• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিপদে উপকারের বার্তা বন্ধু ‘৯৯৯’

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

বিপদে উপকারের বার্তা বন্ধু ‘৯৯৯’

  • মো. এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
  • প্রকাশিত ২৪ মে ২০২২

মানুষ যখন বিপদে পড়ে, তখন কোন কিছু কাজ করে না। আর তখন কাজ করে মনে রাখা কিছু ফোন নাম্বার। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার-৯৯৯। এ নাম্বারে ফোন পেয়ে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের একটি পুকুরপাড় থেকে গ্রেনেডটি উদ্ধার করা হয়। ঘাঁস কাটতে গিয়ে শহিদ নামের এক ব্যক্তি গ্রেনেডটি দেখতে পেয়ে ৯৯৯-পেয়ে ফোন করেন। এরআগে ৯৯৯-এ সংবাদের প্রেক্ষিতে মানসিক প্রতিবন্ধি ছেলে রবিউলকে খুঁজে পেল তাঁর পিতা। একই নাম্বারে ফোন পেয়ে ছিনতাই হওয়া ২২ হাজার ৫৩০টি মুরগির ডিম উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ এ ঘটনায় ছিনতাই হওয়া ট্রাকসহ জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৩ এপ্রিল নবগ্রামে আবদুল গফুরের বাড়িতে আগুনের খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ৯৯৯-এ ফোনের মাধ্যমে ভিন্ন রকম চারটি কাজের ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়েছে। ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে শত শত মানুষ। চৌদ্দগ্রামের মতো বাংলাদেশের সব জেলা ও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে প্রতি মুহুর্তে উপকৃত হচ্ছে।

জানা গেছে, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, কেনিয়া, কাতার, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, মালেয়েশিয়া, হংকং, পোলান্ড, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েসহ অনেক দেশেই ৯৯৯ শটকোর্ডে জরুরী সেবা সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াতে ‘০০০’, নিউজিল্যান্ডে ‘১১১’, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘১১২’, কানাডা ও আমেরিকায় ‘৯১১’ শটকোড দিয়ে জরুরি সেবা সার্ভিস চালু রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আবদুল গণি রোডে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এখান থেকে শুধু পুলিশ নয়, জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায়। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ এই সেবার জন্য ফোন করতে পারেন। ৯৯৯-এ ফোন করতে কোন খরচ নেই। বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে পরিচালিত এ কল সেন্টারটিতে প্রথম বারের মতো বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর জরুরি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০০ কল-টেকার এজেন্ট, ১৯ জন ডিসপ্যাচার ও ৮ জন সুপারভাইজার দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়। দৈনিক তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় প্রশাসনের সহায়তায় ৯৯৯-এর ব্যবহার, প্রচার ও কমিউনিটি সেফটি অ্যাওয়ারনেস কর্মশালা সম্পন্ন ও কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি মানুষ ‘৯৯৯’ এর ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করেছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ‘৯৯৯’ সার্ভিসের জন্য বিশাল তথ্য ভাণ্ডারের মোবাইল অ্যাপস ও ওয়েবসাইট রয়েছে। যা ব্যবহার করে জরুরী মুহুর্তে সহযোগিতা দেওয়া হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদফতর দ্বারা পরিচালিত কল সেন্টারগুলোতে সরাসরি কল করা যায়। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর ও লোকেশন ম্যাপও রয়েছে-এই অ্যাপস ও ওয়েব সাইটে। যে কেউ নিজের লোকেশনের তথ্য দিলে এই ফিচারটিতে নিকটবর্তী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও লোকেশনের ম্যাপ প্রদর্শিত হবে।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-তে কর্মরত একজন নারী পুলিশ মঙ্গলবার জানান, ৯৯৯ নম্বরে কেউ ফোন করলে সমস্যার ধরন, নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জেনে ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেমন কেউ পুলিশের সেবার জন্য ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে ফোনে ওই ব্যক্তিকে কথা বলিয়ে (টেলি কনফারেন্স) সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য সেবাগুলো হলো; কাউকে আটকে রাখা, লিফটে আটকে পড়া, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা, দুর্ঘটনা, অগ্নিকান্ডের ঘটনা, পারিবারিক সমস্যা, শব্দদূষণ, অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত রোগী পারাপার, প্রাণনাশের আশঙ্কা, ধর্ষণ-সংক্রান্ত ঘটনা, গৃহকর্মী নির্যাতন, ছিনতাইসহ নানা বিপদ থেকে উদ্ধারে মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে মুঠোফোন থেকে ৯৯৯-এ বিনা পয়সায় ফোন করতে পারেন। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এই সেবা। প্রয়োজন অনুসারে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়া হয়।

এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে দেশের সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছেছে সরকারি পরিসেবা; কৃষি কল সেন্টার, নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, স্বাস্থ্য বাতায়ন, ঢাকা ওয়াসা, দুর্নীতি দমন কমিশন, মেরী স্টোপস্ জন্মদান সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা, চাইল্ড হেলপ লাইন, সরকারি আইন সেবা, জাতীয় পরিচয়পত্র, বিটিআরসি, প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার, শিশু সহায়তা কেন্দ্রের সেবা।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘৯৯৯-এর মাধ্যমে ফোন পেয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসন সাধারণ মানুষের বিপদে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনা ও পারিবারিক বিরোধে সংঘর্ষের ঘটনায় তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনার কারণে মানুষ হতাহতের সংখ্যা কমেছে’।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সড়ক দুঘটনায় আহতদের উদ্ধার শেষে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসে। বর্তমান সরকারের সময়ে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে কম সময়ে জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ নাম্বারটি দেশের সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নাম্বারটিতে ফোন করলেই পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস খুব সহজে পাওয়া যায়। ফলে সেবা গ্রহণে মানুষের সময়, খরচ ও হয়রানী কমেছে’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads