• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
আ.লীগ-বিএনপির জামায়াত পরীক্ষা

বিএনপি জোটের সঙ্গী হলেও সিলেটে জামায়াত আলাদা ভোট করায় চাপে রয়েছে বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন

শ্বশুরবাড়ির ভোট নিয়ে আলোচনা

আ.লীগ-বিএনপির জামায়াত পরীক্ষা

  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০১৮

বিএনপি জোটের সঙ্গী হলেও জামায়াত আলাদা ভোট করায় চাপে রয়েছে বিএনপি। কারণ জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জামায়াতের ভোট পেত বিএনপি প্রার্থী। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার থেকে ইসলামী দলগুলো নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার ইসলামী দলগুলোর ভোট কামরান পাবেন। যা গত নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী পেয়েছিলেন।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর ভোটই সিলেটের মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে। কারণ গত নির্বাচনে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর ভোট পেয়ে আরিফুল হক মেয়র হয়েছিলেন। আর এবার বিএনপির আরিফুলের বদলে নৌকার কামরান জামায়াতের সিলেটের ইসলামী দলগুলোর ভোট পাচ্ছেন। এ হিসাবটিতেই জামায়াত বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে জটিল পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে আগামীকাল সোমবার ভোট। এ ভোটের ফলাফলের দিকে শুধু সিলেটবাসী নয়, তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। কারণ এখানকার ফলাফল জাতীয় রাজনীতির জোট-মহাজোটে নানা হিসাবের জন্ম দেবে। রাজনীতিতে প্রলেপ দেবে নতুন রঙের। প্রতীক বরাদ্দের পর টানা দুই সপ্তাহের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডেই ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’ শব্দটি বার বার উচ্চারিত হচ্ছে। সাধারণ ভোটার এবং বিভিন্ন দলের নেতারাই বলছেন, মেয়র পদে জামায়াত এখানে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির জন্য এ পরীক্ষা বড় কঠিন।

২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। দলীয় প্রতীকবিহীন মেয়র পদের ওই নির্বাচনে টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে সেবার আরিফুল হক চৌধুরী জয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে আরিফের ভোটের ব্যবধান ছিল ৩৫ হাজার ৬০। এবারও সেই আরিফ বিএনপির সব নেতার আশীর্বাদ ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গতবারের মতো বিজয়ী হতে চান। আর কামরান এবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলছেন, এটাই তার জীবনের শেষ নির্বাচন। আপনাদের ‘হাতে-পায়ে’ ধরে বলছি, ‘আমার শেষ নির্বাচনে আমাকে ভোটটা দিন।’ আমাকে ভোট দিলে উন্নয়ন হবে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, সিলেট নগরের মানুষের প্রতি আমার অগাধ আস্থা। গত পাঁচ বছর আমার ওপর যে অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে এবং আমার কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তার বিচারের ভার আমি নগরবাসীর ওপরই ছেড়ে দিলাম। গতকাল শনিবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ দিনের গণসংযোগে তিনি বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনকে বানচাল করা যাবে না। সিলেটের মানুষ অন্যায় সহ্য করে না। তবে এও ঠিক যে, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। কিন্তু দল কামরানকে মনোনয়ন দেওয়ায় বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এ কারণে সিলেট আওয়ামী লীগ তথা অঙ্গসংঠনের বহু নেতা প্রথম দিকে কামরানের পক্ষে প্রচারে অংশ নেননি। কিন্তু এখন এসে শুধু প্রতীকের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভ না দেখিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছেন তারা।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পক্ষের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ শহরে নৌকার ভোট রয়েছে। কিন্তু কামরানের বদলে উজ্জ্বল ভাবমূর্তির নতুন কোনো প্রার্থী দিলেও কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হতো না। আওয়ামী লীগকে মন থেকে ভালোবাসেন- এমন অনেক ভোটার জানিয়েছেন, যোগ্য প্রার্থী না দেওয়ায় তারা হয়তো ভোটই দিতে যাবেন না।

সিলেটের গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হেরেছিলেন। এবার দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ কতটা আছে, তা নিয়েও সংশয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটেও যদি নৌকা মার্কার প্রার্থী কামরান জয়লাভ করেন তবুু মানুষ বলবে, কামরান ভোটে জয়লাভ করেননি, তাকে জয়ী করানো হয়েছে।

সিলেটে শ্বশুরবাড়ির ভোট নিয়ে আলোচনা : টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ময়তা গ্রামে আসমা কামরানের শ্বশুরবাড়ি। বাবার চাকরি সূত্রে সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি সিলেট আছেন। পরে বদরউদ্দিন কামরানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। অন্যদিকে শ্যামা হকের বাড়ি ময়মনসিংহের নওমহলে। আরিফুল হক চৌধুরীকে বিয়ে করে শ্যামা হকের বাড়ি এখন সিলেটে।

ময়মনসিংহ, আসমা কামরান এবং শ্যামা হক- এই তিনের ‘মিলন’ সিলেট সিটি করপোরেশন ভোটের আলোচিত বিষয়। কারণ সিলেট মহানগর ভোটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার প্রায় ৪০-৪৫ হাজার ভোটার রয়েছেন। নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে এই ভোট প্রভাবিত করে। আর তাই নিজেদের শ্বশুরবাড়ির ভোট করায়ত্ত করতে তৎপর আরিফ ও কামরান। সিলেটে বসবাসরত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোকদের সংগঠন হচ্ছে ‘সিলেটস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি।’ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরান এবং আরিফুল হকের স্ত্রী শ্যামা হক উভয়েই এ সমিতির উপদেষ্টা। বিশ্লেষকরা বলেছেন, সিলেট মহানগরের প্রথম দুই নির্বাচনের ভোটে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষদের ভোট পান কামরান। গত নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী প্রথমবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচন করায় ওই অঞ্চলের ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এবারো ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভোট বিভক্ত হবে। এ ভোট টানতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন আসমা কামরান এবং শ্যামা হক। এরা দুজনই নিজ নিজ স্বামীর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে স্বামীর পক্ষ থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট টানার চেষ্টা করছেন। শুধু আসমা কামরানই কিংবা শ্যামা হকই নয়, কামরান এবং আরিফ নিজেরাও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

সিলেট থেকে প্রতিবেদনটি করেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য ও আবু তাহের চৌধুরী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads