• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
ওয়ানডে সিরিজে দুরন্ত সূচনা মাশরাফিদের

টেস্টে লজ্জাজনক হারের পর দুরন্ত সূচনা মাশরাফিদের

ছবি : ইন্টারনেট

ক্রিকেট

ওয়ানডে সিরিজে দুরন্ত সূচনা মাশরাফিদের

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই ২০১৮

দলীয় সমঝোতা নিয়ে কিছুটা হলেও সমস্যা ছিল বাংলাদেশ টেস্ট দলের। ফলে তারা দুটি টেস্টেই লজ্জাজনকভাবে হেরে যায় স্বাগতিক ক্যারিবীয়দের কাছে। হোয়াইটওয়াশের বেদনা নিয়ে মাঠে নামলেও মাশরাফি বিন মুর্তজার দারুণ নেতৃত্ব সেই সমঝোতার অভাব ঘুণাক্ষরেও মনে করাতে দেয়নি ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। মাশরাফি, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালসহ সকলেই ‘এক সুতোয় গাঁথা’ বিশ্বাসকে পুঁজি করে গেইলদের মোকাবেলায় মাঠে নামেন। এই তিন তারকার দারুণ অবদানে রোববার রাতে প্রভিডেন্সে ৪৮ রানের জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দুরন্ত সূচনা করল লাল-সবুজের দল।

ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুর্দান্ত বাংলাদেশ। শুরুতেই উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও সাকিবের রেকর্ড ২০৭ রানে ভালো পজিশনে চলে যায় বাংলাদেশ। ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৭৯ রান করে তারা। এই ইনিংসে মোট দুটি রেকর্ড হয় বাংলাদেশের। এর আগে ২০১০ সালে ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিকী এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ১৬০ রান করেছিলেন। সেই রেকর্ড এবার ভেঙে দিলেন তামিম ও সাকিব। আর দ্বিতীয় রেকর্ড হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ করেছিল ২৭৬ রান।

ভালো ব্যাটিংয়ের পর বোলারদের নৈপুণ্যে, বিশেষ করে মাশরাফির দুরন্ত বোলিংয়ে ক্রিস গেইলসমৃদ্ধ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯ উইকেটে ২৩১ রানে বেঁধে দেয় বাংলাদেশ। টানা তিন ওভারে তিনটি উইকেট নেন বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক। মোট ১০ ওভারে এক মেডেনসহ ৩৭ রান দিয়ে চার উইকেট নেন মাশরাফি।

বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই এনামুল হককে (০) হারিয়ে হোঁচট খায়। তখন দলের রান ১। তাও ওয়াইড থেকে পাওয়া। তবে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন সাকিব-তামিম। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকতে বিশুর বলে শিমরন হেটমায়ারের হাতে ধরা পড়েন সাকিব। তিনি ১২১ বলে ৬টি চারে করেন ৯৭ রান। সাকিব সেঞ্চুরি না পেলেও ম্যাচসেরা তামিম লক্ষ্যে পৌঁছেন। চমৎকার ব্যাটিংয়ে তিনি করেছেন ওয়ানডেতে দশম সেঞ্চুরি। ওপেনিংয়ে নেমে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন ১৩০ রান করে। সেই সঙ্গে পুরো ইনিংস খেলে দেশি-বিদেশি অনেক তারকা ব্যাটসম্যানের পাশে দাঁড়ালেন তামিম। তামিমের আগে এমন পুরো ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশের শাহরিয়ার নাফীস ও জাভেদ ওমর, ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি, দিনেশ মঙ্গিয়া, রোহিত শর্মা ও শচীন টেন্ডুলকার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও ডেসমন্ড হেইন্স, দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ও গ্যারি কারস্টেন, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন, শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ও তিলকারত্নে দিলশান, নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গুপটিল এবং জিম্বাবুয়ের মাসাকাদজা।

তামিম ১৬০ বলে ১৩০ রানের ইনিংসটি সাজান ১০ চার ও ৩ ছক্কায়। সাকিবের আউটের পরই ফিরে যান সাব্বির রহমান (৩)। তবে বাংলাদেশের স্কোর ২৭৯ পর্যন্ত যাওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন উইকেট কিপার মুশফিক। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি স্টাইলে মাত্র ১১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় খেলেন ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস। আন্দ্রে রাসেলের বলে আউট হন তিনি। তামিমের সঙ্গে ইনিংস শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ ১ বলে ৪ রানে অপরাজিত থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেবেন্দ্র বিশু ২টি এবং হোল্ডার ও রাসেল ১টি করে উইকেট নেন।

২৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে নেন মাশরাফি ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সাবধানী ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। তবে নবম ওভারের চতুর্থ বলে মিড অফে লুইসকে (১৭) মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানান মাশরাফি। মাত্র ৬ রানে রুবেল হোসেনের কাছে এলবিডব্লিউ হন শাই হোপ। ৪১ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ানদের এগিয়ে নিতে থাকেন ক্রিস গেইল। অবশেষে নন-স্ট্রাইকে থাকা গেইল হাফসেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১০ রান দূরে থাকতে রান আউট হন। ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ৬০ বলে ১ চার ও ২ ছয়ে ৪০ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জেসন মোহাম্মদকে স্টাম্পিংয়ে ফেরালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ উইকেট পান মিরাজ। কিন্তু তারপর হেটমায়ার ও জেসন হোল্ডার ক্রিজ আঁকড়ে দাঁড়িয়ে যান। মোস্তাফিজ ৩৬তম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে এই জুটি ভেঙে দেন। ৫২ রান করে হেটমায়ার ক্যাচ দেন সাকিবকে। পরের বলে রভম্যান পাওয়েলকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান বাঁহাতি এ পেসার। তারপর নিজের শেষ তিন ওভারে মাশরাফি ফেরান হোল্ডার (১৭), আন্দ্রে রাসেল (১৩) ও অ্যাশলে নার্সকে (৭)। ১৭২ রানে ৯ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ানরা তারপরও প্রতিরোধ গড়েছিল বিশু ও আলজারি জোসেফের জুটিতে। তারা ৫৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়লেও তা ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল না। বাংলাদেশের মোস্তাফিজ ৩৫ রানে ২টি এবং মিরাজ ৩৭ রানে ও রুবেল ৫২ রানে ১টি করে উইকেট লাভ করেন।

আগামীকাল বুধবার প্রভিডেন্সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads