• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যাটিং চ্যালেঞ্জ নিতে ব্যর্থ বিসিবি

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

ব্যাটিং চ্যালেঞ্জ নিতে ব্যর্থ বিসিবি

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ১৪ আগস্ট ২০২১

বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট শক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শুধু টি-টোয়েন্টিই নয়, অজিদের সঙ্গে ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ লাভ। এমন ইতিহাসগড়া সিরিজ জয়ের ভেতরেও বাংলাদেশ যে গোছানো নয়, তার বড় ধরনের প্রমাণ মিলেছে। সেই অগোছানোর জন্য দায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবি চ্যালেঞ্জ নিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সামনে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি আসর। তাই বাংলাদেশ সফল সিরিজ জিতলেও ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে পিছিয়েই থাকলো।

বাংলাদেশ যে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে এভাবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতবে তা কেউ কল্পনাও করেনি। অথচ সেটাই হয়েছে সিরিজে। তাই বলে বাংলাদেশের সবকিছু সার্থক হয়ে যায়নি। বরং অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। অধিনায়কের হোক, কোচের হোক আর টিম ম্যানেজমেন্টের হোক ভুল কিন্তু হয়েছে। প্রশ্ন হলো, মাঠে ডিসিশন কে দেন? ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনার বিষয়ে বাংলাদেশ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ প্রথম তিনটি ম্যাচে জয়ের পর দারুণ একটা সুযোগ এসেছিল চতুর্থ ও পঞ্চম ম্যাচে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাটিং লাইনে পরিবর্তন আনার। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? সেই সৌম্য সরকার আর মোহাম্মদ নাইমকেই পাঠানো হলো উদ্বোধনী জুটিতে। কিসের আশায় বা কিসের চিন্তায় এমনটি করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ‘টানা তিন ম্যাচে জয় ছিল বলে একাদশে পরিবর্তন আনা যাবে না’- এমন পুরোনো ধ্যান-ধারণা পোষণকারীরা কী অবগত নন যে, সামনে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি  আসর। তার জন্য তো কিছু অগ্রিম চিন্তাভাবনার দরকার ছিল। কোচ তো সিরিজ শুরুর আগে বলেছিলেন, প্রয়োজনে সাকিব- আফিফকে দিয়ে ওপেনিং করাবেন। কই, তার সে কথার প্রতিফলন তো আমরা দেখলাম না। তাহলে এটা ঠিক যে আমাদের কোচের কোনো ভূমিকা নেই একাদশ সাজানোর বিষয়ে। তাহলে অধিনায়কের কী কোনো ভূমিকা ছিল? তাই যদি থাকতো, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন না দলের কোনো বিপর্যয় আসুক। অতএব পরিষ্কার, অধিনায়কেরও কোনো ক্ষমতা নেই একাদশে পরিবর্তন আনার। আমাদের তথাকথিত নির্বাচকমণ্ডলী তো বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতোই। তারা বেতনকে জায়েজ করার তাগিদে বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়ে জাতীয় দল ঘোষণা করেন। মনে হয়, এটাই তাদের একমাত্র কাজ। আর আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে দল ঘোষণা করলেও বিভিন্ন প্রশ্নেরই সঠিক জবাব দিতে পারেন না।

তাহলে বাংলাদেশ দলের সিরিজ জয়ের পর একাদশে পরিবর্তন আনা কিংবা ব্যাটিং অর্ডার নতুন করে গোছানোর যে দারুণ সুযোগ ছিল, সেটা কার জন্য হলো না?

বাংলাদেশ দলের বোলিং সাইড বেশ শক্তিশালী, একথা মানতেই হবে। কিন্তু ভালো ভালো ব্যাটসম্যান থাকার পরও ব্যাটিং অর্ডার অগোছালো। একজন ওপেনার প্রতিটি ম্যাচেই সেঞ্চুরি বা হাফ সেঞ্চুরি কিংবা ৩০/৪০ রান করবেন, সেটা কখনোই হয় না। তাহলে তিনি আর স্বাভাবিক মানুষ থাকবেন না। কিন্তু একজন ওপেনারের ন্যূনতম ধারাবাহিকতা থাকবে না, অথচ তাকেই ওপেনিং জুটিতে মাঠে নামাতে হবে, সেটা তো ভালো লক্ষণ নয়। আমাদের ওপেনিংয়ে খেলার জন্য অনেকেই রয়েছেন। তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, সাব্বির রহমানরা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে বিকল্প চিন্তা করা উচিত। বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে এবার ব্যাটিং অর্ডার শক্তিশালী করার একটা ভালো সুযোগ ছিল।

সৌম্য সরকার প্রথম তিন ম্যাচে যখন ২, ০ ও ২ রান করেন তখন তাকে কোন্ কারণে চতুর্থ ম্যাচে ওপেনিংয়ে নামানো হলো? এর উত্তর কে দেবেন? সৌম্য চতুর্থ ম্যাচে করেন ৮ রান। এটাও কোনো রানই নয়। সৌম্য পঞ্চম ম্যাচে টু ডাউনে নেমে করেন ১৮ বলে ১৬ রান। ৫ ম্যাচে তিনি করেন মোট ২৮ রান। চতুর্থ ও পঞ্চম ম্যাচে সৌম্যকে একাদশে রাখার কী কোনো যুক্তি আছে? অন্য কাউকে দিয়ে অন্তত চতুর্থ ও পঞ্চম ম্যাচে ট্রাই করা যেত। মোহাম্মদ নাইম প্রথম ম্যাচে ৩০ রান করলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে ৯ আর ১ রান করেন। চতুর্থ ম্যাচে নাইম করেন ৩৬ বলে ২৮ রান। আর পঞ্চম ম্যাচে নাইম ২৩ বলে ২৩ রান করেন। ৫ ম্যাচে নাইম মোট ৯১ রান করায় তিনি টিকে যেতে পারেন ওপেনিংয়ে। শামীমকে নিয়ে যে আশা করা হয়েছিল, সেটা পূরণ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন টানা দুই ম্যাচেই। তবু তাকে চতুর্থ ম্যাচে দলভুক্ত করা হলো কী কারণে? ৪ ম্যাচে শামীম করেছেন মোট ১৩ রান (৪+৩+৩+৩)। হ্যাঁ, শামীম জিম্বাবুয়েতে ভালো করেছেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ে আর অস্ট্রেলিয়া তো এক কথা নয়। উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানও ছিলেন অনেকটাই ব্যর্থ। তিনি প্রথম ম্যাচে ৩, দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত ২২, তৃতীয় ম্যাচে ১১, চতুর্থ ম্যাচে শূন্য এবং পঞ্চম ম্যাচে ৮ রান করেন। ৫ ম্যাচে মোট ৪৪ রান করেছেন সোহান। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ, মেহেদী মোটামুটি রান করেছেন। তবে তাদের আরো কঠিন মনোভাব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে। বিসিবি সৌম্য, শামীম ও নুরুলের বিকল্প নামাতে পারতো তৃতীয় বা চতুর্থ ম্যাচ থেকে। যেখানে টানা তিন ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলে। ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হলো। 

টিম ম্যানেজমেন্টের মূল ব্যক্তি আসলে কে, তা আমরা সঠিক জানি না। তবে তিনি যেই হোন, তার উচিত ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজকে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাজে লাগানো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওপেনিং জুটি তৈরির চেষ্টা করা, মিডল অর্ডারে কাউকে কাউকে বাদ দিয়ে নতুন নতুন দুই তিনজনের ওপর পরীক্ষা চালানো, উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক বা সোহানের জায়গায় নতুন কাউকে ট্রাই করা, ফিল্ডিংয়ের ঘাটতিগুলো নির্ণয় করা, বোলারদের ইয়র্কার করার চর্চা চালানো ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ রাখা উচিত ছিল এই সিরিজে। বড় ও শক্তিশালী দলের সঙ্গে এসব

পরীক্ষা করলে তার ফলাফল কাজে লাগতো। ভবিষ্যতে এসব দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads