• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯
পথশিশুদের খাবার দেন সাথী আক্তার

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

পথশিশুদের খাবার দেন সাথী আক্তার

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৮ জুলাই ২০২২

রাত ৮টা, ভাসমান পথশিশুরা কেউ ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ বা শুয়ে পড়েছে, আবার কেউ অনাহারে বসে আছেন। দিনের বেশীভাগ সময় তারা ছুটাছুটি করে ব্যস্ত থাকলেও রাতে যে যে ভাবে পারছেন খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে পড়ছেন। ওইসব ভাসমান পথশিশুদের মাঝে রাতে এক বেলা রান্না করা খাবার নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সাথী আক্তার নামে এক নারী। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন ও সড়ক বাজার এলাকায়। গত প্রায় ২০ দিন ধরে নিজ দায়িত্বে ভাসমান পথশিশুদেরকে ঘরের রান্না করা খাবার তিনি নিজ হাতে তাদের মাঝে বিতরণ করছেন। ইতোমধ্যে তিনি ভাসমান পথশিশুসহ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকায় এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রতিনিয়ত দৈনিক রাতে তিনি সাধ্যনুযায়ী ৩০-৩৫ পথশিশুদেরকে খাবার দিয়ে আসছেন। তার রান্না করা ওইসব খাবারের মধ্যে কোন সময় সবজি, মাছ কিংবা মাংস থাকে। প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় নানা শ্রেণি পেশার লোকজন তার এ কাজে সহযোগিতা করছেন।

পাশাপাশি তিনি পথ শিশুদের মাঝে প্রাথমিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ও প্রাণপন চেষ্টা করছেন। সাথী আক্তার কসবা উপজেলার মো: সোহেল ভূইয়ার স্ত্রী। বর্তমানে তিনি আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগর এলাকায় বসবাস করছেন।

স্বল্প সময়ে তিনি পথশিশুদের কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ছোট বড় সবাই তাকে আপা বলে ডাকেন। নিজ সন্তানের ন্যায় পথ শিশুদেরকে দেখায় তিনি এখন তাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন এবং স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

সাথী আক্তার বলেন, ছোট বেলা থেকেই অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা তৈরী হয়। ছাত্র জীবনে ও নানা সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে অসহায়দের কল্যাণে কাজ করেছেন। বিয়ে সংসার হলেও এ কাজ থেকে পিছিয়ে পড়েননি। গত দুই বছর ধরে নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে তিনি নিরলস ভাবে পথশিশুসহ সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণে এ কাজ করে আসছেন। তাছাড়া গত মাসে তিনি সাথী ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেন। ওই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বর্তমানে তিনি এ কাজ করছেন। দেশ ও প্রবাসীরা নানা ভাবে তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন।

সাথী আক্তার বলেন, প্রথমে এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৭ জন পথশিশুর মাঝে খাবার দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। বর্তমানে রাতে দৈনিক ৩০-৩৫ জন পথশিশুর মাঝে তিনি খাবার দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন যখন দেখি শিশুদেরকে মানুষ অবহেলা করছে তখন খুবই খারাপ লাগে। শিশুদেরকে ভালোবাসলে বিপদে আপদে তাদের পাশে থাকলে এবং ভালো ব্যবহার করলে তাদের দ্বারা ভালো কিছু করা সম্ভব। তাদেরকে কিভাবে অক্ষর জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া যায় সে পরিকল্পনাও তার রয়েছে বলে জানায়।

ইতোমধ্যে তিনি এতিম শিশুদের জন্য একটি মহিলা মাদরাসা স্থাপন করেছেন। তাছাড়া সমাজের অবহেলিত অসহায় নারী পুরুষদেরকে তিনি নানা ভাবে সহযোগিতা করছেন। প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে এলাকার গরিব, রিকশা ভ্যান চালক, অসহায় পথশিশুদের মাঝে সেমাই, দুধ, চিনি জামা, নগদ অর্থসহ নানা ভাবে সহযোগিতা করছেন।

সাথী আক্তার আরো বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন ইনশায়াল্লাহ এ কাজগুলো ধারাবাহিক ভাবে করে যাবো। সব সময় যেন ভাসমান শিশুসহ সকল অসহায় মানুষের কল্যাণে পাশে থাকতে পারেন এ জন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।

মরিয়ম বলেন, আমাদের থাকার কোন জায়গা নেই। স্টেশনে কিংবা খোলা জায়গায় সন্তান নিয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় সন্তানকে রাতে কিছু খেতে দিতে পারি না । এখন আর যাই হউক রাতে খাবার নিয়ে কোন চিন্তা নেই। শিশু হুসাইন বলেন, আগে রাতে না খেয়ে থাকতাম । এখন ভাত খেতে পারায় খুবই ভালো লাগছে। সাইমা বলেন, সন্ধ্যা হলেই চেয়ে থাকি কখন খাবার নিয়ে আসবে। এই খাবার খেয়ে তারপর ঘুমাই। এখানে অনেক দিন ধরে আছি। কেউ কোন দিন খবর নেইনি। সাথী আপা সময় খবর রাখেন। আমাদের পাশে আছেন। যখন কোন সমস্যা হয় তিনি চেষ্টা করেন সহযোগিতা করতে।

খাবার বিতরণ কালে উপস্থিত থাকা মাও: রাসেল আহমেদ বলেন, পথশিশুসহ অসহায় মানুষের কল্যাণে সহযোগিতা করে তিনি মানবনার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আসলে মানুষ হলেই চলে না মানুষকে ভালোবাসতে হয়। দুর্দিনে পাশে থাকতে হয়। সাথী আক্তার হলো তার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত।

মো. নিজাম মিয়া বলেন, মানব কল্যানে পথশিশুসহ অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সত্যি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা সবাই যদি অসহায় মানুষদের কল্যানে কাজ করি তাহলে তাদের কষ্ট থাকবে না।

সাথী আক্তারের স্বামী মো. সোহেল ভূঁইয়া বলেন, তার স্ত্রী যে ভাবে পথশিশুসহ অসহায় মানুষের কল্যানে কাজ করছেন এতে তিনি খুবই গর্বিত। অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করা আসলেই এটি একটি মহৎ কাজ। তিনি দেশ ও বিদেশে থাকা লোকদেরকে এ কাজে পাশে থেকে সহযোগিতা করতে আহবান জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads