• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
লজ্জার সিরিজ, দায়ী কে?

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

লজ্জার সিরিজ, দায়ী কে?

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

টেস্ট দল কীভাবে গঠন করতে হয় কিংবা খেলোয়াড়দের কীভাবে টেস্টের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হয়, সে ধারণা আছে বোর্ড কর্তাদের? ঘটা করে নির্বাচকমণ্ডলী দিয়ে একটি দল গঠন করলেই দায়িত্ব পালন হয় না

সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ যে এভাবে লজ্জাজনকভাবে হোয়াইটওয়াশ হবে, তা ক্রিকেটামোদীরা কল্পনা করতে পারেনি। অথচ নিজেদের মাটিতে সেটাই হজম করতে হলো আমাদের। চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই টেস্টেই দুঃখজনক পরাজয় ঘটেছে টাইগারদের। এমন বেসামাল পরিস্থিতির জন্য ক্রিকেটামোদীরা সরাসরি দায়ী করবে খেলোয়াড়দের। আসলে কে দায়ী, তা ঘেটে দেখার প্রয়োজন আছে।

দুই টেস্টের সিরিজে ০-২ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রশ্ন এক, সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে পড়তেই পারে, কিংবা বিশেষ কারণে সে মাঠের একাদশে নাও থাকতে পারে, তাই বলে অন্যদের কী কোনো দায়দায়িত্ব নেই? প্রশ্ন দুই, তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার জাতীয় দলের অন্যতম সেরা দুই ওপেনার, তারা কেন ব্যর্থ হলেন? প্রশ্ন তিন, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ-এই ছয়জনও তো ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত। একটি একাদশে আটজন ব্যাটসম্যান থাকার পরও বাংলাদেশ দল টেস্টে কেন ভালো রান তুলতে পারল না?

দলের চার বোলারের ভূমিকা নিয়ে কারো হয়তো প্রশ্ন থাকবে না। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন খটকা মনে জাগবে। আর এটাই স্বাভাবিক। আমরা তো তামিম, মুশফিক, লিটন, মুমিনুল, সৌম্যকে স্বীকৃত ব্যাটিং তারকা হিসেবে নানা সময়ে মিডিয়ায় তুলে ধরি। অথচ তারাই যোগ্যতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলেন। মিঠুন ও শান্ত না হয় তাদের তুলনায় অনভিজ্ঞ। মিরাজ স্পিন অলরাউন্ডার। তিনি বোলিংয়ের পর যতটুকু ব্যাটিংয়ে দিয়ে থাকেন, সেটা যথেষ্ট। বরং মিরাজ অনেক স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের চেয়ে ভালো স্কোর করেছেন। যাই হোক, মিরাজ বাদে প্রথম সারির সাত ব্যাটসম্যানই কি ব্যর্থ? হ্যাঁ, প্রত্যক্ষভাবে তারা দায়ী খারাপ ব্যাটিংয়ের জন্য। কিন্তু পরোক্ষভাবে দায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আর মূল দায় বোর্ডেরই। কারণ, তারা একটি উপযুক্ত টেস্ট দল তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আর এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশ টেস্টে নবীন দেশ। ২০০০ সালের জুন মাসে আইসিসি কর্তৃক টেস্ট মর্যাদা দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। একুশতম বছর চলছে ওই সম্মান লাভের পর। তাহলে, বোর্ড এই দীর্ঘ সময় কী করল? একটি দেশের টেস্ট দল কীভাবে গঠন করতে হয় কিংবা খেলোয়াড়দের কীভাবে টেস্টের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হয়, তার কিছুই কী ধারণা আছে বোর্ড কর্তাদের? সরাসরি বলতে হয়, কোনো ধারণাই তাদের নেই। শুধু ঘটা করে নির্বাচকমণ্ডলী দিয়ে একটি দল গঠন করলেই দায়িত্ব পালন হয় না। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তিন ফরম্যাটের মধ্যে বুনিয়াদি খেলা হলো টেস্ট। টেস্ট হলো ক্রিকেটের ব্যাকরণী খেলা।

বাংলাদেশ দল খারাপ খেলেছে। এই খারাপ খেলার জন্য ক্রিকেট বোর্ডকে দায় নিতে হবে। আমাদের নির্বাচকমণ্ডলীর কাজ যদি সঠিকভাবে চলে তাহলে ভবিষ্যতে দল ভালো খেলবে। প্রথমে দেখতে হবে, জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত এবং দলের কাছাকাছি থাকা ৫০-৬০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে কারা টেস্ট দলে খেলার উপযুক্ত। তাদেরকে নিয়ে ৩ দিনের বা ৪ দিনের ম্যাচ বেশি আয়োজন করতে হবে। টেস্টে ভালো করার প্রথম শর্ত হলো, এই টাইপের ম্যাচ বেশি বেশি খেলা। যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওই ধরনের ম্যাচ একেবারেই খেলে না। ফলে লঙ্গার ভার্সনের টেস্ট ম্যাচে ভালো করতে পারে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘বি’ টাইপের টিমও তাই বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার শিক্ষা দিয়ে গেল।

মূল কথা, বেশি বেশি ৩-৪ দিনের ম্যাচ খেলার কোনো বিকল্প নেই টেস্টে ভালো করার জন্য। এবার বলতে হয় খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে। তামিম ইকবাল দুই বছর আগে একটা ফিফটি মেরেছিলেন। দুই বছর পর এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে চার ইনিংসে একটা ফিফটি মারলেন। অনেক সমালোচনাকারী বলতে শুরু করেছেন, ‘এবার একটি ফিফটি হাঁকিয়ে তামিম আগামী দুই বছরের জন্য নিজের স্থান পাকা করলেন।’ এসব কথা অযৌক্তিক নয়। স্পষ্টভাবে বললে বলতে হয়, তামিমের মধ্যে বর্তমানে টেস্ট মেজাজ শতকরা একভাগও নেই। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম করেন ৪৬ বলে ৫০ রান। এটা কোনোভাবেই টেস্ট মেজাজি খেলা নয়। এর পরও অদৃশ্য শক্তির বলে তামিম আমাদের টেস্ট দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান। সৌম্য সরকারকে কেন টেস্ট দলে নেওয়া হয়, কাকে খুশি করতে দলভুক্ত করা হয়, তা শুধুমাত্র কথিত নির্বাচকমণ্ডলীই ভালো জানেন। নাজমুল হোসেন শান্ত চট্টগ্রামে খারাপ করার পরও ঢাকা টেস্টের জন্য কেন দলভুক্ত হন, সেটার রহস্য অজানাই থেকে যাবে। চট্টগ্রামে ব্যর্থতার পর ঢাকা টেস্টের দলগঠন একটু বুদ্ধি খাটিয়ে করলে হয়তো বা বাংলাদেশ জয় পেতেও পারত।

আসলে খেলোয়াড়দের কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের কপালের। আর দোষ আমাদের দক্ষ (!)  নির্বাচকমণ্ডলীর ও বিসিবির। এসব দোষ কাটাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা নাহলে, সেদিন বেশি দূরে নেই, যেদিন টেস্ট মর্যাদা হাতছাড়া হওয়ার পথ তৈরি হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads