অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছেন জেলার সদর উপজেলা, বিজয়নগর, নাসিরনগর, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার।
এদের মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছেন। পানিবন্দি হওয়ায় কাজে বের হতে পারছেন না। যারা এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, তারা আছেন কিস্তি আতংকে।
বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘরেই হাঁটু পানি জমেছে। পানির কারণে ঘরের ফ্লোরের মাটি কাদা হয়ে গেছে। ফলে কাদার কারণে ঘরের ভেতর ঠিকমতো হাঁটাচলা করা যাচ্ছে না। অনেকে পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েদের স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে পানিবন্দি ঘরে রয়ে গেছেন জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ভয়ে।
সদর উপজেলার সীতানগর গ্রামের বাসিন্দা কমলা ঋষি জানান, তার ঘরে হাঁটু পানি জমেছে। ছেলে-মেয়েদের আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন স্বামীকে নিয়ে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন গত কয়েবদিন ধরে। ঘরের জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে যাননি।
রায়মোহন ঋষি নামে আরেক বাসিন্দা জানান, তিনি স্থানীয় একটি বাজারে শ্রমিকের কাজ করেন। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় নিয়মিত কাজে যেতে পারছেন না। এর ফলে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কোনো রকম খেয়ে-না খেয়ে দিন পারছেন বলে জানান তিনি।
শ্রীমতি ঋষি নামে এক গৃহবধূ জানান, তার ঘরের চারপাশে পানি উঠেছে। স্বামী ঠিকমতো কাজে যেতে পারছেন না। ফলে এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
এদিকে, পাহাড়ি ঢলের পানিতে এখন পর্যন্ত জেলার ১১০৪টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। যার মূল্য ৫ কোটি ১০ লাখ টাকারও বেশি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম জানান, হঠাৎ করে এমনভাবে পানি বেড়ে গেছে- যে চাষীরা মাছগুলো রক্ষার জন্য কিছু করতে পারেনি। মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগীতায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।