• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
মানিকগঞ্জে হারবাল চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা!

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

মানিকগঞ্জে হারবাল চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা!

  • নুরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ
  • প্রকাশিত ০৫ জুন ২০২২

মানিকগঞ্জে হারবাল ও ইউনানী চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা। একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি, হাকিম, কবিরাজ ও ডাক্তার সর্ব রোগের চিকিৎসক সেজে দীর্ঘদিন থেকেই সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছে। সব রোগের মহা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে চেম্বার খুলে প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান হারবাল ও কলিকাতা হারবাল নামের এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান।

ইন্ডিয়ান ও কলিকাতা হারবালের চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে ভেষজ ওষুধের নামে নকল ও ভেজাল ওষুধ সেবন করে মানুষ আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক রোগ সারাতে গিয়ে তারা নানা জটিল ও কঠিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু হাজার অভিযোগ সত্তেও মানুষকে প্রতারণা করা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইন্ডিয়ান ও কলিকাতা হারবাল ভেষজ ওষুধের নামে অসাধু তথাকথিত চিকিৎসক চিকিৎসা সেবার নাম করে ব্যবসার দোকান জমিয়েছে।

জানা গেছে, ইন্ডিয়ান হারবাল চিকিৎসার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। স্টেরয়েড জাতীয় ক্যামিকেল ব্যবহার করা ওষুধ দিয়ে চিকন স্বাস্থ্যকে মোটা করা হয়। এসব ওষুধ সেবন করলে পরে রোগীর খাওয়ার রুচি বেড়ে যায় অনেক বেশি। সাথে সাথে মোটা হয়ে যায়। এর কারণ মানুষ যখন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করে তখন তার শরীরে পানি জমে শরীর ফুলে যায়, এর পরিণতি ভয়াবহ হয়। জন্য দেশের অ্যালোপ্যাথিক জগতের অনেক বড় মাপের ডাক্তাররাও পারতপক্ষে কোনো রোগীকে স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ দেন না। কিন্তু এসব তথাকথিত চিকিৎসক স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে তারা তাদের তৈরি ওষুধে হরহামেশাই এই ওষুধ ব্যবহার করছে। যা খেয়ে মানুষ মৃত্যুর পথে ধাবিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চিপাসরু গলির ভিতরে চকচকে চেম্বার খুলে হারবাল চিকিৎসার নামে গ্রামগঞ্জের সহজ সরল রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে কতিপয় নামধারী কবিরাজ চিকিৎসকরা। এসব চিকিৎস চেম্বারে বসে কঠিন জটিল রোগের ছাড়পত্র দিচ্ছে।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার জান্না গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ইন্ডিয়ান হারবালের বিজ্ঞাপণ দেখে আমি যৌন সমস্যার কারণে ওই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে যাই। ওখানকার ডাক্তার আমাকে কিছু ট্যাবলেট এবং সিরাপ খেতে দেন। সেই ওষুধ খেয়ে আমার শরীরে একটু পানি পানি ভাব দেখা দেয়। ওনাদের লোভনীয় বিজ্ঞাপণ দেখে আমি নিজেই প্রতারণার শিকার হয়েছি।

ঘিওর উপজেলার পয়লা গ্রামের মামুন বলেন,আমি দীর্ঘদিন যাবত সোরিয়াসিস রোগে ভুগছি। আমি হঠাৎ তাদের একটা বিজ্ঞাপন দেখে ইন্ডিয়া হারবাল চিকিৎসালয়ে যাই। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক শরীফুল আমাকে হামর্দদ কোম্পানীর কারমিনা ট্যাবলেট ও সাথী সিরাপ খেতে পরামর্শ দেন এবং আবাক মলম ব্যবহার করতে বলেন। তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনে বলা হয় ইন্ডিয়া হারবাল দ্বারা চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু আমাকে ইন্ডিয়া হারবালের কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এরা সাধারণ রোগীদেও সাথে প্রতারণা করছে। এবং আমি নিজে ও প্রতারণার শিকার হয়েছি।

ইন্ডিয়ান হারবাল চিকিৎসা চেম্বারের কর্মরত চিকিৎসক মো: শরিফুল বলেন, আমি হারবাল চিকিৎসক। আমি আয়ুবেদিকের উপর হাকিমি পাশ করেছি। আমার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আছে। ঢাকা হেড অফিসের অনুমতি ছাড়া দিতে পারবো না। আপনার ভিজিটিং কার্ড দেন, হেড অফিস চেয়েছে।

কলিকাতা হারবাল মেডিকেয়ারের ম্যানেজার ফাহিম বলেন, আমাদের ডাক্তার ছুটিতে আছেন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমাদেও প্রতিষ্ঠানে কিছু দিন ভ্যাট অফিসের লোকজন আসছিল ।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাক্তার মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, যদি এসব প্রতিষ্ঠানে বৈধ কাগজ পত্র থাকে তাহলে চিকিৎসা দিতে সমস্যা নেই। যে সকল চিকিৎসক আছেন তাদের যদি প্রাতিষ্ঠানিক সনদ না থাকে সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্বে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে। তাহার তাদের নামের আগে ডাক্তার শব্দটি লিখতে পারবে না। আপনি সঠিক তথ্য দেন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads