• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
কষ্টের মাঝে আনন্দ খুঁজছেন নিন্মআয়ের লোকজন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কষ্টের মাঝে আনন্দ খুঁজছেন নিন্মআয়ের লোকজন

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২২

কেউ সবজি বিক্রেতা, কেউ চা বিক্রেতা, কেউ পান আবার কেউ বা চানাচুর ঝাল মুড়ি বিক্রেতা, আবার কেউ রয়েছেন রিকশা ও ঠেলা গাড়ি চালক। সেইসাথে রয়েছে নানা শ্রেণির নিন্ম আয়ের অসংখ্য লোকজন। সবাই যেন শত কষ্টের মাঝে যার যার অবস্থান থেকে ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ গত দুই বছর করোনায় তাদের ঈদ আনন্দ অনেকটাই মাটি হয়ে যায়। এবার পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা করে তারা যেন অনেকটাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। শত কষ্টের মাঝে ও তারা পরিবার পরিজনকে ঈদ আনন্দ দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। সাধ্যনুযায়ী ওইসব নিন্ম আয়ের লোকজন করছেন ঈদ কেনা কাটা। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায়।

এদিকে ঈদকে সামনে রেখে সর্বত্রই জমে উঠেছে কেনাকাটা । সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ধনীদের পাশাপাশি নিন্ম আয়ের লোকজনরা শত কষ্টের মাঝে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরে ভাল খাবার খেতে, তাদের সন্তানদেরকে নতুন পোশাক পড়িয়ে বেড়ানোসহ ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এদিকে খেটে খাওয়া নিন্মআয়ের মানুষের সাথে ঈদ উপভোগ নিয়ে কথা বলে জানা যায় তাদের আনন্দ উপভোগের নানা কথা।

পৌর শহরের লাল বাজার এলাকায় অটো রিকশা চালক মো: ফজলু মিয়া বলেন, মা, স্ত্রী,২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ তার পরিবারে ৬ জন সদস্য রয়েছে । জায়গা জমি বলতে কিছু না থাকায় রিকশা চালানো আয় দিয়ে চলে তার সংসার। ঈদ প্রস্তুতি কেমন এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন রিকশা চালিয়ে কোন রকম খেয়ে বেঁচে আছি। গত দুই বছর করোনা থাকায় ছেলে মেয়ের আবদার পূরণ করতে না পারায় খুবই খারাপ লেগেছে। তাই এই ঈদে তাদেরকে কিছু কেনে দিতে গত ৩ মাস আগ থেকে টাকা করে জমিয়ে রাখেন। ওই টাকা দিয়ে ছেলেকে শার্ট ও মেয়েকে ফ্রক কেনে দেওয়া হয়। ভাবছি ঈদের আগের দিন মা ও স্ত্রীকে একটি শাড়ি কিনে দেব।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. রনি বলেন, ফুতপাতে তিনি পান সিগারেট বিক্রি করছেন। সীমিত আয়ের সংসারে মা,১ বোনসহ ৪ জন সদস্য রয়েছে। সামনে ঈদ আসছে। সবাই নতুন জামা কাপড় পড়বে। তাই শত কষ্টের মাঝে জমানো টাকায় মার জন্য ১টি শাড়ি কেনা হয়েছে বলে জানায়। দু এক দিনের মধ্যে বোনের জন্য জামা কেনা হবে বলে জানায়।

সবজি বিক্রেতা মো.শান্তি মিয়া বলেন, ফুটপাতে সবজি বিক্রির আয়ে চলে তার সংসার। পরিবারে স্ত্রী ও ১ মেয়ে রয়েছে। নিজস্ব কোন জায়গা না থাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। ঈদে কি কেনা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এমনিতেই সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তবে ঈদ বলে কথা। এই ঈদে মেয়েকে ফুটপাত থেকে একটি জামা কিনে দেওয়া হয়েছে। মনে চায় এই ঈদে পরিবারের সবাইকে কিছু দিতে। কিন্তু ইচ্ছে করলেই অর্থের অভাবে তা আর পারছিন।

চানাচুর বিক্রেতা আলাল হোসেন বলেন, শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে চানাচুর বিক্রি করছেন। খরচ বাদে দৈনিক ৩ থেকে ৪ শত টাকার আয় হয়। এ ছাড়া তার নিদিষ্ট আর কোন আয়ের উৎস নেই। সীমিত আয় থাকায় ছেলে মেয়ের আবদার সব সময় রাখতে পারি না। ঈদে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে গত ২ মাস আগ থেকে কিছু কিছু করে টাকা জমা করে রাখছেন। ওই জমানো টাকা দিয়ে ছেলের জন্য শার্ট ও মেয়ের জন্য ফ্রগ কেনেছেন । তবে ঈদের আগে স্ত্রীর জন্য শাড়ি ও নিজের জন্য একটি লুঙ্গী কেনা হবে বলে জানায়।

ঝালমুড়ি বিক্রেতা রিফাত মিয়া বলেন, রমজান মাস থাকায় তার বিক্রি অনেক কমে গেছে। এরপরও ভালোই চলছে। ভাড়া বাড়িতে মা ছেলে তারা দুই জন থাকেন। গত দুই বছর করোনা থাকায় আয় রোজি ছিল না। তাই ঈদ কেনা কাটা করা হয়নি। এই ঈদে মার জন্য একটি শাড়ি কেনা হয়েছে। নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি কেনেছেন। তাছাড়া দু এক দিনের মধ্যে অন্যান্য বাজার করা হবে বলে জানায়।

হোটেলে কর্মরত কাজল মিয়ার ছেলে রিফাত বলেন, গত ঈদে নতুন জামা কেনা হয়নি তার। কারণ তখন তার বাবার কোন কাজকর্ম ছিল না। ঈদে সবাই নতুন কাপড় পড়েছে ঘুরাঘুরি করেছে তার খুবই খারাপ লেগেছে বলে জানায়। তবে এই ঈদে নতুন কাপড় পেয়ে সে খুবই খুশি বলে জানায়।

এদিকে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ঈদ পোশাক আর সেমাই কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন নিন্ম ও মধ্য আয়ের লোকজন। মাহে রমজানের শেষে আনন্দের ঈদকে বরণ করার জন্য ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবারই আগ্রহ উৎসাহের কমতি থাকে না। তবে স্বল্প আয়ের লোকদের মনে নানা দুশ্চিন্তা থাকলে কষ্টের মাঝে তারা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে সাধ্যনুযায়ী চেষ্ট করছেন পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads