• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় একদরের দোকানে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় রমজানের শুরুতেই জমজমাট হয়ে উঠছে ঈদ বাজার । পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটে তৈরী পোশাক দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। অভিজাত থেকে ফুটপাত সর্বত্রই যেন তিল ধরার ঠাঁই নেই। পরিবারের সদস্য আর স্বজনদের চাহিদা মেটাতে পছন্দের পোশাকের খোঁজে ছুটছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে। তবে একদরের দোকানগুলোতে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা। ওইসব দোকানে মালের গুণগত মানের সাথে দামের কোনো মিল নেই। তারা কাপড়ের গায়ে অতিরিক্ত মূল্য লাগিয়ে দেদারছে মালামাল বিক্রি করছেন। যা বাহিরের অন্যসব দোকানের চেয়ে এসব দোকানে কয়েকগুন বেশী হওয়ায় প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি এক দরের দোকানে ঘুরে ক্রেতাদের সাথে কথা বলে নানা ধরনের চিত্র চিত্র পাওয়া যায়। ওইসব দোকানে শাড়ি, থ্রি-পিস, টু-পিস, প্যান্ট জামা, গেঞ্জি, টি-শার্টসহ বিশেষ করে বাঁচ্চাদের জামাকাপড়ে তারা চড়া দাম বিক্রি করছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। ফলে দরদাম করার চেয়ে একদরের দোকানে গিয়ে ঠকছেন সাধারণ ক্রেতারা।

পোশাকের দাম এতো বেশী কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন মালের গুনগত মান ভালো থাকায় কিছুটা দাম বেশী বলে জানায়।

সরেজমিনে পৌর শহরের সড়ক বাজারে সিটি কর্নার মার্কেট, গোল্ডেন প্লাজা, আলী মার্কেট , চৌধুরী কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় নারী পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। চলছে জমজমাট কেনা বেচা।

প্রতিটি মার্কেটে শোভা পাচ্ছে স্কাট, টপস, থ্রিপিচ,জিন্স পেন্ট, জামদানি শাড়ি, বেনারশি, কাতান, সিল্ক, জর্জেট জয়পুরি, ছেলেদের নবাবী পাঞ্জাবী,শেরওয়ানী, ফতুয়া, টি শার্ট পেন্ট এবং ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য বাহারি ডিজাইনের তৈরী পোশাক। তাছাড়া রয়েছে জামদানি বেনারশি, কাতান, সিল্ক, জর্জেট জয়পুরি শাড়ী ও।

তবে সাতরং , আরাবিয়ান বোখরা হাউজ, বাজার কলকাতাসহ বেশ কয়েকটি এক দরের দোকানে অতিরিক্ত মুল্যে পোশাক তারা বিক্রি করছেন। যেখানে এক দরের দোকান ছাড়া অন্য দোকানে একটি শার্ট ৬শ থেকে ৭শ টাকায় কেনা যায়। সেখানে এক দরেরর দোকান থেকে ১২শ থেকে ১৫শ টাকায় ক্রয় করতে হয়। ছোট বড় সব ধরের কাপড় এক দরের দোকানে দুই থেকে তিন গুন টাকা রাখছেন।

অভিযোগ উঠেছে দেশিয় কাপড়ে ইন্ডিয়ান প্রচার করে এবং বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল, সিনেমা আবার কখনো কখনো নায়ক নায়িকার নামের উপর নামকরণ করে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে।

এসব দোকাগুলোতে ক্রয় করতে আসা একাধিক ক্রেতা জানান, এক দরের দোকানগুলোতে চলছে এক দরের নামে এক প্রকার প্রহসন। পন্যের গুনগত মানের সাথে দামের কোন মিল নেই। বিশেষ করে শিশু ও মেয়েদের পোশাক নিয়ে চলছে যেন নৈরাজ্য। দোকানীরা একদর হাকিয়ে আছে, পছন্দ করলেই গলার কাটা দামে ক্রয় করতে হচ্ছে।

গৃহিনী রুমানা জামান বলেন, তার মেয়ের জন্য জর্জেটের একটি জামা ক্রয় করেন সাতরং থেকে। ওই জামাটার দাম নিয়েছে ৩ হাজার টাকা। অথচ একই গুনগত মানের জর্জেট জামা অন্য মার্কেটে ১হাজার ৩শ টাকা বিক্রি করতে দেখেছেন। তিনি একদরে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলেও জানান।

গৃহিনী রেখা আক্তার বলেন, তার দুই মেয়ের জন্য আরাবিয়ান বোখরা হাউজে এসেছেন ঈদের জামা কেনার জন্য। একটি ফ্রগ ৩ হাজার টাকা ও একটি জর্জেট থ্রি পিচ দাম হাকিয়েছেন ৩হাজার ৫শ টাকা । ফ্রগ ২ হাজার ও থ্রিপিচে ২৫শ টাকা বলা হলেও তারা বিক্রি করেনি। একই কাপড় তিনি অন্য মার্কেট থেকে ৯শটাকা ও ১৩শ টাকায় কেনেন বলে জানায়।

মো: রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে জানান, এক দরের দোকানগুলোতে সাধারণ মানুষের একটি ভরসা ছিল। কিন্তু এখন যেন ওইসব দোকান গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদকে পঁজি করে তারা রাতের আঁধারে মুল্য ট্যাগ পরিবর্তন করে মামামাল অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।

একই পোশাক গত দু’মাস আগেও এক দরের দোকান থেকে ৫শ’ টাকায় কেনা হয়। এখন সেই পোশাক যেন ১৫শ টাকা নিচে কেনা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন একদরের দোকানে চলছে চরম প্রতারণা। পন্যের গুনগত মানের সাথে দামের কোনো মিল নেই। যেনো তেনো কাপড়ের দাম হাকানো হচ্ছে আকাশ চুম্বি।

মো: লিমন মিয়া বলেন, তার স্ত্রী ও মেয়ের জন্য ঈদ কাপড় ক্রয় করতে বাজার কলকাতায় আসেন। একটি লেহেঙ্গা ৫হাজার টাকা দাম হাকিয়েছেন। ৪হাজার টাকা বলা হলে ও তারা সেটি বিক্রি না করায় অবশেষে ৪ হাজার ৭শ টাকায় কেনা হয় বলে জানায়। পরে একই মানের লেহেঙ্গা অন্য মার্কেটে ২৭শ টাকা বিক্রি হয়েছে বলে জানায়।

গৃহিনী পপি আক্তার বলেন, গত ঈদে এক দরের দোকান থেকে কাপড় ক্রয় করে তিনি ঠকেছেন। তাই এবার ছেলে, মেয়ে ও স্বামীর জন্য অন্য মার্কেট থেকে সাজিব মূল্যে কেনা কাটা করেছেন।

আরাবিয়ান বোখরা হাউজের মালিক মাও: এনামুল হক বলেন এই দোকানে শুরু থেকেই একদরে মালামাল বিক্রি হচ্ছে। একদাম লিখে রাখা হয় যাতে করে কাস্টমারদের সাথে বেশি দামাদামি না করতে না হয়। মালামালে খুবই কম দাম লিখা থাকে যাতে ক্রেতারা স্বচ্ছন্দে ক্রয় করতে পারেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, একদরের নামে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম আদায় করার সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে । বাজারে ওই ধরনের কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে ভোক্তা অধিকার আইনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads