স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৯৭ রান। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলাশেষে ২ উইকেটে ৬০ রান করে জয়ের কাজ অনেকটাই সেরে রাখে তারা। গতকাল শনিবার তৃতীয় দিনে তারা বাকি কাজটা সারে অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে খেলে। উইকেট আর না হারিয়ে বাকি ১৩৭ রান তুলে ফেলে দলটি। পোর্ট এলিজাবেথে তারা জয় পেল ৮ উইকেটে। এর আগে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ১৫৪ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দুই ইনিংসে ২২২ ও ১২৮ রান করে। ডারবানে প্রথম টেস্টে ১ উইকেটে জয় পাওয়ায় ২-০ ব্যবধানে প্রোটিয়াদের হোয়াইটওয়াশ করল লঙ্কানরা।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যদের জন্য এটা এক ঐতিহাসিক সিরিজ জয়, যা করতে পারেনি আর কোনো উপমহাদেশের ক্রিকেট খেলুড়ে দল। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছে শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড, যা পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা নিউজিল্যান্ডও।
ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যায়, নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে টানা চারটি সিরিজ হারার রেকর্ড আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৮৮৮-৮৯ থেকে ১৮৯৮-৯৯ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি সিরিজই হারে প্রোটিয়ারা। ১৯০২ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলতে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। ১৯১৩, ১৯২১ এবং ১৯২২ সালে ঘরের মাঠে আবারো ইংল্যান্ড (২ বার) ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ হারে প্রোটিয়ারা। ১৯৩৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ৪-০ এবং ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ড ৫ ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে। এরপর ১৯৪৯-৫০ সালেও অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জেতে প্রোটিয়াদের মাটি থেকে। সবশেষ ২০১৫-১৬ সালে সিরিজ জয় করে ইংল্যান্ড।
তবে এই দুটি দেশ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের ইতিহাস নেই আর কোনো দলের। সেখানে সেই অসাধ্য সাধন করে ফেলল শ্রীলঙ্কা। পোর্ট এলিজাবেথে লঙ্কান পেসার সুরাঙ্গা লাকমালের গতি আর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ঘূর্ণির সামনে খুব বেশিদূর যেতে পারেননি আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১২৮ রানেই অলআউট হন প্রোটিয়ারা। যার ফলে লঙ্কানদের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯৭ রান।
লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে দিমুথ করুনারত্নে ১৯ ও লাহিরু থিরিমান্নে ১০ রানে ফেরার পর জয়ের লড়াই শুরু করেন ওসাদা ফার্নান্দো ও কুশল মেন্ডিস। শেষ পর্যন্ত ফার্নান্দোর ৭৫ রান ও মেন্ডিসের ৮৪ রানে ঐতিহাসিক জয় পান লঙ্কানরা। দুই দিন হাতে রেখেই এমন জয়ের দিনে স্বাগতিক বোলাররা কোনো বাধাই তৈরি করতে পারেননি লঙ্কানদের সামনে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা। এছাড়া ৪ উইকেট নেন অলিভিয়ার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২২২ ও ১২৮। শ্রীলঙ্কা : ১৫৪ ও ১৯৭/২ (ওসাদা ফার্নান্দো অপরাজিত ৭৫, কুশল মেন্ডিস অপরাজিত ৮৪, করুনারত্নে ১৯, থিরিমান্নে ১০, রাবাদা ১/৫৩, অলিভিয়ার ১/৪৬)। ফল : শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : কুশল মেন্ডিস। সিরিজসেরা : কুশল পেরেরা।
