবাড়িতে অবস্থান নেয়। পরে প্রতিদিন ওই বাড়িতে থাকা জুয়েলের বাবা-মা, বউ, বোন খালাসহ লোকজন ভিকটিমের ওপর অমানুষিক শারিরীক নির্যাতন চালায়। গর্ভের সন্তান যাতে  নষ্ট হয়ে যায় গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর পেটে লাথি ও গলায় চেপে ধরে কিল ঘুষি মারতে মারতে বাড়ীর উঠনে ফেলে রাখে ।

খবর পেয়ে স্থানীয়রা  অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে উদ্ধার করে ওইদিন রাতেই  কলমাকান্দা  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভর্তি করেন।

এবিষয়ে কলমাকান্দা  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৌসুমি করিম মৌরি এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিকটিমের গলাসহ শরীরে  ভিন্ন অংশে আঘাত এর চিহ্ন পাওয়া গেছে। সে সময় ভিকটিম দুমাসের অন্তঃসত্ত্বা কথা জানায় । পরে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমরা। প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে ওই ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বার প্রমানাদি নষ্ট করার জন্যই শারিরীক নির্যাতন করেছিল। তবে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়নি। এখন ভিকটিমের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানান ওই কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এব্যাপারে ভিকটিমের কাছে জানতে চাইলে, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি এর আইনি বিচার চাই। আমার গর্ভের সন্তানকে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখাতে চাই। আর আমি যদি বিচার না পাই তাহলে বিষ খেয়ে মরে যাবো বলছিল ওই শ্রবণ প্রতিবন্ধী ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা নারী।

ভিকটিমের এক সহোদর ভাই জানান, আমরা নিরীহ মানুষ। এখনও পর্যন্ত আমার বোনের ঘটনা আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানা পুলিশকে জানাইছি না।  ধামাচাপা দিয়ে আপোষ মীমাংসা করার জন্য জুয়েলসহ এর পরিবারের লোকজন সমাজিকভাবে চাপ দিচ্ছে। যদি আমরা তাদের কথামতো আপোষে না আসি তাহলে তারা আমাদের ওপর হামলা মামলা করার হুমকি দিচ্ছে । পরে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানির করার উদ্দেশ্যে জুযেল এর বাবা গত শুক্রবার সন্ধ্যার হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা প্রকৃত ন্যায় বিচার দাবি করছি ।

এবিষয়ে ধর্ষণ ঘটনার অভিযুক্ত জুযেল সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার বাবা মোসলেম উদ্দিনের  নিকট জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে   বলেন, আমার ছেলের ওপর ধর্ষণ ও আমাকেসহ পরিবারের লোকজনের ওপর মারপিটের যে অভিযোগ উঠেছে   তা সম্পুর্ন  মিথ্যা। বাম পায়ের গোড়ালিতে আঘাতজনিত কারণে হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছি।

এবিষয়ে কলমাকান্দা ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারি কর্মসূচির তদারকি কর্মকর্তা চ্যামেলী খাতুন জানান ,খবর পেয়ে ভিকটিমকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখেছি। কথা বলেছি। ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা বিষয়টি অশালিসযোগ্য অপরাধ। সামাজিক ভাবে আপোষ মীমাংসার করার কোন সুযোগ নেই। এটি আইনি বিষয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads