• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

ক্রিকেট

সুযোগের অপেক্ষায় লিখন

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০১৮

অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। শেষ টেস্টে চট্টগ্রামে এক ইনিংসে নিয়েছিলেন প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট। সময়টা ২০১৪ সালের অক্টোবরের দিকে। একই বছরের নভেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। পরের ম্যাচেও দুটি। এরপর লম্বা বিরতি। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। টেস্টেও শেষ ম্যাচের স্মৃতি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেই। এরপর আর জাতীয় দলে দেখা নেই ডানহাতি প্রতিশ্রুতিশীল লেগ স্পিনার যুবায়ের হোসেন লিখনের। ৬টি টেস্ট আর তিনটি ওয়ানডেতেই আটকে আছে লিখনের জাতীয় দলের অধ্যায়।

টেস্টে ১৬ আর ওয়ানডেতে ৪ উইকেট নেওয়া ২২ বছর বয়সী এই তরুণ হাল ছেড়ে দেননি। চলছে তার নিরন্তর সংগ্রাম। ডানহাতি লেগ স্পিনারের কদর খুব একটা নেই এই দেশে। মনে মনে আক্ষেপ তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। অথচ বিশ্ব ক্রিকেটে তার মতো রিস্ট স্পিনাররা বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেখানে লিখনের নিয়তি যেন হতাশার চাদরে ঢাকা।

তাই বলে দমে নেই লিখন। বর্তমানে বিসিবির এইচপির (হাই পারফরম্যান্স) অধীনে প্রস্তুতি চলছে তার। অপেক্ষায় আছেন সুযোগের। আর তা পেলেই নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা চালাবেন তিনি। সাম্প্রতিক নিজের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে গতকাল মিরপুরে লিখন বলেন, ‘এক মাসের বেশি আমি কাজ করছি। এর মধ্যে আছে রানিং, জিম সেশন। প্রতিদিন তো বোলিং থাকছেই। এখন অনুশীলন অনেক ভালো হচ্ছে। আগের তুলনায় এখন ফিট অনেকটা, ওজনও কমছে। অনুশীলনেও সুবিধা পাচ্ছি।’

বিসিবি থেকে বাড়তি সুবিধা প্রসঙ্গে লিখন বলেন, ‘বোর্ড কিন্তু সব খেলোয়াড়কে সুযোগ-সুবিধা দেয় না। আল্লাহর রহমতে সব সুবিধা পাচ্ছি। আমি গত বছর ঘরোয়া লিগেও খেলিনি। আমাকে এইচপিতে রাখছে। বোর্ডের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।’ নিজের বোলিং প্র্যাকটিস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ন্যূনতম ২০ ওভারের মতো বোলিং করি শাহীন (হুমায়ুন কবির) ভাইকে নিয়ে। শাহীন ভাই যেভাবে বলছেন সেভাবে অনুশীলন করে যাচ্ছি। বোলিংয়ের গতি, একুরেসি এখন অনেক ভালো হচ্ছে।’

ক্রিকেট বিশ্বে রিস্ট স্পিনারদের দাপট। সেখানে লিখনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। লিখনের কণ্ঠে আক্ষেপের সুর, ‘সব জায়গায় লেগ স্পিনার আছে, ভালোও করছে। আমারো ইয়ে (আক্ষেপ) লাগে যে আমিও তো কিছু দিতে পারতাম। তবে সময় আসলে শেষ হয়ে যায়নি। যদি চেষ্টা করি অবশ্যই পারব ইনশাল্লাহ। যদি সুযোগ আসে চেষ্টা করব দলের জন্য, দেশের জন্য ভালো কিছু করার।’ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বোলার র্যাঙ্কিংয়ে সেরা পাঁচে যারা আছেন তাদের সবাই লেগ স্পিনার। সেখানে না থাকার আফসোস থাকাটাই স্বাভাবিক। তার আগে দরকার জাতীয় দলে নিয়মিত খেলা। লিখনের মতে, ‘নির্বাচকরা বুঝেশুনেই কিন্তু আমাকে নিয়েছিলেন। প্রতিভা ছিল তবু হয়তোবা ঘাটতি ছিল। হয়তো পরিশ্রম কম করতাম, তখন পরিণত ছিলাম না। এখন বুঝতে পারছি যে, আমার কী ভুলগুলো ছিল। দল থেকে বাদ পড়ার পর বুঝেছি, খারাপ সময় না এলে আসলে মানুষ ভালোটা বুঝে না। খারাপ সময় এসেছে, ভুলগুলো বুঝেছি। আবার সুযোগ এলে চেষ্টা করব ভুলগুলো না করতে।’

অফ ফর্মের কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটেও লিখনকে তেমন দেখা যায় না। যেটার পেছনে টিম কম্বিনেশনকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। তবে দুঃসময়ে সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। তার মতে, ‘সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রতি আমি খুব কৃতজ্ঞ। সব সময় আমাকে সাপোর্ট করছেন। মাশরাফি ভাই, রিয়াদ ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই কখনো আমাকে নেতিবাচক কিছু বলেননি।’ নিজের প্রস্তুতিতে খুশি লিখন। আত্মবিশ্বাসটাও বেড়েছে আগের তুলনায়। লিখন বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী। যদি দুই-একটা ম্যাচ খেলতে পারি তাহলে পুরো আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। আমার বোলিং যারা দেখছে কিংবা যারা ব্যাট করছে সবাই বলছে- গতি, একুরেসি সব ভালো হচ্ছে।’

ক্লাব পর্যায়ে লেগ স্পিনারদের না খেলানোর সংস্কৃতি সম্পর্কে লিখনের মূল্যায়ন, ‘এটা ওদের ব্যাপার। এত টাকা দিয়ে ক্লাব করে। আমি খারাপ করব আর আমাকে নেবে এটা তো হয় না। গেল বিপিএলে ম্যাককালাম দেখে বলেছেন- ‘তুমি কয় উইকেট পাইছ’। আমি যখন বললাম আমি কোনো দলে নেই তখন টম মুডিও অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন (অবাক হলো)। আমাদের মোহামেডানে বিপুল শর্মা বলছিলেন, তুমি যদি ইন্ডিয়াতে থাকতে তাহলে সহজেই আইপিএলে খেলতে পারতে। এসব কথা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।’

কয়েক দিন পরই আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করবে বিসিবি। দলে ফিরতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে লিখন জানান, ‘এটা আসলে তাদের ব্যাপার। আমি কঠোর পরিশ্রম করছি। আশা তো করি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads