• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
মায়ার্স

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

মায়ার্স বীরত্বে হেরে গেল বাংলাদেশ

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। চট্টগ্রাম টেস্টে তা দেখা মিলল আরেকবার। অনিশ্চয়তার সঙ্গে যোগ হলে রোমাঞ্চ আর বর্ণিল রঙ। একদিন আগেই মুমিনুলরা যেখানে পেয়েছিলেন জয়ের সুবাস, পঞ্চম দিনে চিত্র পাল্টে সেখানে হতাশার সুর। দৃশ্যপটে নতুন এক বীরের আবির্ভাব। লড়াকু এক ব্যাটসম্যান, কাইল মায়ার্স। অভিষেক টেস্টে তার ব্যাটে রেকর্ড ওলটপালট। করলেন ডাবল সেঞ্চুরি, জিতল তার দল ওয়েস্ট ইন্ডিজও। চারদিন দাপট দেখানো বাংলাদেশ হেরে গেল তিন উইকেটে। সত্যিই অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য।

জিততে হলে করতে হবে ৩৯৫ রান। পঞ্চম দিনে ক্যারিবীয়দের লক্ষ্যটা দাঁড়ালো এমন, ২৮৫ রান, হাতে সাত উইকেট। এমন লক্ষ্য দাপটের সঙ্গে পেরিয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তা হয়তো কেউ ভাবেনি। কিন্তু বাস্তবে সেটিই করে দেখালো ক্যারিবীয়নরা। অভিষিক্ত কাইল মায়ার্সের মহাকাব্যিক ডাবল সেঞ্চুরি। সঙ্গে বনার ও সিলভাদের প্রবল প্রতিরোধ। সব মিলিয়ে দুরন্ত এক ক্যারিবীয়দেরই দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ৪৩০ রান। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে করে ২৫৯। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২২৩/৮ ডিক্লি.। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ৩৯৫ রানে। লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৩ উইকেটে ১১০ রানে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩৭ রানে মায়ার্স ও ১৫ রানে বনার ছিলেন অপরাজিত। শেষ দিনে জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ২৮৫ রান। বাংলাদেশের চাই সাত উইকেট। হিসাব মতে, জয়ের পরিষ্কার দাবিদার ছিল বাংলাদেশই। কিন্তু সব হিসাব উল্টে দিলেন মায়ার্স-বনার জুটি।

টানা দুটি সেশন অবিচ্ছিন্ন এই জুটি। বাংলাদেশের বোলারদের নাভিশ্বাস করে ছেড়েছেন দুজন। শুধুমাত্র টিকে থাকার লড়াই না, দুজনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল জয়ের লক্ষ্যেই এগুচ্ছেন। মাঝে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসতো আছেই। ছিল রিভিউ না নেওয়ার বোকামিই।

শেষ পর্যন্ত এই জুটি অভিষেকে রেকর্ড গড়েই বিচ্ছিন্ন হন। রান আসে ২১৬। তাইজুলের বলে বোল্ড হন বনার, তৃতীয় সেশনে। এই জুটি বল মোকাবিলা করেছে ৪৪২টি। ২৪৫ বলে ৮৬ রান করে ফেরেন বনার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় রান তখন ২৭৫। কিন্তু থেকে যান ভয়ংকর মায়ার্স। এরপর আউট হন ব্লাকউড। নাঈম হাসানের বলে বোল্ড। ৯ রান করেন ব্লাকউড। বাংলাদেশ শিবিরে তখন নতুন আশা।

কিন্তু না। জশুয়া ডি সিলভার সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন মায়ার্স। এই জুটি স্কোরে যোগ করে ১০০ রান। ১৩১ বলে। ম্যাচ তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুঠোয়। ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন ততক্ষণে মায়ার্সও। শেষের দিকে সিলভা ও রোচকে ফিরিয়ে খানিক উত্তেজনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তা ধোপে টিকেনি।

জয়সূচক রান আসে মায়ার্সের ব্যাট থেকেই। বীরের বেশে মাঠ ছাড়েন মায়ার্স। ততক্ষণে তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৩১০ বলে ২১০ রানের অপরাজিত ইনিংস। হাঁকিয়েছেন বিশটি চার, সাতটি ছক্কা। শেষের দিকে তো ওয়ানডে স্টাইলে খেলেছেন মায়ার্স। পাত্তাই দেননি কোনো বোলারকে। কয়েকবার বল পাঠান গ্যালারিতে। মহাকাব্যিক ইনিংস খেলার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান কাইল মায়ার্সই।

চারদিন ধরে টেস্টে নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের। শেষ দিনে মায়ার্স বীরত্বে ধূলিস্যাত বাংলাদেশের সব আশা। চোটের কারণে দুটি দিন মাঠে বাইরে ছিলেন সাকিব। তার বোলিং খুবই মিস করলো বাংলাদেশ, তা বলাই যায়। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই জয়ে রেকর্ড বই ওলটপালট। উপমহাদেশে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এটি। টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মায়ার্স ইতিহাসের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান। চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যান। অভিষেকে মায়ার্স ও বনারের ২১৬ রানের জুটি ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা। 

দারুণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে মায়ার্স জানালেন তার সাফল্যের রহস্য, ‘আমি সব সময়ই ইতিবাচক একটা মানুষ। আমি আমার সামর্থ্য ও টিমের প্রতি সব সময়ই বিশ্বাসী। কখনো হাল ছেড়ে দেই না। আমরা ড্রেসিংরুমে বলেছি, আমাদের লড়াই করে যেতে হবে।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads