নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে ভয়াবহ হামলার এক বছর পূর্ণ হলো গতকাল রোববার। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী সন্ত্রাসী বেন্টন টরেন্ট ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের কাছে আল নূর ও লিনউড নামক দুটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে ৫১ জনকে হত্যা করে। নৃশংস এই হামলায় আহত হন দেড় শতাধিক। হামলার সময় সেখানে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। অনুশীলন শেষে জুমার নামাজ আদায় করতে আল নুর মসজিদে যাচ্ছিলেন তামিম ইকবালরা। স্থানীয় এক মহিলা মসজিদে যেতে নিষেধ করলে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহরা। ক্রিকেটাররা ভয়ানক সেই মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করেছেন।
তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনা কখনোই ভোলার নয়। প্রায় প্রতিদিনই ওই ঘটনা মনে পড়ে। এমন ভয়ানক অভিজ্ঞতা যে আর নেই আমাদের।’ মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘আমি ওই দিনের কথা মনে করতে চাই না।’
বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল স্মৃতিচারণ করেন বিস্তারিতভাবে। তিনি বলেন, ‘বাসে ওঠার আগে কী হয়েছিল, সেটা আগে বলি, তাহলে বুঝতে পারবেন। মাত্র দুই-তিন মিনিট সময় কীভাবে আমাদের জীবন-মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছিল। জুমার নামাজে মুশফিক ও রিয়াদ ভাই খুতবার সময় মসজিদে হাজির হতে চান। সে জন্য আমরা ওই দিন আগেই নামাজে যেতে চেয়েছিলাম। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে মাঠ থেকে আমাদের বাস ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু রিয়াদ ভাই ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যান। সেখানে কিছুটা দেরি করে ফেলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে রিয়াদ ভাই ড্রেসিংরুমে যান। ড্রেসিং রুমে আমরা সবাই তখন ফুটবল খেলায় ব্যস্ত ছিলাম। সেখানেও কিছুটা দেরি হয়ে যায়। এই সামান্য দেরিটাই আমাদের জীবন বাঁচিয়ে দেয়। ফুটবল খেলা শেষ করে আমরা বাসে উঠি। উদ্দেশ্য, জুমার নামাজ পড়ে হোটেলে ফিরব। বাস মসজিদের কাছাকাছি এলে আমরা দেখি একজন লোক মাটিতে পড়ে আছে। ভাবলাম, হয়তো অজ্ঞান হয়েই সে পড়ে আছে। বাস আরো একটু সামনে যেতেই আমি দেখি, আরো এক লোক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তখনই আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শুরু। খানিক পরে ভীত অবস্থায় এক মহিলা আমাদের বাসের চালককে সামনে যেতে নিষেধ করলেন। চালক মহিলাকে বললেন, আমরা মসজিদে যাচ্ছি। তখন মহিলা চিৎকার করে বললেন, মসজিদেই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। মসজিদ থেকে আমরা তখন মাত্র ২০ গজ দূরে। আমরা দেখলাম, মসজিদের আশপাশে অনেক মানুষের রক্তাক্ত মৃতদেহ। ভয় পেয়ে গেলাম। যারা পাঞ্জাবি পরা ছিলাম, তাড়াতাড়ি তা ছেড়ে ট্রাউজার পরে নিই। নিজেদের মধ্যে কয়েক মিনিটের আলোচনা সেরে সিদ্ধান্ত নিই, বাসে না থেকে হেঁটে বিপদমুক্ত এলাকায় চলে যাওয়ার। সবাই প্রথমে হেঁটে, পরে দৌড়ে মাঠের ভেতরে চলে যাই। সেখান থেকে টিম হোটেলে যাই। হোটেলে গিয়ে টিভিতে বন্দুকধারীর ভিডিও দেখি। ড্রেসিং রুমে আমরা সবাই তা দেখে কাঁদতে শুরু করি। সেদিন মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়।’