• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

ঘুরে না জীবিকার চাকা, থমকে গেল আবুলের জীবন

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০২২

অসহায় দরিদ্র মো: আবুল মিয়া (৬৫)। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে তিনি দীর্ঘ বছর ধরে রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। দৈনিক রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিল তার সংসার। জায়গা জমি না থাকায় বেছে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল তার তিন চাকার যান। তবে রিকশা চালিয়ে দিনানিপাত করলেও তার স্বপ্ন ছিল অনেক। হঠাৎ এক মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী আবুল মিয়ার সব স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন রিকশার প্যাডেল ঘুরানোও। বর্তমানে বেঁচে থাকার অন্য কোন অবলম্বন না থাকায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন হতদরিদ্র আবুল হোসেন। সেই সাথে তার আয় উপার্যন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছেন।

হতদরিদ্র রিকশাচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর বড় কুড়িপাইকা জমদার বাড়ির এলাকার বাসিন্দা। ওই এলাকার শাহজাহান ভূইয়ার বাড়িতে দীর্ঘ বছর ধরে তিনি স্ত্রী এক ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন। নিজস্ব জায়গা জমি বলতে তার কিছুই নেই।

গত প্রায় আড়াই মাস ধরে কিডনি সমস্যা, কিডনিতে পাথর, ডায়াবেটিক,হৃদরোগসহ মরণব্যাধি বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগছেন। ওইসব রোগের চিকিৎসা থাকলেও অর্থের অভাবে ধীরে ধীরে অনেকটাই যেন তিনি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা করলে দ্রুত ওইসব রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ জন্য তাদের অনেক অর্থের প্রয়োজন।

রিকশা চালক আবুল মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় দীর্ঘ বছর ধরে তার স্বামী রিকশার প্যাডেলের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। হঠাৎ করে গত প্রায় আড়াই মাস আগে তার স্বামীর জ্বর উঠে। সেইসাথে ভূমি, শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া, মাথা ঘুরানোসহ নানা সমস্যা তার দেখা দেয়। এরপর স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া হয়। কিন্তু এতে কোন উপকার না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। তার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা। কোন উপায় না পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিতে তাকে ভর্তি করা হয়। ওই ক্লিনিকে প্রায় ১২ দিন থেকে চিকিৎসা নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কিডনিতে পাথর ও কিডনি সমস্য ধরা পড়ে। আছে তার ডায়াবেটিকও। এক পর্যায়ে তিনি ব্রেইন স্ট্রোকও করেন। টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা না করিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কথা বলতে ও খাওয়া-দাওয়া করতেও সমস্যা হচ্ছে। ব্যথা-যন্ত্রণায় ঘুমও হয় না। তার স্বামীকে বাঁচাতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। নেই তাদের সহায় সম্বল নেই কোন আত্মীয় স্বজনও। জরাজীর্ণ ঘরের ছিদ্র টিন দিয়ে ঝকঝকে রোদ এলেও তাদের জীবন ধীরে ধীরে কেবল অন্ধকার ঘিরে ধরছে।

তার স্ত্রী আরও বলেন, গত ৫ মাস পূর্বে ঋনের টাকায় একটি রিকশা কেনা হয়। এখনো শেষ হয়নি ঋনের কিস্তি দেওয়া। এরইমধ্যে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় তার রিকশা চালানোও। রিকশা চালানো ছাড়া নেই অন্য কোন উপার্যনও। অভাব আমাদের চিরসঙ্গী। কেউ কোনোরকম সহযোগিতা করছে না। টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারি না স্বামীর।

বর্তমানে অর্থ সঙ্কটে তার স্বামীর চিকিৎসা ও একপ্রকার বন্ধ হয়ে আছে। কি ভাবে তার স্বামীর চিকিৎসা করাবেন ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন এচিন্তায় তারা মানষিক ভাবে তিনি ভেঙ্গে পড়েছেন। তাই সমাজের দানশলী বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আকুতি জানান পরিবারের লোকজনরা।
এদিকে তার ১ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে ১ ছেলে ১ মেয়ে মাদরাসায়,বড় মেয়ে ৮ম শ্রেণি ও এক মেয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়ছেন। পিতার এই অবস্থায় ছেলে মেয়েদেরও যেন এক প্রকার লেখা পড়া বন্ধের উপক্রম হচ্ছে।

প্রতিবেশী শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আবুল মিয়া একজন সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। মিলেমিশে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন নি। হঠাৎ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবেন কখনো কল্পনাও করিনি।

পল্লী চিকিৎসক ও স্থানীয় বাসিন্দা ডা: শাহজাহান বলেন, আবুল মিয়া একজন সরল মানুষ। চোখের সামনে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। অভাবের সংসার হওয়ায় টাকার কারণে চিকিৎসা ও এক প্রকার বন্ধ হয়ে আছে। মৃত্যুপথযাত্রী এই লোকটিকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসার আহবান জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads