• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪২৯
এক চুলায় দৈনিক ২০ মণ চালের খাবার রান্না

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

আখাউড়ায় শাহপীর কল্লা শহীদ (রহ:) বার্ষিক ওরশ শুরু

এক চুলায় দৈনিক ২০ মণ চালের খাবার রান্না

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া খড়মপুরে অবস্থিত দেশ বরেণ্য প্রখ্যাত ওলী হযরত সৈয়দ আহমদ গেছুদারাজ কল্লা শহীদ (রহ:) সপ্তাহব্যাপী ওরশ মোবারক চলছে। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে আগামী ১৬ আগস্ট।

ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে হাজার হাজার ভক্ত খড়মপুর এলাকায় সমবেত হয়েছেন। এখানে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় টানা ৭ দিন ওরস উপলক্ষে আগত ভক্ত আশেকানদেরকে দুপুরে এক বেলা খাবার বা তারারক বিতরণ হচ্ছে। এ জন্য দৈনিক  রান্না করা হচ্ছে নিচে ২০ মণ চালের খাবার বা তেহারি। চালের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ডাল আর মাংস।

তবে খাবার রান্না করতে এক চুলায় একসাথে বসানো হয় ৩০টি ডেকচি। মাজারের নিজস্ব  রয়েছে  ৪৩ টি ডেকচি। রান্না করতে বাবুর্চি রয়েছে ১৫ জন আর সহকারি আর মসলার কাজে নিয়োজিত নারী সদস্যসহ আছে অন্তত ৩০-৩৫ জন। পাশাপাশি আছে কসাই আর সেচ্ছাসেবক। স্বেচ্ছাসেবীরা তাবারক বিতরণসহ নানা কাজে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে রয়েছে চাকরিজীবী,ব্যবসায়ী, ছাত্র, যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন । তা সৃশৃঙ্খলভাবে এ দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে শেষ রাতে গরু মহিষ জবেহর মধ্যদিয়ে শুরু হয় তাদের কর্মযজ্ঞ। এ ব্যতিক্রমী খাবার আয়োজন আগত ভক্ত আশেকানদের নজর কাড়ছে। মাজার পরিচালনা কমিটি এ আয়োজন করছেন। লোক সমাগমের উপর নির্ভর করে চালের পরিমাণ কমবেশি হয়ে থাকে।

রান্নার কাজ শেষ হয় দিনের দুপুর ১২টার ভিতরে। এরপর রান্না করা খাবারের ডেকচিগুলো একটি ঘরে নিয়ে চাটায়ের মধ্যে রাখা হয়। তারপর জোহর নামাজ শেষে ভক্ত আশেকানদের মাঝে এক এক করে বিতরণ করা হয়। রান্নার কাজের নিয়োজিত লোকজনের অক্লান্তিক পরিশ্রমে এ সুস্বাদু খাবার হয়ে থাকে। ওই খাবার খেতে ভক্ত আশেকানরা অধির আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন।

রান্না করা খাবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ গরু জবাই করে মাংস বানাচ্ছে, কেউ চাউল মেপে ধুয়ে পাকের জন্য প্রস্তুত করছেন, কেউবা মসলা কুটে দিচ্ছেন। আবার কেউ বা চুলাই রান্না করছেন। সংশ্লিষ্টরা সবাই যেন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এদিকে করোনার কারণে গত দুই বছর বার্ষিক ওরশ মোবারকে ভক্ত আশেকানরা আসতে না পাড়ায় এবার ওরশে লোকসমাগম রয়েছে চোখে পড়ার মতো। দুপুরের পর থেকেই যেন মাজারসহ আশপাশে তিল ধরার ঠাই নেই।

মাজার পরিচালনা কমিটির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওরশ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে হাজার হাজার ভক্ত আশেকানদের আগমন ঘটছে।  ইতিমধ্যে মাজার ও তার আশপাশ লোক লোকারণ্য পরিণত হয়েছে। ওরশ চলাকালিন সময় প্রতিদিনের ন্যায় মাজার জিয়ারত,কোরআন খানি, হালকায়ে জিকির, বয়ান, মোনাজাত ও তাবারক বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানায়। 

মাজারের প্রধান বাবুর্চি মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি নিরলস ভাবে রান্নার কাজ করছেন। কল্লা বাবার ভক্ত আশেকানের খেদমতের কাজ ছাড়া তার কিছুই ভালো লাগে না। ওরশ ছাড়া অন্য সময় দৈনিক দুপুর ও রাতে দুবেলা  খাবার রান্না করা হয়। খাবারে রয়েছে ভাত আর মাংস সবজি এক সাথে। প্রতি বেলা ৪ শতাধিকের উপর লোক খাবার খাওয়ানো হয়। এ কাজে মোট ৩ জন বাবুর্চি ও ৬ জন সহকারি এবং ৬-৭ জন নারী সদস্য রয়েছে। তবে ওরশ উপলক্ষে লোক সমাগম বেশী হওয়ায় এ জন্য ১৫ জন বাবুর্চি সহকারি আর মসলার কাজে নিয়োজিত নারী সদস্যসহ অন্ত:ত ৩০-৩৫ জন সদস্য রয়েছে। তিনি আরো বলেন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভে আশায় এবং কল্লা বাবার ভক্তদের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত বলে মনে করেন। তিনি বলেন আমার কোন চাওয়া-পাওয়া নেই, মাজারের খেদমতে রান্নার কাজ করেই আনন্দ পাই। এখানে অগনিত ভক্ত আশেকানদের  ভালোবাসায় আমার খুবই ভালো লাগে মনটা প্রফুল্ল থাকে। তাই যতদিন মাটির উপর আছি ততোদিন এই ওলীর মাজারে এ কাজ করে যেতে চাই।

বাবুর্চি মো: এমদাদ বলেন, এক টানা ১০ বছরের উপর এই মাজারে রান্না করার কাজ করছেন। রান্নার মাধ্যমে বক্তদের সেবা করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। যতদিন হায়াতে বেচে আছি ততদিন কেল্লা বাবার ভক্ত আশেকানদের মুখে রান্না করা খবার তুলে দিতে চাই। এখানে প্রতিটা দিন উৎসব মুখর পরিবেশ থাকায় কাজ করতে ভালো লাগে।

মাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য মো: রোস্তম কামরান খাদেম বলেন, টানা ২০ বছরের উপর দায়িত্ব নিয়ে এই মাজারে তিনি কাজ করছেন। ওরশ ছাড়া প্রতিদিন এখানে অনেক ভক্ত আশেকান এখানে আসছেন। তাদেরকে দুবেলা খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া ওরশ উপলক্ষে এখানে ভক্ত আশেকানের মিলন মেলায় পরিণত হয়। আর এই ওরশ শরীফে ১ বেলা খাবার আয়োজন মাজার পরিচালনা কমিটির তত্বাবধানেই থাকে। ওরশে মাজারের ভিতরের অংশে এবং আস্তানায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লোক থাকে। তাছাড়া বাহির অংশে এবং নৌকাতে ২০ হাজারের উপর লোকজন থাকে। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদেরকে আমরা খাবার বা তাবারক দিয়ে থাকি। আগত ভক্তদের খেদমত করতে পেরে খুবই ভালো লাগে।

সিলেট থেকে আসা মো: আশেকুর রহমান বলেন, বছরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি কখন ওরশ হবে। গত দুই বছর আসতে না পেরে খুবই খারাপ লাগছে। তাই এবার ৩ দিন আগে এখানে আসা। এখানের খাবার পবিত্র নিয়ামক হিসেবেই গ্রহন করে থাকি। খাবার যে সুস্বাদ তা কোথাও মেলা ভার।

ভৈরব থেকে আসা মো: আলফাজ উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর ওরশ উপলক্ষে খড়মপুর আসা হয়।  ভাবছি আখেরী মোনাজাত শেষ করে বাড়িতে যাব। তিনি আরো বলেন এখানের তারারক খুবই উপকারী। তাই তাবারক খাওয়া হচ্ছে।

মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: রফিকুল ইসলাম খাদেম (মিন্টু) বলেন, ওরশ উপলক্ষে ভক্ত আশেকানদের খেদমতে এক চুলাই ৪৩ টি ডেকছিতে খাবার রান্না হয়। লোকসমাগমের পরিমান বাড়লে অন্য জায়গা থেকে ডেকছি এনে ও রান্না করা হয়। আমাদের এখানে নিয়মিত বাবুর্চি রয়েছে। পাশাপাশি ওরশ উপলক্ষে বাহির থেকেও আনা হয়। ভক্তদের যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয় সেজন্য কমিটি,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোজনরা সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads