• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রিকেট

শ্রমিক থেকে ফাস্ট বোলার

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০১৮

ঢাকা থেকে ৪০ কিমি দক্ষিণে সালাউদ্দিন শাকিলের নিবাস। বেড়ে ওঠেন মুন্সীগঞ্জের পল্লী অঞ্চলের ছায়াঘেরা সবুজের মায়ায়। তার কৈশোরটা কেটেছে গ্রামের আনাচে-কানাচে আর দশটা ছেলের মতো ঘোরাঘুরি করে। টেপড-টেনিস-বল ক্রিকেট খেলে বিনি সুতায় বুনতেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু দারিদ্র্যের কশাঘাতে সেই স্বপ্নের কথা ভুলে যেতে বাধ্য হন শাকিল। ২০০৬ সালে বন্ধুরা যখন এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখন ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন তিনি। বেছে নেন কষ্টকর প্রবাসী শ্রমজীবন।

দুবাই পৌঁছতেই জীবনযুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হন শাকিল। কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক প্রবাসী শ্রমজীবনে পড়েন আটকা। প্রায় প্রতিদিন ভোর ৪টায় কাজের জন্য বের হতেন। প্রবাসে টানা চার বছর তার জীবন চলেছে এই রীতিতেই। পলিথিন ব্যাগে ভাত নিয়ে যেতেন কাজে। প্লেটে ভাত খাওয়ার সুযোগ পাননি কখনোই। কারণ দুবাই শহরতলির মরুভূমির ঝড়ো হওয়া উড়িয়ে নিয়ে যেত থালার ভাত। মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রায় পচে যেত তরকারি। ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও ১৪-১৬ ঘণ্টা কাজ করে যেতে হতো। এই কষ্টকর জীবন থেকে বেরিয়ে আসাটা মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু তারপরও আল্লাহর কাছে শাকিল বেদনাবিধুর জীবন থেকে মুক্তির জন্য ফরিয়াদ করতেন সব সময়।

চার বছর পর ভিসার মেয়াদ শেষ হলে শাকিল ছুটিতে বাংলাদেশে আসেন। ছুটিটা ছিল এক ধরনের পালানোর মতো। কোম্পানি মালিকদের গ্রাস থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক প্রবাসী শ্রমিকই যেমনটা লড়াই করেন। দুবাই থাকাকালীন চার বছরে ব্যাট বা বল কখনোই স্পর্শ করেননি। নাড়ির টানে মুন্সীগঞ্জে ফিরে প্রবাসী শাকিল ফের টেপড-টেনিস-বল ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। খেলতে খেলতে মনের মধ্যে লুপ্ত থাকা পুরনো স্বপ্নটা পুনরায় উঁকি দিয়ে ওঠে। স্বপ্ন সত্যি করতে ২০১২ সালের প্রথম দিকে এক বন্ধুর হাত ধরে কোচ গোলাম রসুলের দ্বারস্থ হন শাকিল। এই ক্রিকেট গুরুর অধীনে নারায়ণগঞ্জে কয়েক মাস দৌড় অনুশীলন সেশন শেষে ঢাকা লিগের তৃতীয় বিভাগে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন শাকিল। তার জীবন বদলে যাওয়ার সময় তখনই শুরু। দ্বিতীয় ডিভিশন হয়ে গত সপ্তাহে সেন্ট্রাল জোনের হয়ে সম্পন্ন হলো বাঁহাতি পেস বোলার শাকিলের ফার্স্ট ক্লাস অভিষেক।

রাজশাহীর কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে বিসিএলের সেন্ট্রাল জোনের সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলন শেষে পুরনো স্মৃতিগুলো স্মরণ করলেন ২৮ বছরের এই উদীয়মান সিমার শাকিল। কিন্তু এখন নতুন জীবনে শাকিলের কাছে সবকিছুই যেন অবিশ্বাস্য, ‘এটা আমার নতুন জীবন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইকে টিভিতে দেখেছি। আর এখন তিনি আমার সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলছেন। তিনি আমার অধিনায়ক। আমার জন্য এটা কেবলই অবিশ্বাস্য।’

২০১৪ সালে যখন ক্লাব ট্রায়ালে যেতেন। শাকিলকে নিয়ে সবাই হাসি-তামাশা করতেন। কিন্তু তাতে দমে যাননি। সমস্যা কিন্তু শাকিলের পিছু ছাড়েনি। ক্লাবের ট্রায়ালে যেতে প্রয়োজনীয় ক্রিকেটের সামগ্রী ছিল না তার হাতে। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন বন্ধু হোসেন যোশি। তার কাছ থেকে একজোড়া বোলিং বুট ও ব্যাট নিয়ে যান ট্রায়ালে। বন্ধু হোসেনই ক্লাব কর্তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে শাকিলের জন্য একটা নেট সেশনের ব্যবস্থা করে দেন। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সৌভাগ্যবশত ভালো পারফরম্যান্স করে ক্লাবকর্তাদের নজর কাড়েন শাকিল।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ফতুল্লা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রাইম দোলেশ্বরের নেটে কোচ মিজানুর রহমানের চোখে পড়ে যান শাকিল। তার শারীরিক ভাষা ও বোলিং পারফরম্যান্স মুগ্ধ করে ২০১৬ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের এই কোচকে। মিজানুরের প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে পাঁচটি লিস্ট-এ ম্যাচ খেলেন শাকিল। পরে মিজানুরের সুপারিশে সেন্ট্রাল জোনে নেট বোলার হিসেবে যোগ দেন শাকিল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষে বিসিএল শুরু হলে শাকিলের ওপর নজর দেয় সেন্ট্রাল জোন। দলের ম্যানেজার মিল্টন আহমেদ জানান, ‘ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তার চমৎকার পেস ও ইনসুইং কাজে লাগাতে শাকিলকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিই আমরা।’ সুবাদে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সুযোগ মেলে শাকিলের। গত সপ্তাহে জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার রাজশাহীর সবুজ পিচে শাকিলকে দেখে রীতিমতো চমকে যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads