• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
আখাউড়ায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন, দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

আখাউড়ায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন, দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ১১ জুন ২০২২

এখন চলছে মধু মাস। আম, জাম লিচু, আনারসের পাশাপাশি কাঁঠালের চলছে ভরা মৌসুমও। গ্রীষ্মকালের এ মধু ফলের মাসে অন্যান্য সব খাবারের থেকেও কাঁঠাল ফলই যেন মানুষকে বেশি রসনা তৃপ্ত করছে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল। এখানকার মন কাড়ানো লোভনীয় কাঁঠাল ফলের মৌ-মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা। বিকিকিনিতেও বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। তবে এখানে বিদেশি জাতের চাইতে দেশীয় জাতের কাঁঠাল চাষ হচ্ছে বেশী। এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি রসালো ও স্বাধে গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে সারা দেশে। এরমধ্যে ক্রেতাদের সব চেয়ে বেশী পছন্দে রয়েছে মাঝারি সাইজের চাউলা কাঁঠাল। একাধিক কৃষকরা জানায় এখানকার কাঁঠাল বাজারজাত করতে কোন প্রকার রাসায়নিক ক্যামিকেল দেওয়া হয় না।

এখন কাঁঠালের ভরা মৌসুম হওয়ায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা। দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। এ মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৭০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কাঁঠাল ফলন ভালো রাখতে সার্বিক ভাবে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। স্থানীয় চাষিরা জানায়, নিজেদের প্রচেষ্টা আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এ চাষ করে আসছেন।

নানা প্রতিকুলতার মধ্যে স্থানীয় চাষিরা এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে কাঁঠাল চাষ করে অর্থনীতি উন্নয়নে যতেষ্ট ভূমিকা রাখছে। তাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে সরবরাহ করছেন।

সরেজমিনে পৌর শহরের সড়ক বাজার গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের গৃহস্থরা ভ্যান, ঠেলাগাড়ি বা অটোরিকশায় করে কাঁঠাল বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে এসেছেন । এখন কাঁঠালের ভরা মৌসুম হওয়ায় স্থানীয় বাজারে খুচরা ও পাইকারিভাবে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। প্রতিদিন সড়ক বাজার, আজমপুর, দুর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি হাটে গড়ে কাঁঠাল বিক্রি করছেন চাষিরা। গড়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে বলে স্থানীয় চাষিরা জানায়। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় পাইকাররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে করে নিয়ে যাচ্ছেন।

এখানে প্রতিটি বড় সাইজের কাঁঠাল ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের কাঁঠাল ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং ছোট কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছে মাঝারি সাইজের কাঁঠালের কদর রয়েছে সবচাইতে বেশী। বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কাঁঠাল মালিকরা।

সূত্র জানায়, এ উপজেলার আজমপুর, রামধননগর, চানপুর, দুর্গাপুর, খারকোট, মিনারকোট, নিলাখাতসহ অন্ত:ত ৩০টি গ্রামে কাঁঠাল চাষ হচ্ছে। ওইসব গ্রাম গুলোর মধ্যে খালি জায়গা, পুকুর পাড়, রাস্তায় ধার ও বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে অসংখ্য কাঁঠাল গাছ। প্রতিটি গাছের গোঁড়া থেকে আগা পযর্ন্ত শোভা পাচ্ছে পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ জাতীয় ফল কাঁঠাল। এক একটি গাছে নিচে ১৫- ৬০টির উপরে কাঁঠাল ধরেছে। এ উপজেলাকে যেন এক প্রকার প্রকৃতি দিয়ে যেন সাজানো হয়েছে ।

কাঁঠাল গ্রীস্ম মৌসুমের একটি জনপ্রিয় ফল। ছোট বড় সবাই কাঁঠাল খেতে পছন্দ করে। কাঁঠাল পাকা খাওয়ার পাশাপাশি মানুষের কাছে এই প্রিয় ফল ও তরকারী হিসাবে যুগ যুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে। কাঁঠালের বীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। কাচা ও পাকা কাঁঠালের বিচির সাথে মাংস ও সবজির সাথে রান্না করা যায়। তাছাড়া কাঁঠালের ছাল গবাদিপশুর উন্নত মানের গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

চিকিৎসকদের মতে কাঁঠালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-সি ,ভিটামিন-বি, ভিটামিন ই- ক্যালসিয়াম ফলিক এসিড রয়েছে । টাটকা ফলে পটাশিয়াম ম্যাগনোশিয়াম এবং আয়রনের একটি ভাল উৎস। তাছাড়া পটাশিয়াম হার্টের গতি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। পাকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আঁশ রয়েছে। ফলে পাঁকা কাঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

উপজেলার মনিয়ন্দ গ্রামের চাষি মো. মিজান মিয়া বলেন, তার ৪০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার তার গাছে ভালই কাঁঠাল এসেছে। মাঝারি সাইজের কাঁঠাল বিক্রিতে চাহিদা বেশী রয়েছে। তার কাঁঠাল মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানায়।

কৃষক মো. আব্দুর রহিম মৃধা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তার পুকুরপাড় ও বাড়ির আশপাশে অন্ত:ত ৬০ টি ছোট বড় কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এক একটি গাছে নিচে ৩০ থেকে ৭০টি কাঁঠাল ধরেছে। কাঁঠাল পাকাতে কোন প্রকার ক্যামিকেল দেওয়া হয় না। বেশীভাগ কাঁঠাল পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। বড় কাঁঠালের চাহিদা কম থাকায় মাঝারি আকার হলেই বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন গত বছরের চাইতে এবার কাঁঠাল তুলনামূলক কিছু কম আসলেও বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল নিচে ৫০ টাকা এবং উপরে ১৫০শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ পযর্ন্ত তিনি ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন বলে জানায়

চাষি মো: লিয়াকত মিয়া বলেন, গত প্রায় ২০ বছর ধরে তাদের কাঁঠাল বাগান রয়েছে। নিজে পরিচর্যাসহ স্থানীয় বাজারে তিনি নিজেই বিক্রি করে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ পিচ কাঁঠাল বিক্রি করছেন বলে জানায়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হবে বলে জানায়।

কাঁঠাল বেপারী স্বপন মিয়া ও তাজু মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন এখানকার কাঁঠাল বিক্রিতে ভালো লাভ হওয়ায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তারা এ মৌসুমি ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন সপ্তাহে ৩ দিন এখান থেকে কাাঁঠাল কেনা হয়। তারা জানায়, ক্রেতাদের বেশী চাহিদা রয়েছে মাঝারি সাইজের কাঁঠালে। তাই নিজেরা দেখে মাঝারি সাইজের বেশী কাঁঠাল কেনেন বলে জানায়। এক একটি কাঁঠাল ৫০ থেকে উপরে ৮০ টাকা দরে কেনা হয়।

ক্রেতা মো: মহসিন মিয়া বলেন, তার পরিবারে ৭ জন সদস্য রয়েছে। তাই তিনি একটি মাঝারি সাইজের কাঁঠাল কেনেন। কারণ এই সাইজের কাঁঠাল হলে নষ্ট হয় না। এক সঙ্গে মিলে মিশে খেয়ে শেষ করা যায়।

কাঁঠাল ব্যবসায়ী মো. মুসা মিয়া জানান, মো: মুছা মিয়া বলেন, বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ে ১০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। সবকটি গাছে ভালো কাঁঠাল এসেছে। পাশাপাশি তিনি এ মৌসুমে অন্য জায়গা থেকে কাঁঠাল কিনে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এখানে কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন পাইকাররা এসে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঁঠাল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন দৈনিক ৩০-৪০টি কাঁঠাল তিনি বিক্রি করছেন। তবে বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এ উপজেলা কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই উপযোগি। এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি ও রসালু হওয়ায় কদরও রয়েছে ভাল। এ মৌসুমে প্রায় ৮০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। এই ফল উৎপাদনে বাগান মালিকদের তেমন খরচ নেই বলে চলে। ফলন ভালো করতে সার্বিকভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads